বসুরহাট পৌর মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদককে পৌর ভবনে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন (৫৯) উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোখলেছুর রহমান পন্ডিত বাড়ির জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে। তিনি নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় উপজেলার বসুরহাট বাজারের ডাচ বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন মসজিদের সামনে থেকে জাতীয় পার্টির এ নেতাকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসুরহাট পৌর ভবনের একটি কক্ষে আটক রেখে দফায় দফায় নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর ছেলে মাইনুল ইসলাম শাওন। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পরে আনোয়ার খাঁন মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন স্ত্রী নাজমা ইসলাম।
চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাইফুল ইসলাম স্বপনের স্ত্রী নাজমা ইসলাম বলেন, আগে থেকেই কাদের মির্জা আমার স্বামীকে মুঠোফোনে গালমন্দ করতেন এবং হুমকি দিতেন। গত ৬ মাসে আমার স্বামী বসুরহাট যায়নি। বুধবার বিকালে তিনি বসুরহাট বাজারে যান। খবর পেয়ে, কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা তাকে ধরে নিয়ে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়, হাত-পা ভেঙে দেয়। এ সময় তারা তাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় আমি কাদের মির্জার বিচার দাবি করছি।
ভুক্তভোগীর ছেলে সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম শাওন অভিযোগ করেন, বসুরহাট বাজারের মারলিন হোটেলের সামনের মসজিদে বাবা আছরের নামাজ পড়ে বের হয়েছিলেন। তখন কয়েকজন সন্ত্রাসী দিয়ে কাদের মির্জা আমার বাবাকে তুলে নিয়ে যান। একইসঙ্গে বাবার সঙ্গে থাকা দুই লাখ টাকা, মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাবাকে টর্চার সেলে নিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ওপরের দিকে টাঙিয়ে রাখে তারা। পাঁচ ঘণ্টা টানা বেধড়ক মারধর করে সন্ত্রাসীরা। কাদের মির্জা নিজেও আমার বাবাকে মারধর করেছেন। এমনভাবে মারধর করা হয়েছে শুধু কোনও রকম জানটা রাখছে। মারধর করে স্টেটম্যান্ট নেয় এবং ভিডিও করে। উনাকে বলতে বাধ্য করা হয় যে, তিনি যে সব কথা বলেছেন, এসব কথা নিজের ইচ্ছায় বলেছেন। ওরা যা যা বলছে উনি বাঁচার জন্য শুধু হ্যাঁতে হ্যাঁ মিলিয়েছেন।
শাওন আরও অভিযোগ করেন, কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে মির্জার বিরুদ্ধে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দেওয়া হয়। তার প্রতিপক্ষরা যে সব অনিয়ম করে নাই, সেগুলো করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিতে বলে। এসব কথা বলতে বাধ্য করে তারা ভিডিওচিত্র ধারণ করে। তারা বাবাকে বলে ‘তুই এমপি প্রার্থী হইছস, শেখ হাসিনা তোকে চিনে। আমি শেখ হাসিনার কাছে ভিডিও পাঠামু হেগুনে এ কাম করছে। আমি তোর থেকে স্টেটম্যান্ট নিয়ের, তোর এটা সত্য, শেখ হাসিনা তোর এটা গ্রহণ করবে।’ একপর্যায়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লতিফ মেম্বারকে এখানে এনে বলা হয়, ‘স্বাক্ষর করে এরে (স্বপন) নিবি। নইলে তোরেসহ মারি ফালামু।’ তখন উনি ভয়ে স্বাক্ষর দিয়ে রাত সাড়ে ১০টায় বাবাকে বসুরহাট পৌরসভা ভবন থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লতিফ মেম্বার বলেন, কাদের মির্জা আমাকে ডেকে নেয় এবং আমার থেকে স্বাক্ষর নিয়ে স্বপনকে ছেড়ে দেয়। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলতে চাননি।
এ বিষয়ে জানতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, এ বিষয়ে কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।