করোনার কারণে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন বন্ধ থাকায় বছরে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। গত এক বছরে স্থলবন্দর দিয়ে কেউ ভারতে যেতে না পারলেও ৬৭৩ জন বাংলাদেশে ফিরেছেন। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় চিকিৎসা, পর্যটন ও বাণিজ্যিক খাতে প্রভাব পড়েছে।
স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩৭৬ জন। ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৭৫২ জন। এতে সরকারের রাজস্ব আসে ১০ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভরতে যায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে এক লাখ তিন হাজার ৮৬৯ জন। করোনার কারণে এই অর্থবছরের ১৩ মার্চ ভারত সরকার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার সাত কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব পায়। আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ থাকায় রাজস্ব পায়নি সরকার। তবে এই সময়ে ভারতে আটকে থাকা ৬৭৩ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের এক মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে স্থলবন্দর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভোমরা ইমিগ্রেশন হয়ে প্রতি বছর চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা ও ভ্রমণের জন্য প্রায় কয়েক লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করে। এতে বছরে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আসে।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছরের ১৩ মার্চ ভারত সরকার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশিদের ভারত যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে স্বল্প পরিসরে মেডিক্যাল ও বিজনেস ভিসা চালু করলেও খোলা হয়নি স্থলবন্দর। বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র রোগীদের জন্য সীমিত পরিসরে মেডিক্যাল ভিসা চালু রয়েছে। তবে এসব রোগী ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যেতে পারছেন না।
শহরের পৌর এলাকার আব্দুল কাদের বলেন, ভারতে চিকিৎসা করাতে যেতাম নিয়মিত। কিন্তু করোনার কারণে দেড় বছর ধরে এই স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ। ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারছি না। আবার অন্য স্থলবন্দর দিয়ে সীমিত পরিসরে যাতায়াত করা গেলেও নানা শর্তের কারণে অনেকেই যেতে চায় না।
ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, স্থলপথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি-রফতানি করতে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ভোমরা স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় ভারতে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। এতে চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না ব্যবসায়ীরা। গত অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েক কোটি টাকা কমেছে।
ভোমরা চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন কয়েকশ যাত্রী যাতায়াত করতেন। বর্তমানে বিধিনিষেধ থাকায় যাত্রী যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। তবে কবে নাগাদ চালু হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে কার্যক্রম শুরু হবে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার আমির মামুন বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রভাবে প্রায় দেড় বছর ধরে স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ যাতায়াত শুরু হবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নির্দেশনা আসেনি। যাত্রী যাতায়াত বন্ধ থাকায় বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
