X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি তার নাগরিকের চাহিদা পূরণে সক্ষম’

বিদেশ ডেস্ক
২০ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৫৯আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৫৯

মৌলিক অধিকার এবং আইনের শাসনের মতো বিষয়গুলো যেনও আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন। ‘ফেসেস অব ডেমোক্র্যাসি’ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা ভেন লিলিয়েনস্ট্রম-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

ড. উরসুলা ভন ডার লেইন ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট। তিনিই এই কমিশনের প্রথম কোনও নারী প্রেসিডেন্ট। ৬৩ বছরের সিডিইউ সমর্থিত এই রাজনীতিক পূর্বে জার্মানির ফেডারেল প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। সাক্ষাৎকারে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ইউরোপের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এবং ইউরোপ কেন পৃথিবীতে বসবাসের জন্য সেরা জায়গা এসব নিয়ে কথা বলেছেন উরসুলা ভন ডার লেইন। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: ড. উরসুলা ভন ডার লেইন, আপনি ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট। প্রথম প্রশ্নটি আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই: ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: আমি কে এবং আমি কী বিশ্বাস করি সেটি শুধু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেই নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। আমি একটি বিভক্ত দেশে বড় হয়েছি; যখন পশ্চিম জার্মানিতে ছাত্র ছিলাম, পূর্ব জার্মানি ছিল স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে। আমি জানতাম যে, প্রাচীরের ওপারে আমার বয়সী মানুষেরা তাদের মনের কথা বলতে পারছে না, তাদের বিক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ নেই। আমি জানতাম যে, আমার মা-বাবাও যৌবনে স্বৈরশাসনের অধীনে বসবাস করেছিলেন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং সত্যিকারের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমি একটি সৌভাগ্যবান প্রজন্মে জন্মগ্রহণ করেছি। এজন্য সবসময় নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। আমি এটাও শিখেছি যে, গণতন্ত্র এমন একটি বীজ যা প্রতিটি প্রজন্মকে লালন করতে হয়। গণতন্ত্রকে রক্ষা করা এবং এর উন্নতি করা আমাদের দায়িত্ব।

প্রশ্ন: সংকটগুলো ক্রমশ গণতন্ত্রের জন্য চাপের হয়ে উঠছে- এমনকি ইউরোপেও। ভবিষ্যতে আমাদের মহাদেশ কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কি আসলেই বিষয়গুলোকে কার্যকরভাবে সামাল দিতে সক্ষম?

উত্তর: মহামারি সম্পর্কে আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে যে, একটি গণতান্ত্রিক ঐক্য তার নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কী অর্জন করেছি তা খেয়াল করুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৭৫ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পূর্ণ ডোজ টিকা পেয়েছে। ভ্যাকসিনগুলো সম্মিলিতভাবে সংগ্রহ করে, আমরা নিশ্চিত করেছি যেনও সব ইউরোপীয় দেশ  সমান সুযোগ পায়। ইতোমধ্যে, আমরা ইউরোপীয়দের কাছে যত ভ্যাকসিন রফতানি করেছি- তাতে এটি বিশ্বের ফার্মেসি হয়ে উঠছে। কোনও স্বৈরাচারী এমন ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। একই কথা প্রযোজ্য আমাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা ও ইউরোপীয় সবুজ চুক্তির ক্ষেত্রে।

গণতন্ত্র যে কোনও চ্যালেঞ্জকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারে। কারণ গণতন্ত্রে নাগরিকরা তাদের সব শক্তি ও সৃজনশীলতার সঙ্গে সংকট সমাধানে অবদান রাখে। কারণ গণতন্ত্র হলো আমরা যা তৈরি করি। প্রতিটি দিনই একটি নতুন দিন।

প্রশ্ন: “ফিট ফর ৫৫”: ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউ তার কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। ইউরোপের ‘ম্যান অন দ্য মুন মোমেন্ট’ ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু নিরপেক্ষ মহাদেশের জন্য সবুজ চুক্তির পথে। ইউরোপ কতটা সবুজ হবে?

উত্তর: ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ইউরোপ হবে প্রথম জলবায়ু নিরপেক্ষ মহাদেশ। আমরা আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সমন্বয় করতে চাই। আমাদের এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি রোডম্যাপ আছে। আমাদের শূন্য-নির্গমনকারী গাড়ির একটি রোডম্যাপ আছে। পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎপাদন বাড়ানোর রোডম্যাপ রয়েছে। আমাদের একটি সামাজিক জলবায়ু তহবিল আছে, যা দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবারকে জ্বালানি বিল থেকে অব্যাহতি দেবে।

প্রশ্ন: ‘ইউরোপিয়ান ডেমোক্র্যাসি অ্যাকশন প্ল্যান’-এর মাধ্যমে ইইউ কমিশন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বহুত্ববাদকে জোরদার করতে এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রতিহত করতে চায়। ইউরোপে গণতন্ত্রের জন্য ফেক নিউজ কতটা বিপজ্জনক?

উত্তর: মহামারি দেখিয়েছে যে, আক্ষরিক অর্থেই গুজবের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে হতে পারে। তথ্য একটি জনস্বার্থ: আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের অর্থনীতি এবং আমাদের গণতন্ত্রের কার্যকারিতা এর উপর নির্ভর করে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আরও কিছু করতে হবে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, তারা আমাদের ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্টের মাধ্যমে এবং ভুল তথ্যের উপর একটি শক্তিশালী অনুশীলনের নীতিমালা আহ্বান করে। গত মাসে, আমরা সাংবাদিকদের আরও ভালো সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একটি সুপারিশ পেশ করেছিলাম এবং ‘মিডিয়া ফ্রিডম অ্যাক্ট’ ঘোষণা করেছিলাম। কারণ তথ্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত থাকলেই গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হতে পারে।

প্রশ্ন: কিওয়ার্ড ‘জেন্ডার ডাইভারসিটি’: আপনি ইইউ কমিশনের প্রথম নারী নেতা, কমলা হ্যারিস প্রথম নারী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমাদের কি নারী কোটা দরকার এবং এই ধরনের কোটা কি সত্যিই অধিকতর সমতা প্রদান করবে?

উত্তর: আমাদের এমন একটি ব্যবস্থার জন্য সংগ্রাম করতে হবে যেখানে নারীরা সব সময় শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। এর জন্য প্রথম পদক্ষেপ নারী ও পুরুষদের সমান সুযোগ দেওয়া। এজন্য, আমরা সব মেয়ে ও নারীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে, মা ও বাবার জন্য সমানভাবে পিতা-মাতার ছুটি নিশ্চিত করতে, নারীদের সমান বেতনের গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে এবং শিশু যত্নকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা একটি শিশু গ্যারান্টি তৈরি করেছি, যাতে অভাবগ্রস্ত শিশুদের শৈশবকালীন যত্ন এবং শিক্ষার জন্য কার্যকর ও বিনামূল্যে সুযোগ থাকে। সব সামাজিক পটভূমি থেকে পিতামাতাদের তাদের সন্তানদের শিশু যত্ন এবং স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হওয়া উচিত। এটি নারীর ক্ষমতায়ন এবং এটি সবচেয়ে মৌলিক বিষয়। ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি হিসেবে আমি একটি দল তৈরি করেছি যা সম্পূর্ণ লিঙ্গ ভারসাম্যপূর্ণ। তবুও আজ শীর্ষ কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে নারীদের হার সাত শতাংশেরও কম। তাই হ্যাঁ, কয়েক বছর আগে জার্মানিতে আমি বোর্ডে নারীদের জন্য কোটা চেয়েছিলাম। এটা কাজে দেয়। স্পষ্টতই, আমাদের কোম্পানি ও সংস্থাগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং নারীদের তাদের ন্যায্য সুযোগ দিতে হবে। আমাদের অর্ধেক মেধাকে আমরা নেতৃত্বের পদ থেকে বাদ দিতে পারি না।

প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্ম একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ ইউরোপকে স্বাভাবিকত্বের মোড়কে গ্রহণ করে। আমরা কীভাবে তরুণদের ইউরোপীয় ধারণা সম্পর্কে উৎসাহিত করতে পারি। অথবা অন্য কোনও উপায়ে জানতে চাইতে পারি: ইউরোপ কেন ‘সুন্দর’?

উত্তর: ইউরোপ পুরো দুনিয়াতে বসবাসের জন্য সেরা জায়গা। বিশ্বের অন্য কোনও স্থানে তরুণরা পড়াশোনা, ভ্রমণ, উদ্যোক্তা হওয়ার এবং একই সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার একই সুযোগ উপভোগ করে না। অন্য কোনও স্থানে তরুণরা এতো বিস্তৃত অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করে না। এটাই আমাদের পরিচয় বলে দেয়। এই কারণেই মৌলিক অধিকার এবং আইনের শাসনের আঘাতের সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইউরোপকে সব সময় এমন একটি জায়গা থাকতে হবে যেখানে বাক স্বাধীনতা পবিত্র, যেখানে আইনের সামনে সবাই সমান এবং যেখানে প্রত্যেকে যাকে খুশি তাকে ভালোবাসতে পারে।

প্রশ্ন: ড. উরসুলা, আমাদের শেষ প্রশ্নটি সব সময়ই একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন হয়ে থাকে। আপনি কোন স্থানকে আপনার নিজের বাড়ি মনে করেন? বেলজিয়াম, জার্মানি নাকি পুরো ইউরোপ?

উত্তর: আমি ব্রাসেলসে জন্মেছি এবং বড় হয়েছি। আমি আমার কিশোর বয়স এবং রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময় জার্মানিতে কাটিয়েছি। আমি এই দুইটি জায়গায় নিজের বাড়ি অনুভব করি। ইউরোপ আমার আকাঙ্ক্ষা এবং আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন প্রকৃত নাগরিক। কিন্তু চূড়ান্তভাবে, বাড়ি হচ্ছে সেখানে যেখানে আমার পরিবার। আমি এখন বেলজিয়ামে থাকি। আমার পরিবারের সদস্যরা জার্মানি এবং ইউরোপজুড়ে। লকডাউনের সময় আমরা প্রতি সপ্তাহে ভার্চুয়লি দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সবাই একসঙ্গে থাকার মতো অবস্থা নেই। সত্যিকার অর্থে যেখানে পারিবারিক পুনর্মিলন ঘটে সেটাকেই আমি বাড়ি বলে অনুভব করি!

 

/এমপি/ইউআই/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী