পাপ কাটাতে সমবেত প্রার্থনা আর ফানুস ওড়ানোর মধ্যদিয়ে বুধবার (২০ অক্টোবর) রাত থেকে উদযাপন হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বা মাহাওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। নানা আয়োজনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শহর ও পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে অন্যতম এ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। উৎসব উপলক্ষে প্রাণিজগতের মঙ্গল কামনায় জাদিতে জাদিতে চলছে বিশেষ প্রার্থনা। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে সাংগু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে প্রবারণা উৎসব।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, আষাঢ়ের পূর্ণিমার পরের দিন থেকে টানা তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ নর-নারীরা বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও দশশীল গ্রহণ করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার সময় সব অহিংসা ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মন্ত্রে দীক্ষিত হন তারা। তাদের মতে, প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্ধার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল। আর তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে এ দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে আজও।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সিদ্ধার্থ গৌতমবুদ্ধ মাথার এক গুচ্ছ চুল কেটে বলেছিলেন, তিনি যদি সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত হন, তবে চুল যেন নিচে না পড়ে উপরের দিকে উঠে যায়। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চুলগুচ্ছ নিচে মাটিতে না পড়ে আকাশে উড়ে গিয়েছিল। তাই বুদ্ধের কেশধাতুর পূজার অংশ হিসেবে আকাশে ফানুস ওড়ানো হয়। তাদের বিশ্বাস, এই ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে তাদের পাপও আকাশে উড়ে যায়।
মারমা সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় গুরুদের খাবার দেওয়া, ফানুস ওড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা তৈরি, হাজারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রথযাত্রা ও সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবারণা উৎসবকে ঘিরে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা নতুন পোশাকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ক্যায়ংয়ে গিয়ে উড়াচ্ছেন ফানুস। আবার কেউ পাপ মোচনে প্রার্থনায় মগ্ন।
মারমা তরুণী উমেপ্রু জানান, তিন মাস বর্ষাবাস (উপবাস) পালনের পর সবাই সমবেতভাবে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করছেন। বর্ষাবাসের সময় তারা কোনও প্রাণিজ খাবার গ্রহণ করেননি।
বান্দরবানের জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে (ধর্মীয় গুরু) সত্যজিৎ থের জানান, শত শত বছর ধরে মারমা সম্প্রদায় এ সামাজিক উৎসব পালন করে আসছে। গৌতম বুদ্ধ এ দিনে আকাশে চুল উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই মারমা সম্প্রদায় বিশ্বাস করে, এ দিনে ফানুস উড়ালে তাদের পাপমোচন হবে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, বিহারে বিহারে উৎসব উপলক্ষে দেওয়া হয় ধর্মীয় দেশনা। জগতের সব প্রাণীর মঙ্গল কামনায় করা হয় বিশেষ প্রার্থনা। জগতের সুখ শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় জড়ো হয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। মোমবাতি, আগরবাতি প্রজ্জ্বলন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের খাবার) দান করে দিনটি পালন করেন সবাই।
বান্দরবান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লা এ মং মারমা জানান, বান্দরবান পৌর এলাকায় একটি বড় ও একটি ছোট মোট দুটি ক্যায়ংসহ জেলাজুড়ে প্রতিটি ক্যায়ংয়ে প্রবারণা উৎসব চলছে। দুই দিনব্যাপী এ প্রবারণা পূর্ণিমায় নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) মধ্যরাতে সাংগু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব।