X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: আর কত পেছাবে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩৩আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৩৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আর ১৭ বার পেছালেই ‘সেঞ্চুরি’। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার-মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন আবার পেছালো। এ নিয়ে মোট ৮৩ বার পেছালো এ মামলার প্রতিবেদন দাখিল। নতুন তারিখ আগামী ২৪ নভেম্বর।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। সে সময় তাদের পুত্র মেঘের বয়স ছিল ৫ বছর, এখন ১৪। তার মনোজগতে কী ভাবনা হচ্ছে আমরা জানি না, তবে সে বড় হচ্ছে আর আর দেখছে তার বাবা-মা’র হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাষ্ট্রের উদাসীনতা, অদক্ষতা কিংবা অসক্ষমতা।

একটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের নয়টি বছর চলে গেলো, অথচ কিছুই করতে পারছে না আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পেয়েছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। তারপর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। দুই মাসের মাথায় ডিবি হাল ছেড়ে দেয়; খোদ আদালতের সামনে ব্যর্থতা স্বীকার করে। তারপর আদালত তদন্তের নির্দেশ দেয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন – র‌্যাব-কে। র‌্যাব এলিট ফোর্স, একটা চৌকস বাহিনী বলে পরিচিত, অথচ সেই র‌্যাবও তদন্ত কোনোভাবেই শেষ করতে পারছে না। সামগ্রিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত সাংবাদিক-দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের রহস্যময়তা বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বড় ব্যর্থতার নজির হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। এই ব্যর্থতা বিস্ময়কর; কারণ, একটা হত্যাকাণ্ডের তদন্তকাজ দীর্ঘ নয় বছরেও শেষ করা যাচ্ছে না। এটা অস্বাভাবিক এবং একই সঙ্গে অবিশ্বাস্য।

নজির আছে, প্রমাণ আছে, আমাদের পুলিশ, র‌্যাব তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক জটিল অপরাধেরও কিনারা করেছে, করতে পেরেছে। এই হত্যাকাণ্ড কী এমন কোনও হত্যাকাণ্ড যে এখনও নির্দিষ্ট কোনও সূত্র মিললো না? দুষ্কৃতকারীরা কী কোনও সূত্র রেখে যায়নি? আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে এটি একটি ক্লু লেস মার্ডার।  

মামলা করেছিল রুনির ভাই। তারা হাল ছাড়েনি এখনও, কিন্তু তাদের হতাশা ব্যাপক। ঘটনার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিরা ধরা পড়বে। সেই থেকে কত ৪৮ ঘণ্টা চলে গেলো! তাই এখন প্রশ্ন জাগছে আদৌ কি এই সাংবাদিক দম্পতি খুনের কিনারা হবে? সাংবাদিকরাও আন্দোলন করে একটা সময় হাল ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু জনগণের ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া যায় কান পাতলেই। বারবার মামলার প্রতিবেদন পিছিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহলে দাবি উঠতে শুরু করেছে এই ধরনের ঘৃণ্যতম নারকীয় অপরাধের ক্ষেত্রে চটজলদি তদন্ত সম্পন্ন  করা ও  কঠোরতম সাজা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন নতুন পদ্ধতি প্রণয়ন করার।

এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মামলাটি থেমে রয়েছে। একটা সময় মামলার কিছু আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। সেসব পরীক্ষার প্রতিবেদন তাঁদের হাতে আসার পরও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হলো না। এখন মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন, দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জটিল রহস্য যাতে বের না হয় তার জন্য অদৃশ্য কোনও হাতের কারসাজি রয়েছে।  

কয়েক বছর আগে নিহত সাগর সারোয়ারের মা হতাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, তদন্তকারীদের ওপর তার আর কোনও ভরসা নেই। সন্তান হত্যার বিচারপ্রার্থী একজন বয়স্ক নাগরিকের এমন হতাশাময় উপলব্ধি আমাদের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থা, সরকার ও খোদ রাষ্ট্রকেই বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। সাগর ও রুনির একমাত্র সন্তান মেঘও বড় হচ্ছে। রাষ্ট্র যদি তার মা-বাবার হত্যার বিচার করতে না পারে, তবে দেশ সম্পর্কে কি চিন্তা জাগবে ছেলেটার মনোজগতে, সেটা কি ভাবছি আমরা?

ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ায় পুলিশের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। সেই পুলিশ যদি রাজধানীর বুকে সংঘটিত এমন একটি বড় খুনের তদন্ত শেষ করতে না পারে তাহলে আইনের শাসন কায়েম হয় না। গোটা দেশে লাখ লাখ মামলা আছে, যেগুলোর পুলিশি তদন্ত শেষ হচ্ছে না। আমরা জানি, প্রক্রিয়াগত কারণেই প্রচুর মামলার তদন্ত বকেয়া থেকে যায়। কিন্তু এমন আলোচিত একটা হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এতবার পেছালে পুলিশের ইচ্ছা ও সক্ষমতা দুটোই প্রশ্নের মুখে পড়ে। এমন একটি মামলার তদন্ত স্থবির হয়ে থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা উন্মোচিত হচ্ছে মানুষের সামনে।

আমরা বলি দেশের প্রতিটি মানুষের বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি বিচার না-ই পাওয়া যায়, তবে বিচার চাওয়ার অধিকার থেকে লাভ কী? এই হত্যারহস্য অমীমাংসিত রাখার কোনও সুযোগ নেই; কালক্ষেপণের মাধ্যমে জাতির স্মৃতি থেকে ওই সাংবাদিক দম্পতির স্মৃতি মুছে ফেলাও যাবে না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই করতে হবে অথবা বলে দিতে হবে বিচার হবে না।

লেখক: সাংবাদিক 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিএনপির ৭ আইনজীবীর আদালত অবমাননার বিষয়ে আদেশ বুধবার
বিএনপির ৭ আইনজীবীর আদালত অবমাননার বিষয়ে আদেশ বুধবার
২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার বিচার২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
যে পুরস্কার জিতে ফেদেরারকে ছুঁলেন জোকোভিচ 
লরিয়াস অ্যাওয়ার্ড যে পুরস্কার জিতে ফেদেরারকে ছুঁলেন জোকোভিচ 
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
একাডেমিক মান উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাস্টার প্ল্যান’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ