X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

৮ দফতর ঘুরে তুলতে হয় স্নাতকের সাময়িক সনদ

শাহরিয়ার খান নোবেল, কুবি প্রতিনিধি
০৩ অক্টোবর ২০২১, ২০:৪১আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ২০:৪১

তীব্র রোদে কাগজপত্র হাতে ছোটাছুটি করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী মনির হোসেন রনি। সদ্য স্নাতক পাস করা রনির ছোটাছুটি স্নাতক ডিগ্রির সাময়িক সনদের জন্য। চার বছরের স্নাতক শেষে আট দফতর ঘুরে তিন দিনের মাথায় কাঙ্ক্ষিত সাময়িক সনদ পান রনি। শুধু রনি নন, সাময়িক সনদ হাতে পেতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সব শিক্ষার্থীকে এভাবে আট দফতরে ছোটাছুটি করতে হয়। অর্জনের আনন্দ ম্লান হয় ভোগান্তিতে।

মনির হোসেন রনি বলেন, ‘স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে স্নাতকের সনদ দরকার। সেটি তুলতে অসংখ্য দফতরে ঘুরতে হলো। গোটা দশেক স্বাক্ষর নিতে হলো সংশ্লিষ্টদের। তিন দিনের মাথায় এসে সনদ হাতে পেলাম। এটি খুবই কষ্টকর। সবকিছু আধুনিক হচ্ছে। সনদ উত্তোলনের প্রক্রিয়াটি আজো আধুনিক হলো না।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনদ উত্তোলনে ভোগান্তির শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শুরুতে জমা দেওয়া এসএসসি ও এইচএসসির মূল মার্কশিট উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কাজ। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট কিংবা সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মার্কশিট উত্তোলনের নির্ধারিত ফরম নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। এরপর জনতা ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ২০০ টাকা জমা দিয়ে, টাকা জমার রশিদ দেখিয়ে পূরণকৃত ফরমে বিভাগীয় প্রধানের সুপারিশ ও স্বাক্ষর নিতে হয়। এরপর মার্কশিট সংক্রান্ত শাখায় সুপারিশকৃত কাগজ দেখিয়ে সেগুলো উত্তোলন করতে হয়।

এরপর শুরু হয় স্নাতকের সনদ সংগ্রহের মূল কাজ। প্রথমে জনতা ব্যাংকে সনদ উত্তোলনের জন্য পাঁচ কপিবিশিষ্ট এক রশিদে বৃত্তান্ত লিখে ৮০০ টাকা জমা দিতে হয়। পরবর্তীতে ওয়েবসাইট থেকে স্নাতকের সনদ উত্তোলনের ফরম নিয়ে তা পূরণ করে যেতে হয় বিভাগে। ফরমের সঙ্গে যুক্ত করতে হয় উত্তোলনকৃত এসএসসি ও এইচএসসির মার্কশিটের ফটোকপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন কার্ড। এসব কাগজ নিয়ে বিভাগে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার সেই রশিদ দেখিয়ে ফরমে বিভাগীয় প্রধানের সিলমোহরসহ স্বাক্ষর নিতে হয়। সেই সঙ্গে ছবিও সত্যায়িত করে নিতে হয়।

বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর নেওয়া হয়ে গেলে ওই ফরম নিয়ে যেতে হয় প্রশাসনিক ভবনের অর্থ ও হিসাব দফতরে। তাদের স্বাক্ষর শেষে একে একে আইসিটি দফতর, রেজিস্ট্রার দফতর ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি কার্যালয়ের স্বাক্ষর নিতে হয়।

এরপর শুরু হয় হল সংক্রান্ত কাজ। প্রথমে প্রশাসনিক ভবনে থাকা হলের সেকশন অফিস থেকে আবাসিক না অনাবাসিক ছাড়পত্র নিতে হয়। সেটি পেলে কাগজপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীকে যেতে হয় তার নামে সংযুক্ত আবাসিক হলে।

এখানে পড়তে হয় নতুন বিড়ম্বনায়। সাধারণত আগের স্বাক্ষর সংগ্রহ ও অন্যান্য কাজ সারতে পুরোদিন লেগে যায়। বিকালের দিকে কাগজ নিয়ে হলে গেলে প্রাধ্যক্ষদের পাওয়া যায় না। ফলে পরদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্রাধ্যক্ষ কোনও কারণে ছুটিতে, প্রশিক্ষণে কিংবা একাডেমিক কাজে ব্যস্ত থাকলে অপেক্ষা আরও বাড়ে। 

সবশেষে প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর মিললে কাগজপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। সেখানে সাময়িক সনদ ছাপানো থাকলে দ্রুত পাওয়া যায়। আর তা না হলে অপেক্ষা করতে হয় আরও দুই-তিন দিন।

এসব ভোগান্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হাবিব বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবন থেকে স্নাতকের সনদ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিভাগকেন্দ্রিক করে দেওয়া উচিত। সনদের ফরমে আটটির মতো দফতরের স্বাক্ষর নিতে নিতে ২-৩ দিন ঘুরতে হয়। সেটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা দিলে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগে। বিভাগে কিংবা ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীর কোন দফতরে কত বকেয়া আছে সেই তথ্য থাকলে একসঙ্গে ব্যাংক ড্রাফট করে বিভাগে আবেদন করে সনদ তুলতে পারলে ভোগান্তি কমবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের সনদ তোলার জন্য আট দফতর ঘুরতে হয়। যা খুবই ভোগান্তির। নির্দিষ্ট দফতরে যদি লোক উপস্থিত না থাকে কিংবা ব্যস্ত থাকে তাহলে সনদ তোলার প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তো একই নিয়ম। এখন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া পরিবর্তনের নির্দেশনা আসেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘পরীক্ষা কিংবা রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সনদ লাগে। তখন নির্দিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে সনদের জন্য আবেদন করে। এ ছাড়া বাকি সময় একটা-দুইটা আবেদন আসে। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছি আমরা। একই নিয়ম সব জায়গায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব বিষয় দ্রুত করার জন্য আমরা এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফ্টওয়্যার কিনবো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে বাজেট পেয়েছি।’

/এএম/
সম্পর্কিত
রাজশাহীতে ঈদের আগেই বেপরোয়া কিশোর গ্যাং ও বাইকার পার্টি!
এবার এক লাফে ৬১.৩৪ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা
ফয়েল পেপার আটকে ঘণ্টাখানেক বন্ধ ছিল মেট্রোরেল
সর্বশেষ খবর
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!