X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের বড় সেতুগুলোর নিরাপত্তা কি আছে?

রেজানুর রহমান
১০ আগস্ট ২০২১, ১৯:৫০আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২১, ১৯:৫০

রেজানুর রহমান আমাদের বহু কাঙ্ক্ষিত গর্বের ধন পদ্মা সেতু বারবার সংবাদ শিরোনামে পরিণত হচ্ছে। সংবাদগুলো মোটেই সন্তোষজনক নয়। বরং ভয় ও আশঙ্কার। পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা। জুলাই মাসে দু’বার চলন্ত ফেরির ধাক্কা খেয়েছে পদ্মা সেতু। চলতি মাসে আবার ঘটলো একই ঘটনা। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফেরির চালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবু পদ্মা সেতু ফেরির ধাক্কা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ফলে জনমনে একটাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তা হলো– এই যে বারবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনার ওপর চলন্ত ফেরি আঘাত করছে; এতে যদি শেষ পর্যন্ত সেতুটির মারাত্মক কোনও ক্ষতি হয় তার দায়ভার কে নেবে?

এর আগে খবর বেরিয়েছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা খেয়েছে একটি বড় লঞ্চ। অর্ধশত যাত্রী আহত হয়েছে। কয়েকটি পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই নিয়ে ছোট ছোট খবর বেরিয়েছে। খবরটি পড়া মাত্রই বুকের ভেতরটা ভয় আর আশঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কোনও ক্ষতি হয়নি তো? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখেছি বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মানুষ বোঝাই একটি বড় লঞ্চ পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রাত হলে না হয় একটা কথা ছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে লঞ্চটিকে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে নেওয়ার সময় সেতুর একটি পিলারে লঞ্চটি প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দিলো। লঞ্চে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকা যাত্রীরা নিজেদের সামলাতে না পেরে এদিক ওদিক ছিটকে পড়লো। নারী ও শিশুদের কান্না শোনা গেলো।

ভিডিওটি কয়েকবার দেখেছি। প্রথমে যে প্রশ্নটির উদ্রেক হলো, পদ্মা সেতুর মতো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি  স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষায় কারও কি কোনও দায়-দায়িত্ব নেই? এই যে একটা বিরাট লঞ্চ প্রকাশ্য দিবালোকে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দিলো এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? প্রচারমাধ্যমের খবরে যতটুকু জানা গেছে, ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লঞ্চটির চালককে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেতু সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রচারমাধ্যমে বলেছেন, ৪ হাজার টনের জাহাজের ধাক্কাও সামলাতে পারবে পদ্মা সেতু। কাজেই দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নাই। তবু তদন্ত করে দেখা হবে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দিল চলন্ত ফেরি। এতে সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের একটি অংশ ফেরির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই স্থানে ঢালাই ভেঙে দুটি রড দেখা যাচ্ছে।

গত জুলাই মাসে দুবার এবং চলতি মাসে একবার এমন ঘটনা ঘটল। পাঁচ বছর ধরে নদীতে পিলার রয়েছে। তখনও নদীতে স্রোত ছিল। অন্য নৌযানও চলেছে। এ বছর কেন এমন ঘটনা ঘটছে, সেটি বোধগম্য নয়। তিনি আরও বলেন, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাদের মাধ্যমে ঘটেছে, দুটিই সরকারি সংস্থা। সরকার তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে।

তার মানে দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন। কাজেই সেতুর নিরাপত্তা রক্ষায় সবচেয়ে জরুরি কাজটি হলো সতর্কতা!

কিছু দিন আগে পদ্মা সেতু এলাকায় সন্দেহভাজন গতিবিধির কারণে পাশের দেশের কয়েকজন নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার পর ধারণা করা হয়েছিল সেতু কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এখন থেকে আরও সতর্ক হবেন। কিন্তু পদ্মা সেতুর পিলারে লঞ্চ ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় দেশের অনেক প্রত্যাশার সেতুটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, যাতে ভবিষ্যতে সেতুটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনার মুখোমুখি হতে না হয়।

শুধু কী পদ্মা সেতু? দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেতুর নিরাপত্তা নিয়েও খুব একটা তৎপর দেখা যায় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। দেশের আরেক গর্বের ধন বঙ্গবন্ধু সেতুর নিরাপত্তাও মাঝে মাঝে হুমকির মুখে পড়ে। গত এক বছরে এই সেতুর বুকে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেতুর ওপর যানবাহন চলাচলে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কত মাইল স্পিডে সেতুর ওপর যানবাহন চলবে এটা কাগজে কলমে থাকলেও অনেক চালক তা জানেন না। বরং সেতুতে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত টোল দেওয়ার পর একে-অপরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমে যান, বাহনের গতি বাড়িয়ে দেন। ফলে প্রায়ই সেতুটির বুকে সড়ক দুর্ঘটনা হয়। তখন সেতুর বুকেই দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। ঈদের কয়েক দিন আগে সড়কপথে পারিবারিক কাজে সৈয়দপুরে গিয়েছিলাম। রাতে ফিরছিলাম ঢাকার দিকে। লকডাউনেও ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনের আধিক্য চোখে পড়লো। পথে পথে ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি সইতে হলো। বঙ্গবন্ধু সেতুতে আমাদের গাড়ি ওঠার পরই থেমে গেলো। সেতুর ওপর যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। ঘটনা কী? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো সেতুর ওপরই একটি চলন্ত ট্রাক অন্য একটি ট্রাককে ধাক্কা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে সামনের আরও কয়েকটি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। কয়েকজন ট্রাক শ্রমিক আহত হয়েছে। সে জন্য সেতুর উভয় লেনে গাড়ির দীর্ঘ জট লেগেছে। তখন শুধু একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সেতুর ওপর এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটনার পরও টোল প্লাজা থেকে কেন অন্য গাড়িগুলোকে সেতু অভিমুখে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই যে ভারী ভারী ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে, এর ভারটা তো বহন করতে হবে সেতুকেই। এতে কি সেতুর ক্ষতি হবে না? যানজটে সেতুর মাঝখানে গাড়িতে বসে আছি। সামনে পেছনে ট্রাকের সারি। ট্রাকের ইঞ্জিন চালু বলে বিদঘুটে আওয়াজ করছে। সেই আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু কাঁপছে। মনে হচ্ছিলো এখনই বুঝি সেতুটি ভেঙে পড়বে। বালাই ষাট! এই ঘটনা যেন না ঘটে। কিন্তু আমরা যেভাবে দেশের সড়ক পথে বড় সেতুগুলোর ওপর অত্যাচার করছি, তাতে না একদিন হিতে বিপরীত হয়ে যায়।

এবার ঢাকা শহরের কথা বলি। ঢাকা শহরের বুকে এখন অনেক ফ্লাইওভার। কিন্তু যত্নের অভাবে ফ্লাইওভারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ ফ্লাইওভারে রাতে বৈদ্যুতিক আলো থাকে না। ফলে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সাতরাস্তা থেকে মগবাজারগামী ফ্লাইওভারে উঠলে দেখতে পাবেন রাস্তায় মাঝে মাঝেই ছোট ছোট গর্ত দেখা দিয়েছে। বছর দেড়েক ধরে গর্তগুলো দেখছি। কোনও গর্ত আগের চেয়ে বড় আকার ধারণ করেছে। অথচ এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনও নজর নেই। আমার এক বন্ধু বললেন, রাস্তার ছোট গর্তের প্রতি কেউ নজর দেয় না। কারণ, রাস্তার ছোট গর্ত মেরামতে ‘নয় ছয়’ করার সুযোগ থাকে না। রাস্তায় গর্ত যত বড় হয় ‘নয় ছয়’ করার সুযোগ তত বেশি বাড়ে। কাজেই জনগণের ভোগান্তি বড় কথা নয়। বড় কথা হলো গর্ত বড় হওয়া...।

ঢাকায় মেট্রোরেল এখন কোনও স্বপ্ন নয়। বাস্তবে ধরা দেবে কয়েক মাসের মধ্যেই। মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হওয়ায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল করা শুরু করেছেন। তাদের ধারণা, মেট্রোরেল হবে প্রচলিত ট্রেনের মতো। ট্রেনের ছাদে উঠে গন্তব্যে যাওয়া যাবে। ফলে এই ট্রেনের জৌলুস বেশি দিন থাকবে না। এই মূর্খদের জন্য এখন থেকে সতর্কবাণী প্রচার ও প্রকাশ হওয়া জরুরি, যাতে মেট্রোরেলে অন্তত ছাদে ওঠার কথা না ভাবে কেউ।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক: আনন্দ আলো।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ