X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩০০ কোটি টাকার বাঁধে ভাঙন, নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

মো. হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
০৫ অক্টোবর ২০২১, ২৩:০১আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ২৩:০১

খুলনার দাকোপের কালাবগিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টেকসই বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ১০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। এ জন্য কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিলীন।

যদিও ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জোয়ার-ভাটার টানে খুলনার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো ভয়াবহ ভাঙনের কবলে রয়েছে। নিয়মিত ভাঙছে। ১৯৬০ সালে নির্মিত এই অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলোর বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। প্রতিনিয়ত মেরামত ও সংস্কার করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। বরাদ্দ পেলেও বাঁধ মেরামত করা যাচ্ছে না।

দাকোপ উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব নেয় বিশ্বব্যাংক। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ না হতেই একই স্থানে দুবার ভাঙনের কবলে পড়েছে বেড়িবাঁধ। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ছয়টি স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেছে। ওই এলাকার নদীশাসনের জন্য চার কিলোমিটার এলাকা শনাক্ত করা হয়। যা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে।

জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে খুলনা ৩২ ও ৩৩ এবং বাগেরহাটের ৩৫/১ ও ৩৫/৩ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধ পুনরায় নির্মাণ চলছে। দাকোপের দুটি পোল্ডার এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু হস্তান্তরের আগেই বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ফলে কাজের মান নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, দাকোপের দুটি পোল্ডারের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কালাবগি এলাকায় একই স্থানে পাশাপাশি জায়গায় দুবার ভেঙেছে। নদী ভাঙনপ্রবণ ছয়টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ছয় স্থানের চার কিলোমিটার এলাকা নতুনভাবে নদীশাসনের আওতায় নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তারা এ জন্য নতুন করে বরাদ্দ দিয়ে চলমান প্রকল্পের আওতায় নদীশাসনের কাজ সম্পন্ন করবে। 

তিনি বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পেছন দিয়ে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেখানে জিওব্যাগ ও ডাম্পিং করে ভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি ২০০ মিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ কাজ দ্রুত শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে খুলনা ও বাগেরহাটের চার পোল্ডার এলাকার বেড়িবাঁধ পুনরায় নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজটি শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজ তদারকি করছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান দি ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অব হেনান কনজারভেশন।

দাকোপের বাসিন্দা মোস্তফা খান বলেন, ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডার এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের শুরুতে একরকম ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে বাঁধের উচ্চতা ও চওড়া ঠিক রাখা হয়নি। স্থানীয় লোকজন বাঁধ সম্পর্কে তথ্য জানতে কাউকে পাচ্ছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ডে এ বিষয়ে অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও জানানো হয়েছিল। এলাকাবাসী আগেই ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানায়। কিন্তু তা আমলে না নেওয়ায় নদী ভাঙতে শুরু করায় বাঁধ কোনও কাজে আসছে না বাঁধ। আমরা যেকোনো মূল্যে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই।

এদিকে, কালাবগিতে বেড়িবাঁধের ১০০ মিটার এলাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে। তাৎক্ষণিক পানি আটকানো সম্ভব হলেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি বাঁধ। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ২০০ মিটার টেকসই বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। নবনির্মিত বাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। কিন্তু তার আগেই বাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। ইতোমধ্যে একই স্থানে দুবার ভেঙেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ৩২ নম্বর পোল্ডারের আওতায় কালাবগির বৃহস্পতিবাজার এলাকায় ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে চলে যায়। ফলে রোপণকৃত আমন ফসল বাঁচাতে ইউনিয়নবাসীর মাঝে উদ্বেগ দেখা দেয়। ওই রাতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মাইকিং করে প্রায় চার শতাধিক শ্রমিক কাজ করে পানি আটকাতে সক্ষম হন।

ভাঙনের খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, জেলা পরিষদ সদস্য কবির হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির, চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা, ইউপি সদস্য নিমাই মন্ডল, মহসিন শেখ, মোন্তাজ সানা, আইয়ুব ঢালী, বেবী নাজনীন, খোকন ঢালী ও জাহিদ ফকির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু বিশ্বাস বলেন, ভাঙনের তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শ্রমিক লাগিয়ে কাজ করা হয়। একই সঙ্গে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পেছন থেকে বিকল্প বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাঁধের সুতারখালী ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ ঝুঁকিতে আছে।

জেলা পরিষদের সদস্য কবির হোসেন বলেন, কালাবগীর আমিনুর সানারবাড়ি, কালাবগী এইট ব্যান্ডের গেট থেকে নলিয়ান শাহাবুদ্দিন সানারবাড়ি, সরকারবাড়ি, জালাল গাজীর কল গৈ ও লতিফ সানার কল গৈ এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে আছে। 

/এএম/
সম্পর্কিত
অসময়ে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্রের পাড়, দুশ্চিন্তায় স্থানীয়রা
নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা বালুতে পৌরসভার চত্বর তৈরি করছেন প্যানেল মেয়র
অসময়ে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে এলাকাবাসী
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা