বিএনপির সময়ে সাইফুর রহমানের হাতেই দেশে ‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি’র সফল বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কর্মময় জীবন তুলে ধরতে গিয়ে রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের’ উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে নিজের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান।
ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সাহেব মনে করেছিলেন যে আমি যদি এই মানুষটিকে (সাইফুর রহমান) আমার সঙ্গে পাই, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে, ব্যবসা-বাণিজ্যকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসে দেশটাকে আমরা সৃজনশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে সক্ষম হবো। তিনি প্রমাণও করেছিলেন। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তারা একটা কথা বলেন, সাইফুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব একটা স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি। আমার বন্ধু আছেন একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালাহউদ্দিন আহমেদ সাহেব, তিনি বলেন, তার (সাইফুর রহমান) সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তিনি একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমি উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশে।’
ফখরুল বলেন, ‘একটা দেশের অর্থনীতিকে সফল করবার জন্যে, তার কাছ থেকে ভালো বিষয়গুলোকে তুলে আনবার জন্যে একটা স্টেবল মাইক্রো ইকোনমিকসের প্রয়োজন আছে। সেটা তিনি (সাইফুর রহমান) করেছিলেন। ওই সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরে ডিসিপ্লিন ছিল, বিমা সেক্টরে ডিসিপ্লিন ছিল এবং শেয়ার মার্কেটে ডিসিপ্লিন ছিল। এই কথাগুলো আমাদের আজকে জোরেশোরে অর্থনীতিবিদরা বলছেন এবং তারা তুলনা করে সেই কথাগুলোই বলছেন।’
পোশাক শিল্পের বহুমুখীকরণে সাইফুর রহমানের চিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু গার্মেন্টসে উনি থাকতে চাননি। গার্মেন্ট শিল্পটাকে অনেক সময়ে ব্যঙ্গ করে বলতেন, তুমি শুধু দর্জির একটা শিল্প বানাইবা। তিনি চাইতেন যে এই শিল্প থেকে সারপ্লাস যে ক্যাপিটালটা আসবে, সেই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে ভারী শিল্প তৈরি হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটা ম্যানুফেকচারিং কান্ট্রি হিসেবে তৈরি করতে তিনি চেয়েছিলেন। যে কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন ইপিজেডগুলোর মাধ্যমে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাইফুর রহমান সাহেবের ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা ছিল, জিয়াউর রহমান সাহেবের একটা আস্থা ছিল, গোটা জাতির একটা আস্থা ছিলে। ১২ বার তিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আজকের বাংলাদেশ রাতারাতি ভালো বাংলাদেশ হয়ে যায়নি।’
ফখরুল বলেন, ‘পার্থক্যটা এখানে যে তিনি সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট নিতে চাননি, তিনি ঋণে আবদ্ধ হতে চাননি, ঋণে ডুবে মরতে চাননি। এ কারণে অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্যে ধীরে ধীরে আগে খুঁটিটাকে শক্ত করে দেশের অর্থনীতিটাকে ওঠাতে চেয়েছেন। সে জন্য স্লো যেতে চেয়েছেন। আমরা তার কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এম সাইফুর রহমান এমন একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তিনি ব্যক্তি হিসেবে, পেশাজীবী হিসেবে, অর্থনীতিবিদ হিসেবে. রাজনীতিবিদ হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে সর্বক্ষেত্রে শুধু সফলই নয়, দিকনির্দেশনা রেখে গেছেন। বিএনপি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে।’
সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব এম কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউস এবং প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান বক্তব্য রাখেন।
