কেউ যাতে মাল্টায় আসতে গিয়ে প্রতারণার শিকার না হন এবং সঠিক নিয়ম অনুযায়ী তারা মাল্টায় আসতে পারেন, সেই লক্ষ্যেনকাজ করে যাবে জানিয়েছেন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন-আয়েবা’র মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বৈধভাবে মাল্টায় আসার এই সুযোগ নিতে পারেন বাংলাদেশিরা। যোগ্যতা প্রমাণের পর অনুসঙ্গিক ফাইল চার্জসহ যাতায়ত ভাড়া সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা লাগতে পারে। এর বেশি টাকা দিয়ে আসার কোনও কারণ নেই।’
শনিবার (২৩ জুলাই) প্যারিসে আয়েবার প্রধান কার্যালয়ে ইউরোপসহ মাল্টায় বৈধ শ্রমবাজার ও নিরাপদ অভিবাসনের লক্ষ্যে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে আয়েবার নেতারা এ কথা বলেন।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ফখরুল আকম সেলিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ।
ফখরুল আকম সেলিম বলেন, ‘বিগত দিনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের অনৈতিক কার্যকলাপের ফলে সেই সুযোগগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। তাই মাল্টায় এখন দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন কোনোভাবেই আবারেওে একই অসাধু চক্রের কারণে হাতছাড়া না হয়।’
কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মালটায় যে ১৬৫ বাংলাদেশি জেলবন্দি রয়েছেন, তাদের মুক্তির ব্যাপারেও আয়েবা উদ্যোগ নিয়েছে। মাল্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখ্য সচিব কেবিন মাহনে ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দির্ঘ আলোচনার পর স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কারাবন্দিকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেছে এবং তাদের দেশে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। তারপরও আয়েবা’র নিয়োগপ্রাপ্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী কালেয়ার পক্ষে মাল্টার সাংবিধানিক আদালতে মামলা করে কারাবন্দিদের মুক্ত করা সম্ভব ছিল। তবে সেটা হতো একটা ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।’
বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রায় ২০ হাজারের বেশি দক্ষ শ্রমিক মাল্টায় আসার সুযোগ রয়েছে। ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, সুইপার, রেস্টুরেন্ট এবং ট্যুরিজম খাতে কাজ করতে সক্ষম— মাল্টায় এমন শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। তবে তাদের অবশ্যই ইংরেরি ভাষার ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাল্টার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন, আয়েবাও চাইলে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে আয়েবা যেহেতু একটি অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, তাই তারা এ ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত হতে পারবে না।’
এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘মাল্টা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই চায় না যে, দালালদের বেশি টাকা দিয়ে অযোগ্য লোকজন তাদের দেশে এসে পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে যাক। এ বিষয়ে এবার মাল্টা সরকার খুবই কঠোর। করোনা মহামারির সঙ্গে নানা ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সামাজিক অসন্তোষ ও বর্ণবাদী দলগুলোর উত্থান সব দেশের সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে কোনেও পরামর্শ জানতে চাইলে যে কেউ আয়েবা’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাল্টা এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নেও আয়েবা তার ভূমিকা পালন করবে। দেশটিতে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশি কমিউনিটি গঠনে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন- আয়েবা তার ভূমিকা পালন করবে।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আয়েবা এক্সিকিউটিভ শরীফ আল মমিন, এমদাদুল হক স্বপন এবং টি এম রেজা প্রমুখ।