X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনি সংকট নিরসনে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের দাবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ অক্টোবর ২০২১, ২১:৪১আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ২১:৫৩

দেশে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিদ্যমান সংকট নিরসনে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের দাবি জানিয়েছেন অদলীয় রাজনৈতিক সামাজিক মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভার বক্তারা।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে 'নির্বাচন কমিশন গঠনে পূর্ণাঙ্গ আইনের প্রয়োজনীয়তা ও রূপরেখা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন দাবি ওঠে।

লিখিত বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদের একটি ভূমিকা থাকতে হবে। আইনে নির্বাচন কমিশনে সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি সুস্পষ্ট করতে হবে, যাতে সঠিক ব্যক্তিরা নিয়োগ পান। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, ভারত ছাড়া নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানে সংবিধানের আলোকে প্রণীত আইনে প্রতিষ্ঠিত কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। এই অঞ্চলের ছোট কিন্তু ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক দেশ ভুটানেও সব সাংবিধানিক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানের আওতাধীন আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব সাংবিধানিক পদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার অন্যতম। এসব পদে নির্বাচনের জন্য একটি পর্ষদ রয়েছে। এই পর্ষদের নেতৃত্বে রয়েছেন সংসদের উচ্চকক্ষ ন্যাশনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও বিরোধী দলের নেতা। প্রাপ্ত সব নাম পর্যালোচনা করে এই পর্ষদ তাদের নির্বাচিত নামের তালিকা ‘ড্রুক গিলারপোর’ (ভুটানের রাজা) কাছে পাঠায়। রাজার মাধ্যমে গঠিত হয় নির্বাচন কমিশন। এর নিয়োগ পদ্ধতি স্বচ্ছ বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত।

সভাপতির বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরু বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ থাকলে আজকে বাংলাদেশে অনেক প্রশ্ন উঠতো না। আমরা চাই বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সেই সংকট সমাধান হোক।

তিনি বলেন, দেশে যারা নীতি প্রণয়ন করেন তারা নীতি সঞ্চালন করেন না। যারা নীতি প্রণয়ন ও সঞ্চালনকারীদের সমন্বয় করার জন্য জাতীয় সংসদের দুটি কক্ষ দরকার।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মঞ্চের সদস্য সচিব অয়ন আমান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শুধু শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দল ও অদলীয় রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তির মধ্যে সাংবিধানিক সমঝোতা, রাজনৈতিক সমঝোতা। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শ্রম-কর্ম-পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা আবশ্যিক। সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধানের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী ও সাংবিধানিক সমাধান সম্ভব।

মূল প্রবন্ধে রূপরেখা হিসেবে ১৪ দফা প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ‑ অদলীয় শ্রম-কর্ম-পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংসদের 'উচ্চকক্ষ' গঠন করতে হবে।  নির্বাচন কমিশন হবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন সংস্থা। সংসদের 'উচ্চকক্ষ' থেকে 'নির্বাচনকালীন সরকার' ও 'নির্বাচন কমিশন' গঠিত হবে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত সাংবিধানিক সত্ত্বা নিয়ে স্থায়ীভাবে নিয়োজিত থাকবে।  জেলা, মহানগর, পৌরসভা, শিল্প এলাকা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনার থাকবে। নির্বাচন কমিশন একবার গঠিত হওয়ার পর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ অথবা জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বহাল থাকবে। নির্বাচন কমিশন আধা-বিচার বিভাগীয় বলে গণ্য হবে।

প্রস্তাবে বলা হয় ‑ কেন্দ্র, মহানগর, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং শিল্প এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব অফিস, কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবে; এর জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ থাকবে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থাকবে।

মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির হিরুর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও অঙ্কুর প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব আব্দুস সালাম মিয়া, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, সামাজিক শক্তির আহ্বায়ক হাবীবুল্লাহ, অধ্যক্ষ বাকী উল্লাহ, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি এম এ আউয়াল, মঞ্চের অন্যতম মোশাররফ হোসেন, মোশারেফ হোসেন মন্টু, সাকিল সৈকত, রায়হান তানভীর প্রমুখ।

/ইএইচএস/এমএস/
সম্পর্কিত
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
সর্বশেষ খবর
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা
প্রস্তুত বলী খেলার মঞ্চ, বসেছে মেলা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা