X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ঘুম রাত কাটে পদ্মা-মধুমতি তীরের বাসিন্দাদের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
৩০ আগস্ট ২০২১, ১৫:৪০আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২১, ১৫:৪০

ফরিদপুরে মধুমতি ও পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ দিনের ভাঙনে একাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে হাজারো বসতবাড়ি, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি, খেলার মাঠ, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঈদগাহ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন-আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরের বাসিন্দাদের।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধুমতি নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প অনুমোদনের আশ্বাস স্বপ্নই রয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে মধুমতি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১০ গ্রাম। 

গত ১৫ দিনের ভাঙনে একাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীনের পথে হাজারো বসতবাড়ি, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি, খেলার মাঠ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন স্থাপনা। 

মধুমতির পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার পাচুড়িয়া, টগরবন্দ ও গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অন্তত ১০ গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতির ভাঙন এলাকাবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। পাচুড়িয়া ও টগরবন্দ ইউনিয়নের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। 

ভাঙনে একাধিক বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে

পাচুড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রাম প্রায় বিলীন হতে চলেছে। করোনাকালীন সময়ে ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। ভাঙনের কবলে রয়েছে কয়েকশ পরিবার। বিশাল এলাকাজুড়ে প্রতিদিন ধসে পড়ছে মাটি। 

গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা শায়েলা খাতুন বলেন, বাড়ির কাছে চলে এসেছে নদী। সবসময় আতঙ্কে থাকি, কোন সময় ভেঙে যায়। আগে দুবার বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। এখন আবার সরাতে হবে। ভাঙনের ভয়ে ঘুমাতে পারি না, স্বামী-সন্তান নিয়ে জেগে থাকি।

গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাচুড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরনারানদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মধুমতির পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

পাচুড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরনারানদিয়া গ্রামের কামাল শিকদার বলেন, আমার বসতবাড়ি গত বৃহস্পতিবার রাতে মধুমতি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে রাস্তার ওপর খোলা আকাশের নিচে আছি। এখনও সরকারি কোনও সহযোগিতা পাইনি।

বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা পারভীন বলেন, গত বছরের ভাঙনে বিলীন হতে বসেছিল বিদ্যালয়। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়েছিল। তখন শুনেছিলাম, ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হবে। এখনও হয়নি। এ বছর নদীতে আগের মতো জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। 

আলফাডাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বে থাকা বোয়ালমারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার বলেন, নদীভাঙন রোধে বৃহৎ প্রকল্প দরকার। পাউবো থেকে ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আবেদন করে ফাইল জমা দিয়েছি। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এ ছাড়া নদীভাঙন কবলিত স্থানে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। 

ভাঙন হুমকিতে চরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়

এদিকে, চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী ও বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে পদ্মা পাড় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি দুই গ্রামে পদ্মার ভাঙনে ১৪টি বসতবাড়ি, একটি রাস্তার কিছু অংশ, ফসলি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালিয়াডাঙ্গী কমিউনিটি ক্লিনিক এবং চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লাহ শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের খবির উদ্দিন মোল্যা বলেন, কয়েকদিন ধরে পদ্মার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ১৪টি বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। 

বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের ছবুর শেখ বলেন, এখানকার অধিকাংশ পরিবার একাধিকবার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব অবস্থায় বাঁধের ওপর বসবাস করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন না ঠেকালে আজীবন রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে আমাদের। 

শাহনাজ বেগম বলেন, গত কয়েকদিন পদ্মার ভাঙনে ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের পদ্মা পাড়ে বালুর ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের গ্রামে বেশি ক্ষতি হলেও বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে না। আমার বাড়ির কাছে নদী চলে এসেছে। যেকোনো সময় বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। রাতে ঘুমাতে পারি না। সবসময় আতঙ্কে থাকি, কোন সময় সব নদীতে চলে যায়। 

হুমকিতে রয়েছে হাজারো বসতবাড়ি, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন মোল্যা বলেন, ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামে ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গী গ্রামেও জিওব্যাগ ফেলা হবে। উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে চাল এবং নগদ অর্থ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।

গত দুই দিন ধরে স্বল্প পরিসরে পদ্মার পানি কমলেও সোমবার (৩০ আগস্ট) আবার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও বিদৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সূত্র জানায়, পদ্মায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বেড়েছে। বর্তমানে পানির উচ্চতা ৯.১১ মিটার যা বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার শতাধিক গ্রামের ফসলি ক্ষেত, রাস্তা, নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। পানিবন্দি এলাকায় সুপেয় পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ভাঙন কবলিতদের মাঝেও ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

/এএম/
সম্পর্কিত
অসময়ে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্রের পাড়, দুশ্চিন্তায় স্থানীয়রা
নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা বালুতে পৌরসভার চত্বর তৈরি করছেন প্যানেল মেয়র
অসময়ে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে এলাকাবাসী
সর্বশেষ খবর
বর্ষার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, মোকাবিলায় যা করছে ডিএনসিসি
বর্ষার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, মোকাবিলায় যা করছে ডিএনসিসি
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি