গল্পের শুরুটা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-র প্রধান ডেভিড বিজলির একটি টুইট দিয়ে। অ্যামাজনের জেফ বেজোসকে টপকে বিশ্বের সেরা ধনী হওয়ায় ১৯ অক্টোবর টেসলার ইলন মাস্ককে অভিনন্দন জানিয়ে টুইটটি করেছিলেন তিনি।
এমন সাফল্য উদযাপন করতে মাস্ককে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিজলি। বলেছিলেন, মাত্র ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার দান করে বিশ্বের প্রায় চার কোটি ২০ লাখ মানুষকে তিনি অনাহারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। ওই সময় মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২২১ বিলিয়ন ডলার।
এরপর ২৮ অক্টোবর আরেকটি টুইট করেন বিজলি। সেদিন একদিনে মাস্কের আয় হয়েছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেছিলেন, এই আয়ের ছয় ভাগের এক ভাগ দিয়ে চার কোটি ২০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।
এরপর বিজলির সঙ্গে মাস্কের টুইটারে কথাবার্তা শুরু হয়। মাস্ক জানতে চান, ওই অর্থ কীভাবে বিশ্বের মানুষের ক্ষুধা দূর করবে। ৪ নভেম্বর দেওয়া উত্তরে বিজলি হিসাব করে দেখান, বর্তমানে ডব্লিউএফপি-র যে ব্যবস্থা চালু আছে সেটা ব্যবহার করে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার দিয়ে চার কোটি ২০ লাখ মানুষকে এক বছর খাওয়ানো যাবে।
এরপর ৬ নভেম্বর টুইটারে একটি জরিপ শুরু করেন ইলন মাস্ক। তার কাছে থাকা টেসলার শেয়ারের ১০ শতাংশ বিক্রির প্রস্তাব দেন তিনি। টুইটারে তার ৬২ মিলিয়ন অনুসারী বিষয়টি সমর্থন করছেন কিনা জানতে চান মাস্ক। ঐ টুইটের নিচে তিনি লিখে দেন যে, জরিপের ফলাফল তিনি মেনে নিবেন। এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখের বেশি মানুষ জরিপে অংশ নিয়েছেন। প্রায় ৫৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রির পক্ষে রায় দিয়েছেন।
টেসলার ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক। এর বাজার মূল্য প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার। ফলে মাস্ক যদি তার মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেন তাহলে তার মূল্য হবে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।
শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনাটা মাস্ক ডব্লিউএফপির প্রধানের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে নিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। কারণ জরিপের স্ট্যাটাসে তিনি কর ফাঁকি সংক্রান্ত একটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিলিওনেয়ারদের আয়ের ওপর কর আরোপের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিলিওনেয়ার ইনকাম ট্যাক্স।’
এর মাধ্যমে ইলন মাস্কসহ প্রায় ৭০০ জন বিলিওনেয়ারের ‘আনরিয়েলাইজড গেইনের’ ওপর কর আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আনরিয়েলাইজড গেইন হচ্ছে, একজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনার পর তার দাম বাড়লে সেই শেয়ার বিক্রি করার আগে যতটুকু দাম বেড়েছে তার ওপর কর দেওয়া।
সম্প্রতি ব্লুমবার্গ হিসাব করে দেখিয়েছে, এই প্রস্তাব পাস হলে সবচেয়ে বেশি কর দেওয়া সম্ভাব্য বিলিওনেয়ারদের একজন হবেন ইলন মাস্ক। কারণ তার সম্পদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে টেসলার শেয়ার থেকে। সে কারণে প্রস্তাবিত আইনের সমালোচনা করে ২৬ অক্টোবর টুইট করেছিলেন মাস্ক।
টুইটারে করা জরিপের ফল জানার পর মাস্ক এখন কী করেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে ইতিমধ্যে সোমবার শেয়ারবাজারে ওই জরিপের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সেদিন টেসলার শেয়ারের দাম ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য কমেছে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। সূত্র: ডিডাব্লিউ।
