X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই এলাকায় জরিপ: সবচেয়ে বেশি দূষণ করছে কোকাকোলা ও প্রাণ আরএফএল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:০৮আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:০৮
ঢাকাসহ দেশের ছোট-বড় প্রায় সব শহরেই যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল কিংবা বিভিন্ন পণ্যের প্লাস্টিকের মোড়কে সয়লাব। রাজধানীর ধানমন্ডি লেক এবং ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এসব প্লাস্টিক বোতল এবং মোড়কের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান কোনটি তা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। সংস্থাটি বলছে, দেশের এই দুই এলাকায় জরিপে দেখা গেছে- সবচেয়ে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কোকাকোলা এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ ছাড়াও পেপসিকো, ইউনিলিভার, নেসলে, পারটেক্স গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপসহ আরও বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্লাস্টিকের মোড়ক পেয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশের দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই দূষণ বন্ধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারিভাবে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও অন্যান্য প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে আগের মতোই। এইসব পলিথিনের মতো এইসব প্লাস্টিকের বোতলসহ অন্য পণ্যগুলো পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট জায়াগায় ফেলার বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতাও জরুরি।
আজ মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানআইজেশনের (ইএসডিও) ‘ব্র‍্যান্ড অডিট-২০২১’ উপস্থাপনের বিষয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইএসডিও-এর চেয়ারপার্সন সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের সভাপতিত্বে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির প্রোগ্রাম অফিসার হৃদিতা ফেরদৌস।
মূল উপস্থাপনায় হৃদিতা জানান, পরিবেশের ক্ষতিকর পদার্থ বিশেষ করে প্লাস্টিক নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। তারা দেখেছেন, সবচেয়ে ক্ষতিকর পদার্থ প্লাস্টিকের যথেচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে। তিনি বলেন, এর ব্যবহার এখনই ব্যবহার বন্ধ হতেই হবে। যারা প্লাস্টিক কারখানার মালিক, তাদের পরের প্রজন্মও এই ক্ষতির শিকার হবেন। এটা তাদেরও ভাবা উচিৎ।
প্লাস্টিক সহজে ডিকম্পোজ হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্লাস্টিক দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশে থেকে যায়, আর দূষণ ছড়িয়ে যায়। পানি প্রবাহ ব্লক করে দেয়। ঢাকার ধানমণ্ডি লেক ও ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করেছি। তিনদিন ধরে এই  তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয় কোকাকোলা এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে।
জরিপে বলা হয়, কোকাকোলা কোম্পানির কিনলের বোতলের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, শতাংশের হিসাবে মোট প্লাস্টিকের ৩০ ভাগ। এছাড়া আরএফএল-এর অনেক প্লাস্টিকের বোতল, সসের প্যাকেট, অলটাইম প্রোডাক্ট-এর প্লাস্টিকের প্যাকেট পেয়েছেন তারা; যা মোট প্লাস্টিকের প্রায় ২০ ভাগ, দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে পেপসিকো কোম্পানি, ১২ ভাগ। এছাড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিলিভার, নেসলে, পারটেক্স গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপসহ আরও বেশ কিছু গ্রুপের কোম্পানির পণ্যের প্লাস্টিকের প্যাকেট তারা পেয়েছেন। যেটি ওই দুই এলাকার দূষণে বড় ভূমিকা রাখছে।
দুই এলাকায় জরিপ: সবচেয়ে বেশি দূষণ করছে কোকাকোলা ও প্রাণ আরএফএল জরিপের ফলাফলের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের সবার রিফিল ও রিসাইকেল সিস্টেম থাকা দরকার, প্লাস্টিক পণ্য পুনরায় ব্যবহারের সিস্টেম থাকা দরকার। তা না হলে পরিবেশের ক্ষতি হতেই থালবে। অন্যথায় এইগুলো এখনই ব্যান করা দরকার সরকারের। এখনই ব্যবস্থা না নিলে দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
হৃদিতা ফেরদৌস বলেন, সাধারণ মানুষ বলছে- প্লাস্টিক ভাল না; কিন্তু তারা ব্যবহারও করছেন। কারণ বাজারে প্লাস্টিকই ব্যবহার হয়। ফলে যদি অল্টারনেটিভ কিছু দেওয়া যায় তাহলে তারা সেটি অবশ্যই ব্যবহার করবে।
প্লাস্টিক গুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট শামিম আহমেদ বলেন, আমরাও চাই না প্লাস্টিক থেকে পরিবেশের দূষণ হোক। আমরাও চেষ্টা করছি। আমরা তর্ক করতে আসিনি। আমরা একটা সমাধান করতে এসেছি। জাপান, সিঙ্গাপুরের তুলনায় আমাদের ব্যবহার অনেক কম। ওরা কন্ট্রোল করছে। আমর কন্ট্রোল করতে পারছি না। ২০০২ সালে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যান করা হয়েছে। কিন্তু এখনও তা বন্ধ হয়নি। ১৯৫০ অনেক কম ছিল, ভবিষ্যতে ৭০০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে গিয়ে দাঁড়াবে। আমরা সরকারকে বলেছি। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে, সচেতনতাই অনেক বড় সমাধান।
বাংলাদেশ পেটফ্ল্যাক্স মেনুফেকচারাস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান বলেন, সারা বিশ্বে প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ার সময়গুলোতে দূষণের কথা বলা হতো না, রিসাইকেলের বিষয়ে চিন্তা করা হয়নি। এ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ব্যবহার জিরো অবস্থায় আছে। কোনো সচেতনতা নেই। সরকার অনেক জিনিস বন্ধ করে দিলো, কিন্তু মালিকরা যে বিনিয়োগ করেছেন- তার কি হবে তাও চিন্তা করা দরকার। যারা এই ম্যাটারিয়ালগুলো কারা উৎপাদন করে তা বের করার চেয়ে ডিকম্পোজ কীভাবে করার ব্যাপারে চিন্তা করা বেশি জরুরি। রিসাইকেলে টাকা কম হওয়ায় মানুষের আগ্রহ কম, ফলে তারা যেখানে-সেখানে ফেলছে, পরে তা মাটিতে গিয়ে জমা হচ্ছে। তাই এমন প্লাস্টিক আনা দরকার যাতে সহজে ডিকম্পোজ হবে, মাটিতে সহজে মিশে যাবে, এমন উপকরণ দিয়ে বানানো উচিৎ। সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পেইন করা দরকার।
অধ্যাপক আবু হাসেম বলেন, আমরা বহুবার প্লাস্টিক কারখানার মালিকদের সাথে বসেছি। নদীগুলো ভরে যাচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি। সচেতনতা বাড়ানো, এলাকাভিত্তিক প্রচারণা,  বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সিলিং করা- এসব কিছুতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। সাধারণ মানুষকে এরমধ্যে আনতেই হবে, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যান করলেও কাজ হবে না। কারণ ব্যান করলে কদিন বানানো বন্ধ করলেও আবার বানাবে, তাদের ভেতরেও সচেতনতা আনতে হবে। আমরা যদি একই জিনিস বার বার ব্যবহার করতে পারি তাহলে দূষণ অনেক কমে আসবে। বেশি সময় বার বার ব্যবহার করলে কাজ হবে। বাসাবাড়িতে ব্যবহার করা প্লাস্টিক একসাথেই ফেলে দিচ্ছে বিদেশে কিন্তু তা হচ্ছে না। আলাদাই কালেকশন হচ্ছে। বাংলাদেশেও তাই করতে হবে। সরকারকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে। এতে সহজেই সরকারিভাবে এই প্লাস্টিক সংগ্রহ করা সম্ভব। ভালভাবে রি-কালেকশন করা জরুরি, শুধু ব্যান করে লাভ হবে না।
অধ্যাপক আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ইএসডিও পরিবেশের দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। মালিকরা বলছেন, কারখানা বন্ধ করলে কলকারখানার কী হবে। আর সাধারণ মানুষ চাইছেন বিকল্প চাইছেন। এখন আসলে কী করতে হবে, আমাদের আসলেই বিকল্প ভাবতে হবে।
ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, আগে আমরা প্লাস্টিক ছাড়াই জীবন শুরু হয়েছিল। তখন কোনও সমস্যা হতো না। চারাগুলো প্লাস্টিক ছাড়াই হতো। এখনও চটের ব্যাগেই করা সম্ভব। প্লাস্টিকের বিকল্প সমাধান আমাদের ভাবতেই হবে। আন্তরিকতা এখানে একটি বড় বিষয়। আমরা আমাদের ইকোসিস্টেম ধ্বংস করতে চাই না। সারাবিশ্বে এখন আন্দোলন হচ্ছে। আমাদেরও সেখানে সামিল হতে হবে।
অন্যদের মধ্যে ইএসডিও'র মহাসচিব মো. শামীম, ড. শাহরিয়ার হোসেন, নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।

/এসএনএস/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা