X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ই-অরেঞ্জের ১৫ কোটি টাকার পণ্য কিনে পথে বসেছে ২০০ পরিবার

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২৬আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৪৬

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য কিনে পথে বসেছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাদিঘী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। ক্রেতাদের অনেকেই ঋণ নিয়ে, জমি বন্ধক রেখে, আবার কেউ সোনার অলঙ্কার ও গরু বিক্রি করে ই-অরেঞ্জ থেকে ১৫ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য কিনেছেন বলে দাবি করেছেন। তবে কেনার অনেকদিন পার হয়ে গেলেও পণ্য বুঝে পাননি তারা।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গেলে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি ছুটে আসেন। এ সময় আক্ষেপ নিয়ে নিজেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া প্রতারণার কথা জানান তারা।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, ভ্যানচালক, প্রবাসী, প্রবাসীর স্ত্রী, চায়ের দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দুই শতাধিক পরিবারের সদস্য ই-অরেঞ্জে বিনিয়োগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা ঋণ নিয়ে, জমি-সোনার অলঙ্কার ও গরু বিক্রিসহ বিভিন্ন উপায়ে টাকা সংগ্রহ করে দ্বিগুণ মুনাফার লোভে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য কেনেন। পণ্য কেনার প্রায় চার থেকে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কেউই তা হাতে পাননি। এ ঘটনায় গ্রামের একাধিক গ্রাহক ই-অরেঞ্জ কোম্পানির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রামের নাশিদুল ইসলাম ২৪ লাখ ৫০ হাজার, কাউছার আহমেদ ২২ লাখ, আমিনুর ২০ লাখ, ইঞ্জিনিয়ার সাগর আহমেদ ১৮ লাখ, রিপন আল মামুন ১৮ লাখ, আইয়ুব আলী ১৫ লাখ, শেফালী আক্তার ১৩ লাখ ৫৭ হাজার, মারুফ ১২ লাখ, মাজেদুল ১২ লাখ, আল আমিন ১০ লাখ ও মো. নাজমুল ১০ লাখ টাকার পণ্য ই-অরেঞ্জ থেকে কিনেছেন। এভাবে একে-অপরকে দেখে পণ্য কিনেছেন গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ।

অনেকদিন পার হয়ে গেলেও পণ্য বুঝে পাননি ক্রেতারা

একইভাবে শিউলী আক্তার তিন লাখ, মাসুদ পারভেজ এক লাখ, আরজু আহমেদ আট লাখ, মিদুল আট লাখ, মো. রাব্বি সাত লাখ, মো. আরিফ আট লাখ, মো. রানা চার লাখ, আবুল হোসেন সাত লাখ, রাকিব আট লাখ, মো. মিলন দুই লাখ ৫০ হাজার, হাবিব এক লাখ ১৭ হাজার, চান মাহমুদ এক লাখ ৫৩ হাজার, আনোয়ার হোসেন তিন লাখ আট হাজার, রুহুল আমিন এক লাখ ২০ হাজার, মো. এরশাদ চার লাখ, আমিনুর নয় লাখ ৬৫ হাজার, আব্দুল হামিদ এক লাখ, হাশেম এক লাখ ২০ হাজার, মো. বাদশা এক লাখ ১০ হাজার, নুর ইসলাম এক লাখ ৭৬ হাজার, শফিকুল ইসলাম এক লাখ ৬৭ হাজার, আব্দুল আলিম চার লাখ ৩২ হাজার, আতিক চার লাখ ৫০ হাজার, হাফিজুর দুই লাখ ৫০ হাজার, সেলিম এক লাখ ১৭ হাজার, মৌসুমী আক্তার ছয় লাখ ৫৭ হাজার, শাহনাজ আক্তার এক লাখ ১০ হাজার, পারভীন বেগম চার লাখ ৫০ হাজার, জিয়াসমিন আক্তার এক লাখ ৩০ হাজার, আল মামুন দুই লাখ ১৬ হাজার, মো. সবুজ এক লাখ, সাজ্জাদ এক লাখ ৪৫ হাজার, হজরত আলী ৯০ হাজার, মো. রবিন ৯০ হাজার ৯০০, আশিদুল ইসলাম ৯০ হাজার, স্বাধীন ৫০ হাজার, সাইদুর ৯১ হাজার, মাইনুদ্দিন ৯১ হাজার, জয়মালা বেগম ৯০ হাজার, রাশেদুল ইসলাম ৯০ হাজার ও মো. দুলাল ৯১ হাজার টাকার পণ্য কিনেছেন।

ইছাদিঘী গ্রামের ভুক্তভোগী নাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ই-অরেঞ্জ থেকে প্রথমবার পাঁচটি মোটরসাইকেল কিনে ডেলিভারি পেয়েছি। পরে তাদের সাইটে মোটরসাইকেলের ওপরে বিশেষ অফার আসে ডাবল টাকা ভাউচার নামে। তাদের ক্যাম্পেইন থেকে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২৯টি মোটরসাইকেল কিনি। সেই ভাউচারগুলো ডাবল টাকা হয়ে ওয়ারলেটে জমা হয়। লকডাউনের নাম করে তারা বাকি ডেলিভারিগুলো স্থগিত করে। টাকাগুলো আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে এনে এই কোম্পানিতে মোটরসাইকেল কিনি। এখন আমি নিঃস্ব। এ ঘটনায় কোম্পানির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছি। এই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য ১৫-২০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন।’

আমিনুর, সাগর আহমেদ ও রিপন আল মামুন জানান, ই-অরেঞ্জ থেকে পণ্য কিনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা পণ্য চাই না, টাকা ফেরত চাই।  

ই-অরেঞ্জ থেকে কেনা পণ্যের ডেলিভারি চাইছেন ক্রেতারা

অটোভ্যানচালক মাইনুদ্দিন বলেন, ‘আমি গরু বিক্রি করে লাভের আশায় ই-অরেঞ্জ কোম্পানিতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমি মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। কিন্তু এখনও হাতে পাইনি। আমি গরিব মানুষ। আমার কাছে এই ৫০ হাজার টাকা কোটি টাকার মতো। আমি টাকাগুলো ফেরত চাই।’

রানা নামে এক দিনজমুর বলেন, ‘এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলাম। সেই গরু বিক্রি করে আমি লাভের আশায় ই-অরেঞ্জ থেকে মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। এখন টাকা পাচ্ছি না, মোটরসাইকেলও হাতে পাইনি। আমি কামলা দিয়ে টাকাগুলো পরিশোধ করতেছি।’

শাহানাজ নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী সৌদিতে থাকেন। আমাদের ঋণ পরিশোধও হয়নি। এলাকার অনেকেই এই কোম্পানিতে পণ্য কেনার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। এ জন্য আমার স্বামীর কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা এনে মোটরসাইকেল কিনেছি। চার মাস চলে গেছে, এখনও মোটরসাইকেল পাইনি।’

গজারিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমি তিন লাখ টাকার পণ্য কিনেছি। এলাকার অধিকাংশ পরিবার এই পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন পরিবার প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকার পণ্য কিনে হাতে পায়নি। ই-অরেঞ্জ কোম্পানির হাতিয়ে নেওয়া টাকা আমরা দ্রুত ফেরত চাই।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেননি এখনও।’

প্রসঙ্গত, তাহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের মালিক ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আসামিরা পণ্য সরবরাহ না করে এক লাখ গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে পণ্য বুঝে না পাওয়ায় এর আগে ১৬ আগস্ট দিনভর ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়