‘যখন শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ ওপেন গুলি চালাচ্ছিল। আমি ওই অবস্থা দেখে লাফ দিয়ে ট্রাকের নিচে নেমে যাই’- বলছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কর্মরত আলোকচিত্রী রতন গোমেজ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলার দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সেদিনের কর্মসূচি কভারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশের নিয়মিত কিছু ছবিও তুলেছিলেন রতন গোমেজ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের বক্তব্যের শেষ দিকে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড। রতন গোমেজের চোখের সামনেই ঘটতে থাকে একের পর বিস্ফোরণ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একুশে আগস্টের এই গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহতম। সেদিনের নৃশংসতার সাক্ষী আরেক সিনিয়র আলোকচিত্রী জিয়া ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন তিনি। তার কথায়, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী এই সমাবেশ শেষে মিছিল হওয়ার কথা ছিল। আর ট্রাকে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ হওয়ায় আমার চেষ্টা ছিল একটি ভালো ছবি তোলার। তাই আমিও ট্রাকের মঞ্চে চেয়ারের উপর উঠে পড়ি। এমন সময় একটি শব্দ কানে এলো; আমি চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যাই। সঙ্গে-সঙ্গে আমার অন্যান্য সহকর্মী আলোকচিত্রী ও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও ভারসাম্য হারিয়ে আমার উপর পড়ে যান।’
দৈনিক প্রথম আলোতে কর্মরত এই আলোকচিত্রী জানান, ওই সময় তিনি ট্রাকের পাটাতনের নিচে একটি তাজা, অবিস্ফোরিত গ্রেনেড দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘গ্রেনেডটি দেখেই সেখান থেকে সরে যাই। সেই গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হলে আজ হয়তো বেঁচে থাকতাম না। ঘটনার সময় কানে আাসছিল সমাবেশে আসা হতাহত মানুষের চিৎকার, আর কান্না।
গ্রেনেড বিস্ফোরণ নিয়ে বিসিবির আলোকচিত্রী রতন গোমেজ স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, ‘শেখ হাসিনার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে একটা বিকট শব্দ হয়, আমি বুঝতে পারিনি কিসের শব্দ। তারপর টানা আরও কয়েকটা শব্দ হয়।’
রক্তক্ষয়ী এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগের মুহূর্তের কথা বর্ণনা করে রতন গোমেজের বলেন, তখনও ট্রাকের মঞ্চ আসেনি। জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান যখন ঘটনাস্থলে আসেন, তখন আমি আগে আইভি আপাকে দেখে বলি- আপা, আপনাকে আগের চেয়ে সুন্দর লাগছে। আপনার ছবি তুলি? তিনি তখন ছবি তোলার জন্য দাঁড়ালেন, আমি ছবি তুললাম। তারপর ট্রাকের নিচে থেকে ছবি তুলে, আমি ট্রাকের উপরে যাই। উপরে উঠে আরেকটি ছবি তোলার পরই বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। দেখি- সব মানুষ শুয়ে আছে, চারদিকে শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। আর শেখ হাসিনাকে মায়া ভাই, হানিফ ভাইসহ আরও অনেকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। ওই ছবি তোলা অবস্থায় আমি বুঝতে পারলাম আমি আঘাত পেয়েছি। ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে আঘাতে রক্ত ঝরছে।’