X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ কোনও টিকা নিয়ে ‘ফ্যাসিনেশন’ থাকা যাবে না

জাকিয়া আহমেদ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:১১আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:২৩

করোনা প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার টিকা, তবে একমাত্র নয়। ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর সঙ্গে লাগবে টিকা। আর এই টিকা নিয়ে প্রশ্ন বা বিশেষ কোনও কোম্পানির হতে হবে, এমন ফ্যাসিনেশন (মোহ) থাকা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর।

তিনি বলেন, যে টিকা দেশে আসবে সেটাই নিতে হবে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন দৈনিক শনাক্ত নেমে এসেছে হাজারের নিচে। অতি সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবের পর এ যেন এক স্বস্তির বার্তা। তবে ডা. আলমগীর বলছেন, স্বস্তি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনও সুযোগ নেই। সংক্রমণের এই নিম্নমুখী হার অব্যাহত রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সঙ্গে নিতে হবে টিকা।

ডা. আলমগীর বলেন, ভাইরাসের ট্রান্সমিশন (সংক্রমণ ক্ষমতা) যেহেতু অনেক বেশি, পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় এই ভাইরাসের পরিবর্তন হতে পারে।

করোনাকে একটি অনবরত পরিবর্তনশীল ভাইরাস অভিহিত করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এর ভ্যারিয়েন্ট বদলে অতি সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে। সুতরাং, এখনও অসতর্ক হওয়া যাবে না। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাবধান থাকতে হবে। সেই সঙ্গে যাদের সুযোগ রয়েছে তাদের টিকা নিতে হবে।

‘টিকাও সংক্রমণ কমার অন্যতম উপায়, যদিও একমাত্র কখনোই নয়। টিকা নেওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে ধরে রাখা সম্ভব। নয়তো যেকোনও সময় এটা বেড়ে যেতে পারে’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমণের হার যদি পাঁচ শতাংশের নিচে দুই সপ্তাহ ধরে কোনও দেশে অব্যাহত থাকে; তাহলে সেই দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে গত ছয় দিন ধরে সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে। আগামী দুই সপ্তাহ যদি এটা বজায় থাকে তাহলে কি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এর আসলে তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

ডা. আলমগীর বলেন, পৃথিবীর বহু দেশেই সংক্রমণের হার তিন থেকে চার সপ্তাহ পাঁচের নিচে ছিল। কিন্তু এরপর আবার বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল ভিয়েতনাম। কিন্তু বর্তমানে যে কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বেশি তার মধ্যে ভিয়েতনাম একটি। আমেরিকাতেও সংক্রমণ অনেক বেশি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমাদের পার্শ্ববর্তী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনে প্রতিদিন অনেক মানুষ শনাক্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় ভাইরাসের পরিবর্তন হতে পারে। তাই এখন স্বাস্থ্যবিধির ওপরেই আসলে বিশেষ জোর রাখতে হবে।

এই বেড়ে যাওয়াটা কেন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যবিধিতে উদাসীনতা, ভাইরাসের বদলে যাওয়াসহ নানা কারণেই এটা হতে পারে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ডা. এএসএম আলমগীর। তিনি বলেন, সবাইকে টিকা নিতে হবে এবং টিকা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। যে টিকা আসে সেটাই নিতে হবে। কারণ, প্রতিটিই সমান কার্যকর।

আমাদের দেশে ফাইজার ও মডার্নার টিকা নিয়ে অনেকের মোহ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ভুল করছেন। টিকা নিয়ে কোনও ধরনের ফ্যাসিনেশন থাকাই যাবে না।’

কিন্তু এই বাছাই বা ফ্যাসিনেশনের পেছনে কোন টিকার কার্যকারিতা কতটুকু রয়েছে, সে হিসাবটাও সাধারণ মানুষ আমলে নিচ্ছেন জানালে তিনি বলেন, টিকার কার্যকারিতা শুধু অ্যান্টিবডি দেখে করা হয় না। এটার সায়েন্স জটিল। পৃথিবীর বহু দেশেই ‘নিউট্রিলাইজিং বা নিষ্ক্রিয়করণ অ্যান্টিবডি’ শূন্য কিন্তু টিকা কার্যকর।

ডা. এ এস এম আলমগীর আরও বলেন, এরসঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। সব মিলিয়ে টিকা কার্যকর হয়। কেবল অ্যান্টিবডি দেখে এই টিকা ভালো, এই টিকা খারাপ- এটা যারা বলছেন তারা ভুল বলেন।

টিকা নিয়েই যে সবাই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন এটা ঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, টিকা নেওয়ার পর ছোট ছোট স্যাম্পল নিয়ে যারা নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডির কথা বলে, এটাও ঠিক নয়। এতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

যেকোনও টিকার যদি শতকরা ৫০ শতাংশ কার্যকর হয়, তাইলেই সেই টিকা নেওয়া যায় এবং সেটাই মহামারি প্রতিরোধে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে—বলেন ডা. আলমগীর।

/এনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি