X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্থায়ী ক্যাম্পাসের অভাবে রাঙামাটি মেডিক্যালে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৩০আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৪১

পাহাড়ি জনপদে চিকিৎসাবিদ্যার প্রসারে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ। এরপর আঞ্চলিক দলগুলোর বাধা-বিপত্তিসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০১৫ সালে শুরু হয় এর শ্রেণি কার্যক্রম। তবে প্রতিষ্ঠার সাত বছর পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসের মুখ দেখেনি এই মেডিক্যাল কলেজ। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও ডিজিটাল সার্ভে শেষ সব কাজ শেষ করার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আটকে আছে ভবন নির্মাণের কাজ। 

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ তলা করোনারি ভবনে অস্থায়ীভাবে চলছে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে পাঁচ ব্যাচে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি ব্যাচের ৪৫ জন শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্স শেষ করেছেন। রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ থাকার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় করোনার এই মহামারি সময়ে উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলাবাসী।

পিছিয়ে পড়া পাহাড়ের জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে স্থাপিত হয় এই মেডিক্যাল কলেজ। শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর দিন থেকেই আঞ্চলিক দলগুলোর নানান বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষের পর কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া জটিল কোনও রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই এখানে। হাসপাতালে নেই আইসিইউ, ভেল্টিলেটরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা ও অক্সিজেন সিলিন্ডারও নেই পর্যাপ্ত। করোনায় এই সংকট আরও বেশি ফুটে উঠেছে।

শুরুতেই স্থায়ী ক্যাম্পাসের জায়গা না মেলায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের পাশেই করোনারি বিভাগের দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু ক্লাস শুরুর সাত বছর পরও এখনও নিজেদের ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। স্থায়ী ক্যাম্পাস হলে জেলাবাসী উন্নত চিকিৎসার সুবিধা পেতো, সেটা থেকেও বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ জানালেন এলাকার বিশিষ্টজনরা।

রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী বলেন,‘আমরা প্রথম ব্যাচের ৪৫ জন শিক্ষার্থী এমবিবিএস কোর্স শেষ করি। কিন্তু রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ডে সুযোগ-সুবিধা ভালো না থাকায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে আমাদের ইন্টার্নি করতে যেতে হয়েছে।’

দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী অর্ণব বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা খুব স্বপ্ন নিয়ে রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু এখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। হাসপাতালে বড় কোনও অপারেশন হয় না, ভালো বিজ্ঞানাগার নেই, হোস্টেলের সুবিধা ভালো না। এখানে শুধু নেই, নেই আর নেই।’

তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে আমিন বলেন, ‘মেয়েদের হোস্টেলটি একটি পাড়ার মধ্যে, যেখানে মেয়েরা সন্ধ্যার পর বের হওয়া নিরাপদ মনে করে না। স্থায়ী ক্যাম্পাস হলে স্থায়ী হোস্টেল থাকতো আমাদের। মনে হচ্ছে না, আমরা বের হওয়ার আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে পারবো।’

দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী নাবিলা জানান, দেশের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে ২৫০ বেডের হাসপাতাল থাকলেও রাঙামাটিতে ১০০ বেডের হাসপাতাল রয়েছে। তাও আবার পুরনো। ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য যন্ত্রপাতি থাকলেও অবকাঠামো স্বল্পতার কারণে সেগুলো স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে একটি মেডিক্যাল কলেজ চলতে পারেনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস চাই আমরা।’

রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ডা. জাকির হোসেন নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে বলে জানিয়ে বলেন, ‘স্বল্প সংখ্যক ক্লাসরুম দিয়ে ছয়টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। একটি মেডিক্যাল কলেজে যে ধরনের জিনিসপত্র থাকা উচিত তার অর্ধেকও নেই এই কলেজে। তাই যত দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান হবে শিক্ষার্থীরা তত ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।’

রাঙামাটি সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (মুন্না) বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস শুরু করার জন্য আমরা রাজপথে আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবির মুখে ক্লাস শুরু হলেও দীর্ঘ সাত বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি মেডিক্যাল কলেজটি। স্থায়ী ক্যম্পাস চালু হলে চালু হতো হাসপাতাল। তাতে সেবা পেতো স্থানীয়রা কিন্তু তা না হওয়ায় হতাশ জেলাবাসী।’

অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এখন কাজ চালানো দুরূহ হয়ে উঠেছে বলে জানান রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক প্রীতি প্রসূণ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনার কারণে অনলাইনে ক্লাস চলছে আমাদের। অন্য সময় একটি ব্যাচের ক্লাস হলে আরেকটি ব্যাচকে অপেক্ষায় থাকতে হতো। এমনকি একটি মেডিক্যাল কলেজে যে ধরনের জিনিসপত্র থাকা উচিত তার অর্ধেকও নেই এখানে। যদি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারে তাহলে তারা দেশের কোন কাজে লাগবে?’

রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. শহীদ তালুকদার বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় জায়গা হস্তান্তরও করেছেন। ডিজিটাল সার্ভেসহ অন্যান্য কাজ সব শেষ হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণকাজটি স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতর নাকি স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর ডিপিপি প্রণয়ন করবে, সেই নির্দেশনা দেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিদের্শনা পেলে ডিপিপি প্রণয়ন ও অন্যান্য কাজ শুরু করা যাবে।’

 

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
চট্টগ্রামে চিকিৎসকের ওপর হামলায় বিএমএ’র প্রতিবাদ
ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, সাতক্ষীরা মেডিক্যালের হল বন্ধ ঘোষণা
স্বাধীনতা দিবসে ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী