ইভ্যালি জন্মের পর সবচেয়ে বড় আতশবাজিটা ফুটেছিল অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশিদ মিথিলার মাধ্যমে। চলতি বছরের ১৫ মে রাত ১০টায় এই বাজিটা ফাটে ফেসবুক লাইভ শোয়ের মাধ্যমে। যেখানে গোটা বাংলাকে চমকে দিয়ে মুখোমুখি বসেছিলেন প্রাক্তন তারকা দম্পতি তাহসান-মিথিলা!
বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের কোনও প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং আইডিয়া হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিনিময়ে চওড়া হাসি ফুটেছে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের মুখেও। সে ক্ষেত্রে এই আয়োজনের অন্যতম পরিকল্পক ইভ্যালির সিএমও আরিফ আর হোসাইন শতভাগ সফল। যার হাত ধরে তাহসান এর আগেই (১০ মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির ‘ফেস অব ইভ্যালি’ (শুভেচ্ছাদূত) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। অবশেষে ১৫ মে মিথিলাও যুক্ত হলেন ‘ফেস অব ই-ভ্যালি লাইফস্টাইল’ হিসেবে!
এদিকে মিথিলার আকাশভাঙা আতশবাজি চমকের ঠিক ১৫ দিনের মাথায় (১ জুন) আবারও তুমুল আলোচনার জন্ম দেন ‘দেবী’-খ্যাত শবনম ফারিয়া। এবার আর শুভেচ্ছাদূত টাইপের পথে হাঁটলেন না ইভ্যালির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) তথা ব্র্যান্ড পরিকল্পক আরিফ আর হোসাইন। তিনি শবনম ফারিয়াকে নাটকের সেট থেকে তুলে এনে সোজা বসিয়ে দিলেন করপোরেট অফিসের চেয়ারে। বানালেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা। একইসঙ্গে ইভ্যালির মিডিয়া ও কমিউনিকেশনস প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করার দায়ভার তুলে দিলেন।
ইভ্যালিতে নেই তাহসান, পাননি বকেয়াও
শবনমের প্রতি তখন মিডিয়ার প্রশ্ন ছিল, অভিনয়ের উজ্জ্বল মাঠ ফেলে কেন এমন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হলেন? তিনি জানালেন, ‘করোনার কারণে সব শুটিং বন্ধ। তাই অনেক দিন ধরেই জব খুঁজছিলাম।’ যদিও এখন খোঁজ মিলছে, ইভ্যালিতে ৩ মাসের (জুন, জুলাই ও আগস্ট) কর্মজীবনে এক মাসেরও পুরো বেতন পাননি শবনম ফারিয়া! অথচ তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য এই তিন মাসে নিজেকে উজাড় করেছেন। বাদ দিয়েছেন অসংখ্য শুটিং শিডিউল।
সূত্রগুলো বলছে, ইভ্যালির সঙ্গে চলতি মাসের শুরুতেই সম্পর্ক চুকেছেন শবনম ফারিয়া। তবে সম্পর্ক কাগজে-কলমে শেষ হলেও প্রতিষ্ঠানটির জন্য তিনি কাজ করছিলেন মোহাম্মদ রাসেল গ্রেফতারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত। এবং প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ার শর্তই ছিল, ইভ্যালি সম্পর্কে খারাপ কোনও স্টেটমেন্ট মিডিয়ায় দেওয়া যাবে না! যেমন শর্ত ছিল ‘ফেস অব ইভ্যালি’ তাহসান খানের বেলাতেও।
সারপ্রাইজ লাইভে এসে যা বললেন তাহসান-মিথিলা (ভিডিও)
তবে শবনম ফারিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলছেন খানিক ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, ‘ইভ্যালির সঙ্গে আমার থাকা না থাকার বিষয়টি মিডিয়ায় আসুক, সেটা চাই না। আমার কোনও স্টেটমেন্টের কারণে প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি হোক, সেটা চাই না। আমি এরমধ্যে অন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে জবের বিষয়ে আলাপ করছি। নতুন জবে জয়েন করলে খবরটি সবাইকে জানাতে চাই।’
ইভ্যালির সঙ্গে শবনম ফারিয়ার অবস্থানটি বেশ অস্পষ্ট হলেও ‘ফেস অব ইভ্যালি লাইফস্টাইল’ মিথিলার অবস্থানটি আরেকটু স্পষ্ট। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এই প্রতিষ্ঠানটিতে জয়েন করার দুই মাসের মধ্যে শুরু হলো নানা জটিলতা। আগে তো এত কিছু টের পাইনি। তবে আমি চাই না এই সময়ে ইভ্যালি রিলেটেড কোনও নিউজে আসতে। আমার আরও অনেক কাজ আছে, সেগুলো নিয়েই এখন ব্যস্ত আমি।’
এটি সত্য, ১৫ মে তাহসানের সঙ্গে মিথিলার অভিষেক অনুষ্ঠানের পর প্রতিষ্ঠানটির আর তেমন কোনও বিশেষ আয়োজনে পাওয়া যায়নি তাদের। সূত্র বলছে, মিথিলাকে যুক্ত করেই ইভ্যালি ছেড়েছেন তাহসান! তার দুই মাসের মাথায় চুক্তি বাতিল করেছেন মিথিলাও। ছুটেছেন কলকাতায়। সেখানে তিনি ব্যস্ত তিনটি ছবির কাজে।
এবার ইভ্যালিতে যুক্ত হলেন শবনম ফারিয়া!
সূত্র বলছে, চুক্তি বাতিলের নন-ডিসক্লোজার শর্ত অনুযায়ী এটি নিয়ে আপাতত কিছু বলতে পারছেন না তাহসানের মতো মিথিলাও! বলা যায়, তুমুল তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করেও চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছেন দু’জনে। তবে মিথিলা এটুকু নিশ্চিত করেছেন বাংলা ট্রিবিউনকে, ইভ্যালির সঙ্গে তিনি আর নেই।
আরেকটি বিশ্বস্ত সূত্র বলতে চাইছে, তাহসান ও মিথিলা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছেন নেতিবাচক কিছু না বলার শর্তে। ফলে তারা এর সঙ্গে আর কোনোভাবেই যুক্ত নেই, আবার শর্ত পালনের জন্য কিছু বলতেও পারছেন না। তবে আরিফ আর হোসাইন ও শবনম ফারিয়া চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত আছেন অলিখিতভাবে। হতে পারে প্রাপ্য সম্মানী তুলে নেওয়ার আশায়!
উল্লেখ্য, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করেছে র্যাব। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অর্থ আত্মসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে মামলা করেন আরিফ বাকের নামে একজন ভুক্তভোগী।
