X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ে করে ইরাকে বিক্রি

আমানুর রহমান রনি
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:৫২আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৪৫

লিটন মিয়া। প্রায় তিন দশক আগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। দেশের একটি সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করতেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর চলে যান ইরাকে। সেখানে গিয়ে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন। দেশে বিভিন্ন জায়গায় সেই পরিচয়ে বিয়ে করেন ছয়টি। বিয়ে করে এসব নারীদের ইরাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিক্রি করে দিতেন। অবশেষে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন এই নারী পাচারকারী। 

কে এই লিটন মিয়া?

১৯৯২ সালে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাস করেন লিটন মিয়া। দেশের সরকারি একটি সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। মিথ্যা প্ররোচনা ও অনৈতিক কাজের জন্য সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়।

২০০২ সালে লিটন ইরাকে যান। এসময় নিজেকে ইরাকের বাগদাদে একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চাকরি করতেন বলে দেশে পরিচয় দিতেন। পরবর্তীতে কয়েকজন মিলে ইরাকে নারী পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। লিটন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ২০১৩ সালের দিকে ইতালি চলে যান। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। এসময় ইরাক, দুবাই তার আসা যাওয়া ছিল।

শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার উত্তরা থেকে র‌্যাব লিটন মিয়া ও তার সহযোগী আজাদকে গ্রেফতার করে।

যেভাবে নারীদের পাচার করা হতো

লিটন দেশের নারীদের সঙ্গে প্রথমে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচয় হতেন। তার দেশি সিন্ডিকেটও নারীদের বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতো। তাদের কাছে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতেন লিটন। মোবাইল ফোন, টেলিফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। এরপর ইরাকে মেডিক্যালে চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। এভাবে সখ্যতা গড়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। কখনও টেলিফোনে, কখনও দেশে এসে সরাসরি বিয়ে করতেন। এভাবে অন্তত ছয়জনকে বিয়ে করেন। এরপর তাদের টুরিস্ট ভিসায় দুবাই এবং দুবাই থেকে ইরাকে নিয়ে যেতেন লিটন। এদের মধ্যে পাঁচজনকে ইরাকে পাচার করে বিক্রি করে দিয়েছেন।

বিশেষ করে বিউটি পার্লারের কাজ জানা নারী ও নার্সিং পেশায় নিয়োজিত নারীদের পাচার করেছেন লিটন। বিদেশের হাসপাতাল, বিউটি পার্লার ও সুপারশপে চাকরির প্রলোভনে নারীদের পাচার করতো লিটনের চক্র।

ইরাক, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে জিম্মি করে দেশে থাকা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো।

ইরাক ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে এই সিন্ডিকেটের একাধিক সেফহাউজ রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষকে তারা তারা পাচার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য

সর্বশেষ পাচার হওয়া এক নার্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে ইরাকে পাচার করে বিক্রি করা হয়েছিল। সেখানে একটি সেফ হাউজে রাখা হয়েছিল। সেই সেফহোমে আরও ১৫-২০ নারীকে দেখেছি। যাদের পাচার করে সেখানে নেওয়া হয়েছে।’

সেফ হাউজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নারী ইরাকের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। লিটন তাকে বিয়ে করে ইরাকে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন।

আজাদ

লিটনের অন্যতম সহযোগী আজাদ

লিটনের অন্যতম সহযোগী আজাদ। র‌্যাব শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে মিরপুর থেকে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। আজাদ দেশেই সিন্ডিকেটটির পরিচালনা করতেন। দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসব নারী-পুরুষকে পাচার করা হয়েছে। তিনি নারীদের পাসপোর্ট প্রস্তুত, টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় দেখতেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট করা, বিয়ার, দেশি-বিদেশি জাল টাকা, পাসপোর্ট ও বিভিন্ন সিল।

র‌্যাবের বক্তব্য

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ বুঝে বিক্রি করে দেওয়া হতো। চক্রের দশজন সদস্যের মধ্যে সাতজন ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে আর বাকিরা দেশে এই কাজ করছিল। তিন থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে এসব নারীদের চাকরির আশ্বাসে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। মানব পাচারের প্রথম ধাপে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই এরপর ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইরাকে নেওয়া হতো। চক্রটি ৩০-৪০ জন নারীকে পাচার করেছে।

গ্রেফতারকৃত লিটন মিয়া ২০১৯ সালের পর আর ইরাকে যেতে পারেননি। সর্বশেষ দেশেই বালুর ব্যবসাসহ সাধারণ মানুষের প্রতারণা করে আসছিলেন। ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী দেশে ফিরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।

আরও পড়ুন: মানবপাচারে জড়িত লিটন ও আজাদ গ্রেফতার

/এমআর/
সম্পর্কিত
ইউরোপে মানবপাচারের নতুন রুট নেপাল
দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে ‘বালি প্রসেসের’ প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
শতাধিক বাংলাদেশি উদ্ধারমানবপাচারের দায়ে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে মালয়েশিয়া
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা