শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা, গোসাইরহাট ও ডামুড্যা উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা গুদামের নিরাপত্তায় দুই জন করে আট জন আনসার ভিডিপি সদস্য নিয়োগে অনিয়ম এবং ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত ৯ আগস্ট আনসার ভিডিপির সদস্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পর অনিয়মের অভিযোগে জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয় ও প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ দেন নিয়োগবঞ্চিত দুই ব্যক্তি।
গত ১ আগস্ট থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ওই আট জনকে উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা গুদামের নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট নাদিরা ইয়াসমিন।
জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এক বছর মেয়াদকাল শেষ হওয়ায় নড়িয়া, জাজিরা, গোসাইরহাট ও ডামুড্যা উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনার গুদামের নিরাপত্তার জন্য আট জন আনসার ভিডিপি সদস্য নিয়োগ দিতে জেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরই ভিত্তিতে উপজেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভিডিপি সদস্যদের থেকে আবেদন চাওয়া হয়। গত ১২ জুলাই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ঢাকা রেঞ্জের এক আদেশে ফরিদপুরের আনসার ও ভিডিপির কমান্ড্যান্ট মো. সেলিমুজ্জামানকে যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান করা হয়। তার সঙ্গে শরীয়তপুর আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট নাদিরা ইয়াসমিন ও সহকারী পরিচালক মামুন হাওলাদারকেও কমিটির সদস্য করা হয়।
যাচাই-বাছাই কমিটি গত ১৩ জুলাই ১৬ জনের মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ১০ জনকে মনোনীত করে। এদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন আট জনকে ১ আগস্ট থেকে এক বছরের চুক্তিতে জেলার চার উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা গুদামের নিরাপত্তায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই নিয়োগে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় চাকরি বঞ্চিত হয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেন আলাউদ্দিন খান ও সুমন ভূঁইয়া নামে দুই প্রার্থী। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্টের সহকারী পরিচালক মামুন হাওলাদারকে প্রধান ও সদর ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা ভিডিপি অফিসারকে সদস্য করা হয়েছে।
অভিযোগকারী আলাউদ্দিন খান ও সুমন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আনসার ভিডিপির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। নড়িয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা গুদামে ভিডিপি সদস্য নিয়োগে আমাদের মনোনীত করা হয়েছিল। নিয়োগের আগের রাতে আনসার ভিডিপির নড়িয়ার টিআই বকুল ম্যাডাম ৩৫ হাজার টাকা করে আমাদের কাছে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ চান। বেকার হওয়ায় ঘুষের টাকা দিতে পারিনি আমরা। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় মনোনীত হয়েও চাকরিবঞ্চিত হয়েছি। তাই তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। বর্তমানে নড়িয়ায় যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রশিক্ষণ ছাড়াই চাকরি পেয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার ও ভিডিপির নড়িয়া থানার টিআই বকুল আক্তার বলেন, ‘তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি আনসার ভিডিপির সদস্য নিয়োগ কমিটির কেউ না। কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।’
এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য ও জেলা আনসার ভিডিপির কমান্ড্যান্ট নাদিরা ইয়াসমিন বলেন, দুই চাকরিপ্রার্থীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৬ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। যদি ঘুষ লেনদেনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।