২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি বাংলাদেশকে জঙ্গিদের অভায়ারণ্য বানিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘তাদের মাধ্যমেই মূলত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পরিচালিত হয়েছিল। তাদের মাধ্যমে কিবরিয়া সাহেব ও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। অর্থাৎ তারা জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। যারা এই রাজনীতি করে তারা কখনও দেশ জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আজকে আমার প্রশ্ন, তারা কি দেশটাকে তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়?’
সোমবার (২৩ আগস্ট) আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। আইভি রহমান পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পাকিস্তান একাত্তরের পরাজয়ের পর একটা প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টায় ছিল। তারা জানতো যুদ্ধ করে প্রতিশোধ নেওয়া সম্ভব নয়। তাদের চেষ্টা ছিল অন্য কীভাবে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যায় শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়। সেই পরিকল্পনায় পাকিস্তানের বিশ্বস্ত জিয়াউর রহমানকে তারা পিক করেছিল। ধ্বংসের রাজনীতির মাধ্যমেই তাদের রাজনীতি শুরু। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায়, তখন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হাওয়া ভবনের পরিচালনায় সেনাবাহিনী ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে করা হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বাসায় বাবার নিজ হাতে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘যেসব জঙ্গিগোষ্ঠী আফগান তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, যারা এ রাষ্ট্রকে তালেবান রাষ্ট্রে বানাতে চায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য তাদের কাজে লাগানো হয়েছিল। এটা করেছিল তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার এবং তারেক রহমান। আজকে দেখুন তালেবান যখন কাবুল দখল করলো তখন ডা. জাফরুল্লাহ কী বললেন, তাদের কী হিসাবে অবহিত করলেন?’
সরকারের করোনার টিকা বিএনপি নিলো কেন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফখরুল সাহেবরা এখন টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। যখন ১৩০টি দেশের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়নি তখন বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। ফখরুল সাহেব নিজেও টিকা নিয়েছেন, রিজভী সাহেব টিকা নিয়েছেন। সবাই টিকা নিয়ে আবার টিকার বিরুদ্ধে কথা বলেন। খালেদা জিয়াও ডাবল ডোজ টিকা নিয়েছেন। আপনাদের টিকা নিয়ে যদি এতই কথা থাকে, তবে আপনারা টিকাটা নিলেন কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশ থেকে যদি অপরাজনীতি বন্ধ না হয়, এ ধরনের জিঘাংসার রাজনীতি যেটি বিএনপি-জামায়াত করে, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো করে; যদি এগুলো বন্ধ না হয়, তবে আমাদের দেশে রাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে না। আজকের এই দিনে আইভি রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তারেক জিয়া উল্লেখ করে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, বিএনপি সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। এর পরিকল্পনা করা হয় হাওয়া ভবন থেকে এবং গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনাকারী তারেক। শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছেন, এই কথা শুনে তারেক রহমান চিৎকার করে বলেছে তাহলে কীভাবে আমাদের পরিকল্পনা সাকসেস হলো। এই কথাগুলো বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমানসহ সবারই বিচার করা হবে এবং দ্রুত বিচারের রায় কার্যকর করা হবে।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, আইভি রহমান পরিষদের উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধা মো. আকরাম হোসাইন, সাংবাদিক সমীরন রায় প্রমুখ।
