X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

কেন প্রতিবছর ডুবে যায় রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু?

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৪আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৪

অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় বৃষ্টি ও উজানে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে প্রতিবছর ডুবে যায় রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের আকর্ষণ ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যান অনেক পর্যটক।

কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। ১০৪ এমএসএলের একটু বেশি হলেই ডুবে যায় সেতুটি। প্রতিবছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে হ্রদের পানি বাড়লে ডুবতে শুরু করে সেতু। ইতোমধ্যে সেতুর পাটাতন পানিতে ডুবতে শুরু করেছে এবং এভাবে পানি বাড়তে থাকলে সেতুর ওপর পর্যটক ও জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে পর্যটন করপোরেশন।

কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল, ১০৪ এমএসএলের একটু বেশি হলেই ডুবে যায় সেতুটি

১৯৮৬ সালে জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে। দুই পাহাড়ের মাঝখানে দুটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন সেতুটি পর্যটন শহর রাঙামাটির প্রতীক হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিত। জেলায় প্রতিবছর পাঁচ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে বর্ষাকালে ভ্রমণে আসেন লক্ষাধিক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল কোনও ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই। এ জন্য কাপ্তাই হ্রদের পানি সর্বোচ্চ স্তরে যাওয়ার আগেই ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যায়। 

অনেক সময় সেতু পানিতে ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। সেতুতে উঠতে না পারার আক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন অনেক পর্যটক।

ঢাকা থেকে আসা মো. মাহিন ও মো. রাব্বি জানান, সেতুটি দেখতে এসেছি, বেশির ভাগ অংশ পানিতে ডুবে আছে। চলাচল করা কঠিন। সেতুতে উঠার ইচ্ছা ছিল। সেতুর ওপর থেকে লেকের সুন্দর দৃশ্য দেখবো বলে এতদূর থেকে এসেছি। হতাশ হয়ে ফিরলাম। এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের অনুরোধ।

প্রতিবছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে হ্রদের পানি বাড়লে ডুবতে শুরু করে সেতু

রাজশাহী থেকে আসা ভ্রমণপ্রেমী মো. আজম বলেন, সেতুটিতে পানি থাকায় হাঁটা যায় না। জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানটি ডুবে থাকায় আমি হাতাশ। সেতুর যে সৌন্দর্য সেটি এখন নেই।

অপরিকল্পিতভাবে এই সেতু নির্মাণ করায় প্রতিবছর পানিতে তলিয়ে যায়। সেতুর উচ্চতা বাড়িয়ে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগের আহ্বান সুশীল সমাজের।

রাঙামাটির সংবাদকর্মী ফজলে এলাহী বলেন, সারাদেশের পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতু দেখার জন্য আসেন। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সেতু ডুবে থাকে। পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। বারবার বলার পরও সেতু সংস্কার ও উচ্চতা বাড়ানো হয়নি। দ্রুত সংস্কার হওয়া উচিত।

ইতোমধ্যে সেতুর পাটাতন পানিতে ডুবতে শুরু করেছে

রাঙামাটির হোটেল ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ আসাদ বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস করোনা মহামারির পর পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হলো। দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। অথচ এই সময় ঝুলন্ত সেতু তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে আবার পর্যটক হারানোর শঙ্কা। বারবার বললেও দায়িত্বশীলরা গুরুত্ব দেননি।

রাঙামাটি পর্যটন বোট ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী বলেন, দীর্ঘদিন পর ব্যবসা শুরু হলেও গত কয়েকদিনে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবতে শুরু করেছে। এভাবে কয়েকদিন পানি বাড়লে সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। সেতুটি ডুবে গেলে পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বোট চালকদের।

সেতুটি পর্যটন শহর রাঙামাটির প্রতীক হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিত

এভাবে হ্রদের পানি বাড়লে সেতুর ওপর পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছেন রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন উপ-ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোয়েব। তিনি বলেন, সেতুর ওপর পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রাঙামাটি জেলা পরিদের চেয়ারম্যান অংসু প্রু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য শাস্তি চুক্তির আলোকে পর্যটন জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত হলেও আইন ও প্রবিধান প্রণয়ন শেষ না হওয়ায় জেলা পরিষদের অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও করা কঠিন। তবু পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করবো, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু সংস্কার করে উচ্চতা বাড়ানো হয়। পর্যটকদের জন্য সেতুটি উপযোগী করার চেষ্টা করবো।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
আলেকজান্ডার মেঘনা পাড় যেন আরেক কক্সবাজার
মুজিবনগর-আমঝুপি নীলকুঠিতে দর্শনার্থীদের ভিড়
সর্বশেষ খবর
কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে: ভূমিমন্ত্রী
কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে: ভূমিমন্ত্রী
রূপগঞ্জ-শাইনপুকুরের ম্যাচে ‘কনকাশন সাব’ নিয়ে বিতর্ক
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগরূপগঞ্জ-শাইনপুকুরের ম্যাচে ‘কনকাশন সাব’ নিয়ে বিতর্ক
বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
বাসচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
‘জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না’
‘জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না’
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট