X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক জাগরণে পারিবারিক শিক্ষা

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৫৯আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৫৯

হায়দার মোহাম্মদ জিতু উপমহাদেশীয় রাজনীতির ইতিহাসে দোষারোপের সংস্কৃতির চল ঠিক কখন থেকে তা বলা মুশকিল। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকে এর ব্যপ্তি যে বেড়ে চলেছে তা স্পষ্ট। মূলত এখানে গঠনমূলক সমালোচনা চর্চার কথা থাকলেও তা দোষারোপের সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। যদিও এসবের কিছু নিরীক্ষণধর্মী কারণ আছে। যেমন, প্রাচীন ইতিহাস না ঘেঁটে শুধু যদি বিগত ৬০-৭০ বছরের রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, একটা সময় সমাজের অবস্থাসম্পন্ন মানুষেরা নেতৃত্বে এসেছেন, মানবসেবা করেছেন।

প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে বুজুর্গ রাজনীতিবিদ মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা বলা যায়। যারা প্রত্যেকে ছিলেন মার্জিত এবং অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সন্তান। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন সম্ভ্রান্ত ঘরের। বলা বাহুল্য, এদের কারোরই পারিবারিকভাবে অর্থনৈতিক পিছুটান ছিল না। বিস্তৃত অর্থে, এদের পারিবারিক শিক্ষার জায়গা ছিল নৈতিক স্খলন এড়িয়ে মানুষকে দেওয়ার। কারোরটা আত্মসাতের নয়।

জাতীয় পর্যায়সহ দেশের তৃণমূলের রাজনৈতিক কাঠামোও তা-ই ছিল। কিন্তু ইদানীং ছাত্র-রাজনীতি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এক নব্য শ্রেণির উত্থান ঘটেছে, যারা এই মহতী সমাজ সেবামূলক কাজকে বিনিয়োগবিহীন আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করতে চাইছেন। বাবার গরু বিক্রির টাকায় পড়াশোনা করছেন প্রচার করে রাতারাতি জাদুর চেরাগে ভোগের ডোবায় বুদ হয়েছেন ! প্রমাণিত নারী নির্যাতনের অঘটনেও বার্ষিক সওদার বিনিময়ে মুক্তি ও পুরস্কার পেয়েছেন! লজ্জাকর বিষয় হলো, এমন বিশৃঙ্খল অঘটন কারও কারও নৈমিত্তিক অভ্যাসে রূপ নিয়েছে।

সামাজিক এসব ব্যাধিকে উপেক্ষা করে পালিয়ে বাঁচার সুযোগ নেই। বরং একে আমলে নিয়ে কারা রাজনীতিকে ফায়দা হিসেবে ব্যবহার করতে তৎপর এবং কারা এদের সহায়তাকারী সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। পাশাপাশি সব সংগঠনের সাংগঠনিকভাবে বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ যৌক্তিক যে কে কী ছিলেন এবং এখন কার কী অবস্থা। আর রাজনীতি নিয়ে যারা শুধুই একপাক্ষিক হতাশা ব্যক্ত করেন তাদেরও এতে অংশগ্রহণের কিংবা নিজেদের স্থানগুলোতে সৎ ও স্বচ্ছ থাকতে হবে।

পাশাপাশি প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গায় রাজনৈতিক সচেতনতা আনয়নে প্রাথমিক ধাপ স্বরূপ নিজের সন্তানকে শুধু অর্থনৈতিক কাঠামোয় শক্তিশালী করার তাগিদ না দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে পারেন। এতে যারা রাজনীতিতে সরাসরি আসবেন কিংবা এর বাইরে থাকবেন উভয়েই আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবেন। বুঝবেন দেশের ইতিহাস ভোগের নয় বরং সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার।

আলেকজান্ডারের বাবা তার সন্তানকে যুদ্ধবিদ্যা শেখানোর পাশাপাশি মনোজগৎ গড়বার জন্য এরিস্টটলের মতো শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ এমনটা না করলেও তার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ক্ষমতার রাজদণ্ড সামলে রাখার জন্য যে মানসিক বিকাশ ও সততা জরুরি সেটা আড়াই হাজার বছর আগেও একজন বাবা বুঝতে পেরেছিলেন। আর এ কারণে তখনকার সময়েও আলেকজান্ডারকে কোনও অন্ধবিশ্বাস কিংবা চাটুকারিতা গ্রাস করতে পারেনি। এই ব্যবস্থা থেকে এখনকার বাবা-মারাও শিক্ষা নিতে পারেন।

রাজনীতি বড় পবিত্র ও পরিবর্তনশীল ক্ষেত্রমঞ্চ। সময়ের সঙ্গে এর আচরণ বদল হয়। যেমন, আগে শুধু নিজ জাতির স্বার্থ উদ্ধারের নামই ছিল রাজনীতি, কিন্তু এখন আর এটি মুখ্য নয়। কারণ, একবিংশ শতকে প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পুরো বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। কাজেই রাজনীতির নাম করে কেউ যদি রাতারাতি জাতে উঠে যান, সেটা যেমন দৃষ্টিকটু হয় তেমনি সততার মাধ্যমে কেউ যদি জিরো থেকে সম্মানিত হন সেটাও বিশ্বব্যাপী অনুসরণ ও উদযাপনযোগ্য হয়।

কাজেই শূন্য থেকে রাজনীতির মাঠে নামা নিষেধ বিষয়টি কোনও অংশেই এমন নয়। বরং এখানে সততার বিষয়টি ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও সময় মতো নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার বিষয়টি চর্চা জরুরি। এটা করতে পারলে ঘরে-বাইরে স্বেচ্ছাচারিতা কমে আসবে এবং তখন আর কেউ দায়িত্বকে ভোগের ভাগার কিংবা বিনিয়োগবিহীন আত্মস্বার্থ চরিতার্থের ক্ষেত্রমঞ্চ হিসেবে বিবেচনা করতে পারবে না। সেটা হোক ছাত্র-রাজনীতি কিংবা জাতীয় মঞ্চে।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ