X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাশ দাফনের জায়গা নেই দরগাতলায়

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৪৩আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৪৯

সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে হাসপাতালে মারা যান হাবিবুর রহমানের (৩০) স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা (২২)। এরপর নবজাতককে নিয়ে যতটা না চিন্তা, সাদিয়ার দাফন নিয়ে তার চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবার। কারণ চারদিকে পানি আর পানি। এ অবস্থায় তাকে দাফন করবে কোথায়? পরে দূরের একটি গ্রামে সাদিয়াকে দাফন করেন হাবিবুর রহমান।

গত জুলাইয়ে আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের মাহমুদুল হাসান (৩৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়। পূর্ণিমার জোয়ারে চারদিকে পানি। মাটির ওপর কোনোরকম পলিথিন দিয়ে লাশ দাফন করা হয়। কিন্তু এর কয়েকদিন পরেই লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের দরগাতলা গ্রামে এমন ঘটনা নিয়মিত। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ডুবে আছে। জলাবদ্ধতা ও করোনাভাইরাসে এই অঞ্চলের মানুষ বিপর্যস্ত। মানুষের জীবনযাত্রা জোয়ার-ভাটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে স্থানীয়দের সব সময় তটস্থ থাকতে হয়। অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা, স্যানিটেশন ও সুপেয় পানিসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ।

দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত

জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে, সুপেয় পানি ও উপকূল সুরক্ষার দাবিতে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় আশাশুনির প্রতাপনগরে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ করেন স্থানীয়রা। পরিবেশবাদী আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের আহ্বানে এতে উপকূলের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘর-দোর, জাগা-জমি সব শেষ। ভাসি-বুড়ি আশ্রয় নিছি একটা দোকানে। আমরা ভাটির সময় জাগি, আবার জোয়ারে ডুবি। এভাবে আর কত দিন থাকবো? বউ-বাচ্চা নিয়ে আর পাত্তিছিনি (পারছি না)। এবার ভাবছি নড়াইল চইলি (চলে) যাবো। বাপ-দাদার ভিটি-মাটি সব গেছে। দুই বছর হতি যাচ্ছে ডুবি মরতিছি। বাঁধ হবার নামনি। বাঁধ-টাধ হলি আবার আসবো।’

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয়ক এস এম শাহিন আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূল আজ ক্ষত-বিক্ষত। মানুষের বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। অনেকে উপকূল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আগামী জলবায়ু সম্মেলনে আমরা কথার বাস্তবায়ন দেখতে চাই, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চাই।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় গোটা সাতক্ষীরা উপকূল। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘর-বাড়ি ধসে পড়ে দুই হাজারেরও বেশি। এখনও শতাধিক ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। কাজ না থাকায় সেখানকার লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপকূলীয় এলাকায় বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে হাজারও পরিবার। বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর খুপড়ি ঘরে কোনোরকম বেঁচে আছে তারা।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল বহরে বোমা হামলা
ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সর্বশেষ খবর
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা