X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট-বড় মিলিয়ে একদিনে ছয় জনসভায় বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভৈরব রেল সেতু পুনর্নির্মাণের পর উদ্বোধনের উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালের এদিন বঙ্গবন্ধু ভৈরব যান। ভৈরব ও আখাউড়াসহ ছোট-বড় পথসভাসহ ছয় স্থানে বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু। সবক’টি সভায় সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতকারীদের ঠেকাতে আরও কঠোর হওয়ার বিষয়ে জনমত জানতে চাইলে উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একাত্মতা ব্যক্ত করেন।

 

ভৈরবের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারি

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন এক বিরাট জনসভায় ঘোষণা করেন, সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আঘাত হানা হবে। সেই আঘাত হানার সময় এসেছে বলেও জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, দুর্নীতিপরায়ণ, ঘুষখোর, রিলিফ চোর ও দুষ্কৃতকারীরা অমানুষ, এদের ধ্বংস করতে হবে।

ভৈরব সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। পথিমধ্যে টঙ্গী-ঘোড়াশাল ও নরসিংদীতে আয়োজিত জনসভায় বিশাল জনতার কাছে দুষ্কৃতকারী ও সমাজবিরোধীদের দমনে সরকারের দৃঢ়সংকল্পের কথা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। প্রতিটি জনসভায় জনতা তার প্রতি সমর্থন জানায়।

জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, সংশোধনের প্রচেষ্টাকে দুর্বৃত্তরা দুর্বলতা মনে করে। স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শুরুতেই কঠোর হতে চাননি। তিনি আশা করেছিলেন, দেশের মানুষ যেমন তার কথা শোনে, সেভাবেই দুষ্কৃতকারী ও সমাজবিরোধীরা অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত হবে। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাংলার মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না। গরিবের সম্পত্তিও নিরাপদ নয়। এবার কঠোর আঘাত হানতে হবে। এ কাজে মানুষের সহযোগিতা ও সমর্থন আছে কিনা, বঙ্গবন্ধু এমনটা জানতে চাইলে জনসাধারণ দুই হাত তুলে তাদের রায় জানায়।

তিনি বলেন, সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত জনতাকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। ভৈরবে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে হাজার হাজার সেতু নষ্ট করেছে, আজ সবক’টির পুনর্নির্মাণ ও মেরামত সমাপ্ত হলো। তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী যেভাবে ধ্বংস করেছে তা একদিনে ঠিক করে ফেলা সম্ভব নয়, সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, শত্রুদের ৫০ লাখ লোকের না খেয়ে মরার হিসাবকে আমরা মিথ্যা প্রমাণ করেছি। ২০ মাসে ৩৮ লাখ টন খাদ্য জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

দ্য অবজারভার, ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

‘প্রধানমন্ত্রীর জীবন কারাগারের জীবনের মতোই’

বঙ্গবন্ধু স্মরণ করেন, স্বাধীনতার পর আমাদের কোনও বৈদেশিক মুদ্রা ও গুদামে খাবার ছিল না। সবকিছুই বিদেশ থেকে আনতে হয়েছে। কিন্তু বেশি দিন বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল থাকা যাবে না। দেশে খাদ্য উৎপাদন ও কলকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলার মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করাই হলো আমার জীবনের সাধনা। দেশ গঠনের জন্য নিজেদের তৈরি করার আহ্বান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশে আজ স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে। ১১০টি দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়।

বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি সারা জীবন জনতার পাশে সংগ্রাম করেছেন। প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য রাজনীতি করেননি। বাংলাদেশের অবস্থাই তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিতে বাধ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রীর জীবন তার কাছে কারাগারের জীবনের মতোই লাগছে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শেখ মুজিব কোনোদিন দেশবাসীর সঙ্গে বেইমানি করেনি। ইয়াহিয়ার ফাঁসির কাষ্ঠ আমাকে বিচলিত করতে পারেনি। যতদিন বাঁচি, জনতার সঙ্গে আছি, থাকবো। আপনাদের ভালোবাসা নিয়েই যেন মরতে পারি দোয়া করবেন।’

ভৈরব সেতু নির্মাণে ভারত ও যুক্তরাজ্যের সাহায্য-সহযোগিতাকে অভিনন্দন জানান বঙ্গবন্ধু। ভারতীয় এবং বাংলাদেশের কর্মচারীদের কাজের প্রশংসাও করেন তিনি।

দৈনিক বাংলা, ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

ভৈরব সেতুর নাম বঙ্গবন্ধু সেতু রাখার প্রস্তাব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধু সেতু রাখার প্রস্তাব করে। এদিন আশুগঞ্জে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে প্রদত্ত মানপত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ এই প্রস্তাব করেন। বঙ্গবন্ধু এই জনসভায় ভাষণ দেন বলে এনার খবরে উল্লেখ করা হয়।

স্টেশনে ঢল

এদিন বিকাল তিনটার দিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিশেষ ট্রেনটি ভৈরব পৌঁছালে হাজার হাজার লোক তাকে স্বাগত জানায়। বিশেষ ট্রেনটি সকাল সাড়ে নয়টায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভৈরব যাত্রা করে। ৫৩ মাইল পাড়ি দিতে সময় লেগেছিল ৬ ঘণ্টা।

এদিন আশুগঞ্জে দুটি বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন। পথে পাঁচটি স্টেশনেও সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। সভাগুলোতে হাজার হাজার লোক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেন।

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ গিনেস বুকে ওঠানোর উদ্যোগ
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা
সর্বশেষ খবর
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া