X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলছে স্কুল-কলেজ: স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান চ্যালেঞ্জ

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:২৮আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:৩৩

করোনা সংক্রমণ কমে আসায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারি নির্দেশনার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পাঠদানের উপযোগী করে তোলার কাজ চলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এসব কাজের মনিটরিং করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনা ও পাঠদান অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে খুশি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার শেষ সময়ের প্রস্তুতি বিষয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত।  

রাজশাহী
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাজশাহীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে। নির্দেশনানুযায়ী নগরীসহ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষক ও কর্মীরা। তবে নির্দেশনার অন্যতম করোনা প্রতিরোধে কার্যকর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্যবিধি ও করোনা ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সিংহভাগ শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। যারা বাকি আছেন তারাও রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়েছে সরকার

রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতিই প্রায় শেষ। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা আগেই ছিল। প্রয়োজনে আরও যন্ত্র কেনা হবে। কলেজের প্রবেশপথেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছে। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্কের ব্যবস্থাও থাকছে। কোনও শিক্ষার্থীর করোনা লক্ষণ থাকলে তাকে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে।
 
নগরীর বাইরে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী হাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ও গোদাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে তারা প্রস্তুত।
 
রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সজিবুল ইসলাম বলেন, করোনায় অনলাইন ক্লাস আর অ্যাসাইনমেন্টে একরকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অ্যাসাইনমেন্টের জন্য প্রতি সপ্তাহে কলেজে যেতে হয়েছে। এতে শহরের বাইরে থেকে আসাটা কষ্টকর। আবার গ্রামে নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকায় অনলাইন ক্লাস করেও তৃপ্তি পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাসে বসতে চান সজিব। 

বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১টি। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে ৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০টি কলেজ, ১০টি কারিগরি স্কুুল, ৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার। স্কুল খোলার বিষয়ে উপজেলার সদরের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলে চরের শিক্ষার্থীরা রয়েছে চিন্তায়।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষক টিকা নিয়েছেন। বাকি পাঁচ শতাংশের মধ্যে রয়েছে- সন্তানসম্ভবা, যাদের শিশুরা দুধ খায় ও যে সব শিক্ষকরা গুরুতর অসুস্থ। তারাই কেবল টিকা নেননি। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর এক হাজার ৫৮টি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখতে প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারা সেই অনুযায়ী কাজও করেছেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চট্টগ্রাম
দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণায় চট্টগ্রামের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খুশি। তবে করোনার ভীতিও কাজ করছে তাদের মধ্যে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন, করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এই লক্ষ্যে তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। কিন্তু স্কুলে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করবেন এটি নিয়েই তাদের যত শঙ্কা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি নিজেও স্কুল খোলার পক্ষে। কিন্তু তার আগে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা উচিত ছিল। এটি না করে স্কুল চালু করায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে।
নগরীর একাধিক স্কুল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। স্কুলমাঠে বেড়ে উঠা ঘাস কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হাত ধোয়ার জন্য স্কুলের আঙিনায় বেসিন বসানো হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রুটিন তৈরিতে ১১ নির্দেশনা

 
সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত ও আইসিটি বিভাগের প্রভাষক মুহাম্মদ আব্দুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এখানে শ্রেণিকক্ষের তুলনায় শিক্ষার্থী অনেক। আগে একটি বেঞ্চে পাঁচ জন বসতো। এখন তিন জনের বেশি বসানোর সুযোগ নেই। একই ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের এখন দুটি শ্রেণি কক্ষে বসাতে হবে। তাই এখন একই সাবজেক্টের দুটি ক্লাস নিতে হবে। তাই পরিবর্তিত ক্লাস রুটিন তৈরি করতেই আমরা আলোচনায় করছি।
 
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফ-উল-হাসান চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ১৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা মেনে আমরা পাঠাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবো। 

খুলনার স্কুলগুলো পাঠদানের উপযোগী করতে কাজ করছেন কর্মীরা খুলনা 
খুলনায় স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার করাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ চলছে। কিছু স্কুলে পরীক্ষা গ্রহণেরও চিন্তা চলছে।
         
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম সিরাজুদ্দোহা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি সবাই মুখে মুখে জানে। এরপর থেকে স্কুল পর্যায়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে ৪ ঘণ্টা, প্রত্যেক শ্রেণির জন্য দুটি ক্লাস

কয়রার দক্ষিণ বেদকশি বড় বাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ থাকা ও ইয়াসসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগে স্কুল ব্যবহার করার অবস্থায় ছিল না। চালু করার সরকারি ঘোষণা আসার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। মেঝে বেঞ্চে প্রয়োজনীয় মেরামত করা হয়েছে।

সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম বলেন, স্কুল খোলার খবরে  পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ। ক্লাসরুমগুলো ডেটল দিয়ে ওয়াশ করা হয়েছে। হাইজিন কর্নার রেডি আছে। আরও একটি তৈরির কাজ চলছে। তাপমাত্রা মাপার জন্য মেশিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করে পাঠদানের উপযোগী করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ
জেলার সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ খুলে পাঠদান শুরু হচ্ছে ১২ সেপ্টেম্বর। ইতোমধ্যে সরকারি নির্দেশনা মেনে জেলার প্রাথমিক-মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাধ্যমিক স্কুল ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতোমধ্যে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, তাপমাত্রা মাপার মেশিন, বেসিন বসানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে।  

জেলার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমলাপাড়া আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনার শতভাগ পালন করে পাঠদান চলবে। আমাদের স্কুলে ১২টি শাখা রয়েছে। আর স্কুলে শ্রেণিকক্ষ আছে ২৬টি। এসব কক্ষে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়া হবে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, জয়গোবিন্দ স্কুল, নিতাইগঞ্জ আদর্শ স্কুলসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদানের প্রস্তুতি চোখে পড়লেও পিছিয়ে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

নগরীর চাষাঢ় শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্কুল ঘরে দেখা যায়, গেটে তালা ঝুলছে। শ্রেণিকক্ষের চেয়ার টেবিল ও বেঞ্চে ধুলোবালির স্তর।

১২ সেপ্টেম্বর খুলছে না বন্যাকবলিত বিদ্যালয়

শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,  ৮ সেপ্টেম্বর থেকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হবে। সরকরি নির্দেশনা মেনেই সব কাজ শেষ হবে।

জেলার  মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ মোট ২৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে সরকারি নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে মানা হয় তার মনিটরিং চলছে।

গাজীপুরে স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ তদারকি করছেন শিক্ষকরা গাজীপুর
জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পরিবেশ ফেরাতে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শ্রেণিকক্ষ ঝাড় দেওয়া, বাথরুম পরিচ্ছন্ন করা, মাঠ পরিষ্কার করা, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ভবনের আশপাশের আগাছা পরিষ্কারসহ নানা কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। এছাড়া আসন বিন্যাসের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। 

কাপাসিয়া উপজেলার ভুলেশ্বর হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন সহকর্মী শিক্ষকদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কাজের তদারকি করছেন। তিন জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার করে মাঠের একপাশে ডাস্টবিনে ফেলছেন।

শ্রীপুরের লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিত্যানন্দ সরকার বলেন, সব শিক্ষককে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরের তালিকা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিদ্যালয় খোলার ঘোষণার পর থেকে অভিভাবকদের মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সংবাদ নিশ্চিত করা হচ্ছে। 

শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমীন বলেন, খোলার ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে একাধিকবার ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করছি এবং পাঠদান প্রস্তুতির আপডেটসহ নানা ধরনের খোঁজ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, জেলায় মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মোট ৬৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের উপযোগী করতে সরকার থেকে ঘোষণার পরই আমরা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। সরকারি ১৯টি নির্দেশনা কার্যকর করতে নিয়মিত মনিটরিং চলছে বলে জানান তিনি। 

জামালপুরের পানিবন্দি হয়ে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের উপযোগী করতে কাজ চলছে জামালপুর  
জেলায় বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ১৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও কিছু বিদ্যালয় পাঠদানের উপযোগী হয়নি। তবে জেলা শিক্ষা অফিস বলছে নির্ধারিত দিন থেকেই খোলা থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

জেলা শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ১৬১টি, কলেজ, দাখিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা, বিএম কলেজসহ ৫৯১ টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত দুইদিন আগেও বুক সমান বন্যার পানি ছিল চিনাডুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে অতি দ্রুত পানি নেমে গেছে। অবশ্য এখনও বিদ্যালয়ের মাঠ শুকায়নি। একই অবস্থা ডেবরাইপ্যাচ, দেলিরপাড়, বলিয়াদহ, পূর্ব বামনা, বীর নন্দনেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যমুনা বেষ্টিত চরাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

জেলার মাধ্যমিক (ভারপ্রাপ্ত ) শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরা মুস্তারী ইভা বলেন, এখন প্রায় সব বিদ্যালয়ের পানি নেমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের উপযোগী করে ফেলার জন্য বলা হয়েছে।

পঞ্চগড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ পঞ্চগড় 
জেলার পাঁচ উপজেলায় ৯৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে কাজ চলছে। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৬৪টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৭টি, মাদ্রাসা ৭০টি এবং কলেজ ২৪টি। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যান্য কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে বা শেষ হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দীর্ঘ ১৭ মাস বন্ধের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা এবং বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার বিষয়টিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার গাইড লাইন হাতে পেয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

তবে জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আবার কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানে যা আছে তারও অবস্থা নাজুক। অনেক প্রতিষ্ঠানে মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই মাত্র একটি টয়লেট ব্যবহার করেন। অনেক টয়লেটে সাবান তো দূরের কথা পানির ব্যবস্থাও নেই। 

জমিরননেছা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার এ টি এম আমির উল্লাহ বলেন, জাইকার অর্থায়নে ওয়াশব্লকের কাজ করা হবে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনও কাজ শুরু হয়নি। আমার প্রতিষ্ঠানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষক-কর্মচারী ১৮ জন। তবে একটি টয়লেট সবাইকে ব্যবহার করতে হয়। এ অবস্থায় ১৯ দফা বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে।

পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীন আখতার বলেন, ১৯টি গাইড লাইন ইতোমধ্যে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে। গাইডলাইন ফলো করা হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।

চাঁদপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান শুরুর আগে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষকরা চাঁদপুর
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। সরকার ঘোষিত ১৯ দফা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং পাঠদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। দায়িত্বশীলরা অনলাইন এবং অফলাইনে প্রস্তুতির সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করছেন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজসহ কয়েকটি কলেজ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ ও ভবনে ধোয়া-মোছার কাজে ব্যস্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। শিক্ষকরা দফায় দফায় মিটিং করছেন সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে কীভাবে পাঠদান শুরু করা যায়। কলেজে আগতদের মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজিং নিশ্চিত করার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কলেজের একটি কক্ষকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মো. গিয়াস উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, জেলায় মোট মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে ৫৩৭টি। এর মধ্যে কলেজ ৩৯টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১৭টি, মাধ্যমিক স্কুল ২৮০টি, মাদ্রাসা ২০১ টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চারটি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী তিন লাখেরও বেশি। এরমধ্যে এক লাখ ২৪ হাজার ছাত্র এবং ছাত্রী রয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠদান শুরু করতে আমাদের প্রস্তুতি আছে।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ