X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহ্যের ডাকে নীলসাগর ও তিস্তার পাড়ে কিছুক্ষণ

নীলফামারী প্রতিনিধি
১৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৩আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৩

এবারের শারদীয় দূর্গা পুজায় অনেকেই ঘুরতে গেছেন সীমান্তঘেঁষা উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। প্রকৃতিপ্রেমীরা কিন্তু সবার আগেই ছুট দিয়েছেন নীলসাগরের দিকে। বিন্নাদিঘী নামেও ডাকে অনেকে।

সাগরের সঙ্গে মিলিয়ে নাম নীলসাগর। এর গভীরতা নিয়েও আছে অনেক গল্প। আজও নাকি কেউ এ দিঘীর গভীরতা মাপতে পারেনি! তবে ধারণা করা হয়, ৭০-৭৫ ফুট গভীর তো হবে। নীলসাগরের চারপাশ বৃক্ষরাজি ও তরুলতায় ঘেরা। সুউচ্চ পাড়বেষ্টিত বেতবন আর গুল্মলতা। শীতে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখর থাকে নীলসাগরের পাড়।

দিঘীর আয়তন প্রায় ৫৪ একর। জনশ্রুতি আছে, ২০০ বছর আগে এক রাজা স্থানীয় গৃহপালিত পশুদের পানি পানের কথা ভেবে দিঘীটি খনন করেন।

আর সনাতন ধর্মাম্বলীদের মতে, মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মারা গেলে তার শেষকৃত্য হয় এ দিঘীর পাড়ে। অনেকের ধারণা, রাজার একমাত্র কন্যা বিন্নাবতীর গোসলের জন্য এটি খনন করা হয়। এ জন্যই বিন্নাদিঘি নাম পেয়েছে এটি।

১৯৮০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ দিঘীর সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন। তখন তিনি এর আনুষ্ঠানিক নাম দেন নীলসাগর। বিনোদন কেন্দ্রটি জেলা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নীলফামারী-দেবিগঞ্জ-পঞ্চগড় সড়কের পাশে।

নীল-সাগর-২

প্রধান শহর থেকে ভ্যান, আটোরিকশা, বাস ও ট্রেন যোগাযোগের সুব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি আকাশপথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে বাস বা ট্রেনে সহজেই আসা যায়। শহরে পাবেন মানসম্পন্ন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ দিঘীতে মাছ ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। এক হাজার টাকার টিকিট কিনে মাছ শিকার করতে পারবেন যে কেউ। শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা বিনোদনের ব্যবস্থা। পর্যটকদের আবাসিক সুবিধাসহ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আছে নীলফামারীর জাদুঘর।

নয়নাভিরাম তিস্তা ব্যারেজ

তিস্তা বাংলাদেশের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্র‏হ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিস্তা নদীর দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১১৫ কিলোমিটার লালমনিরহাটে পড়েছে। দর্শনীয় ব্যারেজটি তিস্তা সেচ প্রকল্পের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বৃহত্তম সেচ প্রকল্প।

প্রকল্পটি নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। খরা মৌসুমে কৃষকরা সেচ দিয়ে থাকে। অঞ্চলটিতে খরা লেগে থাকায় ১৯৩৭ সালে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে মূল পরিকল্পনা হয় ১৯৫৩ সালে।

ব্যারেজ এলাকা প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর থাকে। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও বগুড়া থেকে স্থানীয় পর্যটকরা প্রতিদিনই আসেন এখানে। এখানে আছে ৫২টি স্লুইস গেট। এর মধ্যে মূল জলকপাট রয়েছে ৪৪টি।

নীলকুঠি

নীলসাগর ছাড়িয়ে নীলফামারী ঘুরলে পাবেন ব্রিটিশ আমলের নীলকুঠিও। কৃষক বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ নীলফামারীর ইতিহাসে অন্যতম অধ্যায়। ১৮০০ সালে জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে নটখানায় নীলচাষের একটি বড় খামার ছিল।

ঐতিহ্যের ডাকে নীলসাগর ও তিস্তার পাড়ে কিছুক্ষণ

১৮৫৯-৬০ সালে কৃষকদের ব্যাপক আন্দোলনের ফলে নীলচাষ বন্ধ হয়। সে সময় এলাকা ছেড়ে নীলকররা পালিয়ে যায়। নীলখামার থেকেই আজকের নীলফামারী। আজও সেই নীলকুঠি দেখতে আসে ইতিহাসপ্রেমীরা।

জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা, বুড়িতিস্তা, বুড়িখোড়া, ইছামতি, চাঁড়ালকাটা, সর্বমঙ্গলা, যমুনাশ্বরী, সালকী, কুমলাই নদ-নদী। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, জেলা শহরের উপকেন্দ্রে সর্বমঙ্গলার তীরে ছিল শাখা ও মাছা নামের দুটি বন্দর। ওই বন্দর থেকে নীলকরদের মালামাল আমদানি-রফতানি হতো।

১৮৭৫ সালের ১৮ মে জেলার ডিমলায় বাগডোকরা নামক স্থানে প্রথম মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৮২ সালের ১৯ মে মহকুমা স্থানান্তর করে বর্তমান জেলা প্রশাসকের বাসভবন সংলগ্ন সুউচ্চ টিনের ভবনটিকে মহকুমা দফতর বানানো হয়। এখনও ঘরটির ছবি তুলতে আসেন আলোকচিত্রীরা।

নীলফামারীতে ঘুরে দেখার মতো আরও আছে কুন্দুপকুর মাজার, ঢেলা পীরের মাজার, সৈয়দপুরের চিনিমসজিদ, পুরনো গির্জা, ভিমের মায়ের চুলা, হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি, ৮০০ বছর আগের আঙ্গারপাড়া জামে মসজিদ, প্রতীকী কারবালা ও ধর্মপালের গড়। জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে আছে কুন্দুপকুর মাজার। এ এলাকায় ইসলাম প্রচার করতে আসা সুফি হযরত মীর মহিউদ্দিন চিশতি (রঃ) এর মাজার এটি।

৩০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে মাজার ও সংলগ্ন বিশাল পুকুর। প্রতিবছর মাঘের ৫ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী এখানে ওরস অনুষ্ঠিত হয়।

চিনি মসজিদ

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৌন্দের্যের অপার সমন্বয় ঘটেছে সৈয়দপুর শহরে গোলাহাটের চিনি মসজিদে। ৩টি বড় গম্বুজ ও ৩২টি মিনারের মসজিদটি উজ্জ্বল পাথরে আবৃত। চিনামাটির টুকরায় বিভিন্ন ফুল ও গাছের নকশা ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়ে।

ঐতিহ্যের ডাকে নীলসাগর ও তিস্তার পাড়ে কিছুক্ষণ

১৮৬৮ সালে উপজেলার গোলাহাট এলাকায় বানানো হয় মসজিদটি। শুরুতে ছিল দোতলা টিনের ঘর। ১৯২০ সালে এলাকার হাজী হাফেজ আব্দুল করিম মসজিদটি পাকা করার উদ্যোগ নেন।

১৯৬৫ সালে এর দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। ভারত থেকে আনা ২৪৩টি শংকর ও মর্মর পাথর ব্যবহার করা হয় এ মসজিদে। পাশেই আছে শত বছরের পুরনো গির্জা। ধারণা করা হয় এটি উত্তরাঞ্চলের প্রথম এবং প্রাচীনতম গির্জা। এ ছাড়াও দেখা যাবে পাল রাজার বাড়ি ও দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা।

/এফএ/ইউএস/
সম্পর্কিত
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
আলেকজান্ডার মেঘনা পাড় যেন আরেক কক্সবাজার
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লাখ পর্যটক, হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ভোগান্তি
সর্বশেষ খবর
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ