X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

কী এমন ডিপ্রেশনে ছিলেন ডা. জয়দেব

রিয়াদ তালুকদার
১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০২আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২১, ১৬:০৩

কী এমন ডিপ্রেশনে ছিলেন ডা. জয়দেব চন্দ্র দাস- যে কারণে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি কি কোনও অপরাধবোধ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, নাকি আছে অন্য কোনও কারণ; এসব বিষয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে। এরমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত, এমনকি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া এসব বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রমাটাইজড হয়ে যাওয়ায় ঘটছে এধরনের আত্মহত্যার মতো ঘটনা।

সিআইডি এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার ১৬ অক্টোবর রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জ ২ নম্বরের ১৫ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসার ৮ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা চিকিৎসক জয়দেব চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মৃতদেহের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়। সুইসাইড নোটটি আসলেই তার লেখা কিনা তার জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সুইসাইড নোটের বিষয়ে কোনও তথ্য না জানালেও সংশ্লিষ্টরা জানান, সুইসাইড নোট বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে- কোনও একটি কাজের অপরাধবোধ থেকেই এধরনের ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন। এ বিষয়টি সামনে রেখে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি তদন্ত করছি। তবে যেহেতু তিনি একজন চিকিৎসক, তিনি ভালো করেই জানতেন কোন ওষুধে কী ধরনের কার্যকারিতা রয়েছে। 

স্বজনরা জানায়, সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে গত বছর এমবিবিএস পাস করেন ডা. জয়দেব কুমার দাস। ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ ধরনের আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবেন- এটা তাদের ধারণায় নেই। তবে কী এমন ঘটনা ঘটেছে, যে কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন; এ নিয়েও প্রশ্ন স্বজনদের মাঝে। ‘হাসিখুশি থাকা ছেলেটা’ আত্মহত্যা করবে তা কখনো ভাবতেই পারেননি তারা। কখনও কোনও বিষয়ে কারও সঙ্গে শেয়ারও করেননি ডা. জয়দেব কুমার দাস, দাবি পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের।

মৃতের খালাতো ভাই দয়াল চন্দ্র দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডাক্তার জয়দেব চন্দ্র দাস আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবেন- এটা আমাদের ধারণাতেই ছিল না। এছাড়া কোনও ধরনের মানসিক কিংবা পারিবারিক সমস্যা ছিল কিনা- এ বিষয়গুলো আমাদের সাথে কোন কিছু শেয়ার করেনি। সে সব সময় হাসিখুশি থাকতো, তার কোনও সমস্যা চলছে- সেটা বোঝার উপায়ও ছিল না।

ডা. জয়দেব চন্দ্র দাসের বন্ধু চিকিৎসক প্রান্ত মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সে আত্মহত্যা করেছে না হত্যার শিকার হয়েছে- এ বিষয়টি তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত নিয়েছে। তদন্ত এবং ফরেনসিক সম্পন্ন হলে ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। তবে এ বিষয়ে এটাই বলতে চাই, আত্মহত্যা করার মতো ছেলে সে ছিল না। আর কখনও কোনও ধরনের ডিপ্রেশন কিংবা পারিবারিক সমস্যার কোনও কিছু আমাদের সাথে শেয়ারও করেনি। তার সাথে আমার কথা গত ১৪ অক্টোবর দেখা হয় এবং আমার বাসায় এসে দুপুরে খাবার খায় এবং রাতের জন্য নিয়েও যায়। ১৫ অক্টোবর তাকে ফোন দিলে সে কোনও রেসপন্স করেনি। ১৭ অক্টোবর (রবিবার) সকালে জানতে পারি তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

খিলক্ষেত থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাসেল পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা দরজার লক ভেঙে শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে বাসা থেকে ডা. জয়দেব কুমার দাসের মরদেহ উদ্ধার করি। ঘটনাস্থল থেকে সুইসাইডাল নোট, ইনজেকশনের সিরিঞ্জসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে খিলক্ষেত থানায়।

এ ধরনের ‘আত্মহত্যা’র ঘটনা কী কারণে ঘটতে পারে- বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ ধরনের আত্মহত্যার ক্ষেত্রে তিনটি বিশেষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। প্রথমটি হল ব্যক্তি যখন চারপাশের সম্পর্ক থেকে এক ধরনের অবহেলার শিকার হয়, তার উপস্থিতি এবং ভূমিকা অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, যখন নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করে তখন আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত যখন কোনও একজন ব্যক্তি সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী উপার্জন-সম্মান-মর্যাদা-সম্পদ; এই জায়গাগুলো সমাজ প্রত্যাশিত তার বয়সের সাথে মিল রেখে তৈরি করতে পারে না, এজন্য সে যাদের সাথে সম্পর্কিত, তাদের কাছ থেকে কটাক্ষ করে কথা শুনতে হয় তখন ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। জীবন ‘রাখা-না রাখার’ পশ্নে না রাখার পক্ষে নিজেকে দাঁড় করিয়ে ফেলে। তৃতীয়ত যদি একজন মানুষের মধ্যে আবেগীয় যৌক্তিকতা সঠিকভাবে তৈরি না হয়, অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যদি সমাজ বাস্তবতা বিচার-বিশ্লেষণ করে চলার মতো সঠিক সিদ্ধান্ত, সে সিদ্ধান্ত যদি ওনার থাকতে না পারে, তখনই এই সমস্ত ব্যক্তিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এক গবেষণা এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরে তৌহিদুল হক বলেন, শতকরা ৮৬ ভাগ লোক আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে। এর মধ্যে ১৩ ভাগ লোক আত্মহত্যা করে। বাকিরা করতে পারে না, কারণ আত্মহত্যার জন্য সাহসের দরকার হয়। আত্মহত্যার জন্য সাহস সবচেয়ে জরুরি। তবে ১৩ ভাগ লোক যে কারণে আত্মহত্যা করে তারা বেশিরভাগই ট্রমাটাইজড হয়ে যায়।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো ইউপি সদস্যের
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো ইউপি সদস্যের
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
আট বছর পর জাবিতে ডিন নির্বাচন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা