X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
পদ্মভূষণ পেলেন প্রয়াত কূটনীতিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী

‘গর্ববোধ করছি, বিষণ্নতাও ছেয়ে আছে’

রঞ্জন বসু, দিল্লি
০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৯:১৫আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৯:১৯

বাংলাদেশের প্রয়াত কূটনীতিবিদ ও দিল্লিতে নিযুক্ত সাবেক হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীকে আজ সোমবার (৮ নভেম্বর) পদ্মভূষণ খেতাবে ভূষিত করলো ভারত। ঘোষণা আগেই হয়েছিল। আজ দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে মোয়াজ্জেম আলীর স্ত্রী তূহফা জামান আলীর হাতে খেতাবের পদক ও মানপত্র তুলে দেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দ। 

ভারতে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করে যাওয়া কোনও বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে দিল্লি এর আগে কখনও এত বড় বেসামরিক সম্মানে সম্মানিত করেনি। স্মরণীয় এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন দিল্লিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানও। 

অনুষ্ঠানের পর ভারতের রাষ্ট্রপতির অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে এই খেতাব অর্পণের যে ছবি পোস্ট করা হয়, তাতে লেখা—‘বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসের সদস্য এবং একজন ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট সৈয়দ আলী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা এবং স্থলপথে কানেকটিভিটির সূচনায় যুক্ত ছিলেন।’

গত এক যুগ ধরে দুদেশের সম্পর্ক যে সোনালি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে, তা সুবিদিত। এই সময়কালের একটা দীর্ঘ সময় (২০১৪-১৯) দিল্লিতে রাষ্ট্রদূতের পদে ছিলেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। 

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তার যে অবদান, এই পদ্মভূষণ যে তারই স্বীকৃতি—দিল্লি তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে। 

দিল্লিতে আজকের (৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠানে আরেক বাংলাদেশি নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরকেও ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত করেছে ভারত সরকার। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাবেক উপদেষ্টা সাজ্জাদ আলী জহিরের হাতেও ওই সম্মান অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি কোভিন্দ।

একই অনুষ্ঠানে বলিউড চিত্রতারকা কঙ্গনা রানাওয়াত, গায়ক আদনান সামিসহ আরও অনেককেই পদ্ম সম্মানে ভূষিত করা হয়।

রাষ্ট্রপতি কোভিন্দের হাত থেকে প্রয়াত স্বামীর হয়ে খেতাব গ্রহণের ঠিক আগে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন তূহফা জামান আলী। সেই কথোপকথনের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হলো—

ভারতের রাষ্ট্রপতি কোভিন্দের হাত থেকে স্বামীর পক্ষে পদক নিচ্ছেন তূহফা আলী

বাংলা ট্রিবিউন: সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এমন এক বিরল সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন, যা এর আগে দিল্লিতে কোনও বিদেশি কূটনীতিক পাননি। আপনার প্রতিক্রিয়া?

তূহফা জামান আলী: ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে ওনার অবদান যে এভাবে স্বীকৃতি পেলো, তাতে গর্বিত বোধ করছি। সেই সঙ্গে বিষণ্ণতাও ছেয়ে আছে। কারণ উনি নিজে সশরীরে সম্মান গ্রহণ করতে পারলেন না। আমি জানি, অবসর ভেঙে তাকে যখন দিল্লিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত্যন্ত গর্বিত বোধ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রনীতির নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের কাজে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। আজ উনি সেই দেশপ্রেম ও নিষ্ঠারই স্বীকৃতি পেলেন।

গর্ব, শোক, আনন্দ, বিষাদ—সব অনুভূতি মিলেমিশে এমনভাবে ভিড় করেছে যে আমি কোনও কথাই বোধহয় গুছিয়ে বলতে পারছি না। 

‘গর্ববোধ করছি, বিষণ্নতাও ছেয়ে আছে’

বাংলা ট্রিবিউন: আমরা দেখেছি ভারত সরকারও তাকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতো।

তূহফা জামান আলী: হ্যাঁ, অবশ্যই। ভারত সরকারের কাছ থেকে আগাগোড়া তিনি যে সহযোগিতা ও শুভেচ্ছা পেয়ে এসেছেন, তিনিও তার অত্যন্ত সম্মান করতেন। উনি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে আসেন নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাসকয়েক পরই। তারপর থেকে দুদেশের সম্পর্কে আমরা উত্তরোত্তর উন্নতি লক্ষ্য করেছি। সেই সঙ্গে বলবো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন আমার স্বামী। উনি খুব ভরসা করতেন তার ওপর। অন্যদিকে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বা পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল খুব ঘনিষ্ঠ। যেকোনও কূটনৈতিক প্রয়োজনে তিনি সরাসরি তাদের সঙ্গে যেকোনও সময় কথা বলতে পারতেন।

তবে শেষ বিচারে উনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক গর্বিত বাংলাদেশি। সেটা তার কাজেকর্মে ফুটে উঠতো। মুক্তিযোদ্ধা-কূটনীতিক হিসেবে গর্বিত ছিলেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কখনও বিদেশি পাসপোর্ট নিতে চাননি। বলতেন, বাংলাদেশি হয়ে জন্মেছি, বাংলাদেশি হয়েই মরবো। ভারতে তার বন্ধুরাও এই দেশপ্রেমটাকে খুব সম্মান করতো।

 

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কটা তো এমনই, যাতে নানা টেনশনের উপাদান সব সময়ই থাকে।

তূহফা জামান আলী: তা হয়তো থাকে। কিন্তু উনাকে দেখেছি কখনও সেই টেনশনটা বাইরে বুঝতে দিতেন না। ভেতরে কী ঝড় বইছে, বাইরের লোকটাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না। সেন্স অব হিউমার বলুন বা উইট—প্রখর রসিকতাবোধ দিয়ে সব সময় মাতিয়ে রাখতেন। আর হ্যাঁ, খুব জটিল কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে দিল্লিতে অনেকবার দেখেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লম্বা সময় ধরে টেলিফোনে কথা বলছেন। নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠতো তখন।

/এফএ/
সম্পর্কিত
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সর্বশেষ খবর
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়