X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
আকুতাগাওয়া পুরস্কার জয়ী

লি কোতোমির ভাষণ             

অনুবাদ : অভিজিৎ মুখার্জি
১০ নভেম্বর ২০২১, ২০:৫৯আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২১, ২১:৩২

আকুতাগাওয়া পুরস্কার জাপানি ভাষায় সৃষ্ট সাহিত্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কারগুলোর অন্যতম। অতীতের বিখ্যাত লেখক আকুতাগাওয়া রিউনোসুকের নামে এই পুরস্কার। এবছর পুরস্কার বিজয়িনীর নাম লি কোতোমি। একে তো আকুতাগাওয়া পুরস্কার, তার ওপর পদবি ‘কোতোমি’, স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে যে জন্মসূত্রে ইনি জাপানি। কিন্তু বাদ সাধছে ওই নামটি, ‘লি’। জাপানি ভাষায় ‘ল’-এর উচ্চারণই নেই। চৈনিক ভাষায় অবশ্য আছে। তবে কি উনি...? আর এইখানেই উনি এসে প্রশ্ন তুলছেন, কেন একটা কোনো পূর্বনির্দিষ্ট প্রকারভেদের মধ্যে আমার স্থান হতেই হবে? এর ঠিক পরবর্তী পদক্ষেপটি, সেহেন প্রকারভেদ অনুযায়ী আমার চিন্তাধারাটিকেও নির্দ্বিধায় পূর্বানুমান করে নেওয়ার যে রেওয়াজ, সেটার যৌক্তিকতা বা প্রয়োজনই বা কতটুকু? তাইওয়ানের নাগরিক এই লেখিকা, গত ২৭শে আগস্ট, পুরস্কারগ্রহণ অনুষ্ঠানের ভাষণে যা বললেন, নিচে অনুবাদ করে দেওয়া হলো।

 

‘না এলেই ভালো হতো, এই মনে করে’

‘আদৌ না জন্মালেই ভালো হতো’— এখন আর মনেই পড়ে না, কবে থেকে যে মাথায় এই ভাবনাটি স্থান পেয়েছিলো। ‘জন্ম নিয়েছি বলে দুঃখিত’ ঠিক বলা যায় না, বরং বলা উচিত, ‘ভালো হতো যদি আদৌ না জন্মাতাম’। আমি যেহেতু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মনস্থ করিনি জন্মাবো বলে, মার্জনা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। পক্ষান্তরে, আমাকে যে এই জগতটাতে এনে পুরে দেওয়া হয়েছে, এতে যথেষ্ট রাগ এবং নিরাশা পুষে রেখে এ-যাবৎ জীবনটা কাটালাম। এই রাগ এবং নিরাশা যে যথোপযুক্তভাবে প্রকাশ করবো সেই উপায়ও খুঁজে পাইনি।

এমন কিন্তু নয় যে ‘মৃত্যুই বরং শ্রেয়’, ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। একবার যখন জন্মেছি, নিজের মৃত্যু ডেকে আনার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই, আর যদি মরেও যাই, তাতেও ঠিক নিখুঁত অনস্তিত্ব অর্জন করা হবে না, কেন না আমার যে অস্তিত্ব ছিলো তার তো আর হেরফের হবে না। একবার যদি ভাবি, সেই মৃত্যুতে কত রকমের জল্পনা-কল্পনা, কত বিচিত্র রকমের নানা ব্যাখ্যা ও অনুসন্ধিৎসার উদ্ভব হবে, অথচ ওই পর্যায়ে সবই তো তখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাহলে সংকট আরও ঘনীভূতই হবে।

অতএব, সবচেয়ে ভালো হতো যদি কখনো কোনো অস্তিত্বই না থাকতো, জীবন অতিবাহিত করা কালীন এইসব—উৎফুল্লতা, আক্রোশ, দুঃখ, এবং আনন্দ, আর প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছেদের বেদনা ইত্যাদির বালাই না থাকলে। 

 

সম্বর্ধিতও নয়, স্বাগতও নয়

এই যে এভাবে ভাবছি, এর কি কোনো কারণ ছিলো? কারণ সম্ভবত এই যে বেশ ছোটবেলাতেই আমার চোখে পড়েছিলো, জগতটাতে বেশ কিছু ফাটল রয়ে গেছে। জগতের এইসব ফাটল, যুক্তিহীনতার দেওয়াল, আর সেইসব কোণখামচি, সূর্যের আলো যেখানে পৌঁছোয়নি। অতিসত্বর আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমার আর সেই ধরনের মানুষ হওয়া হয়ে উঠবে না, এ জগত যাদের কদর করে, স্বাগত জানায়। এই উপলব্ধি আমাকে কেবলি পাশে ঠেলে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে গিয়েছিলো, আর নিজের ভেতরে একটা নাছোড়বান্দা মৌলিক অস্বস্তি নিয়ে বাঁচতে আমাকে বাধ্য করেছিলো। নিরাশা জন্ম নেয় এইভাবে। তবুও আশার একটা ক্ষীণ সূত্রকে আমি আঁকড়ে ধরেছিলাম। নিজেকে বুঝিয়েছিলাম যে যখন আরেকটু বড়ো হবো, প্রাপ্তবয়স্ক হবো, সবকিছুই হয়তো অনেকটা শুধরে যাবে।

কিন্তু তা আর হলো না। বরং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পথে আমি অসংখ্যবার জগতের এই অসূয়াগ্রস্ত চেহারাটি প্রত্যক্ষ করলাম। প্রকাণ্ড এই অসূয়া, একক মানুষ তার কাছে অতি ক্ষুদ্র। আর, জগত কখনো তার ভুল স্বীকার করে না। যত অজস্র মানুষই পদপিষ্ট হোক না কেন, নির্যাতিত হোক হোক না কেন, নিরাশার অতলে তলিয়ে যাক, কিংবা মৃত্যুর অন্ধকারে চাপা পড়ে যাক, পৃথিবী ঘুরেই যায়, যেন কিছুই হয়নি। একক মানুষের বলহীনতা বলে এই সবকিছুকে অগ্রাহ্য করা হয়, উপেক্ষা করে যাওয়া হয়। অবিশ্বাস্যরকম অরুচিকর এই অজ্ঞেয় জন্তুটির মুখোমুখি হয়ে, খুবই স্বাভাবিক যে মানুষ আপনা থেকেই নিথর হয়ে যায়, কাঁপতে থাকে, এবং মৃত্যুর মাধ্যমে পরিত্রাণ খোঁজে। এই নির্দয় অসূয়ার মুখে পড়ে, নানা উপহাস ও বিপর্যয় কবলিত হয়ে, নেহাতই নানান ক্ষতের সমষ্টি একটি পিণ্ডে পরিণত হয়ে, আমি নিজেও একসময় মৃত্যুর সেই অতল গহ্বরের কিনার দিয়ে ঘুরে এসেছি।

 

জ্ঞান ও সাহিত্য

আমার বিশ্বাস, আমি যে এযাবত টিঁকে গেলাম, এর পেছনে রয়েছে স্রেফ, জ্ঞান ও সাহিত্য, এই দু’টো জিনিসের যে ক্ষমতা। জ্ঞান জিনিসটা আমাকে বস্তুনিষ্ঠ চোখে দেখতে শিখিয়েছে। কথাটার অর্থ হলো, একান্তই আমার নিজের পরিস্থিতি ও পরিবেশের থেকে সময় ও পরিসরের নিরিখে দূরত্ব বজায় রেখে কোনোকিছুকে বিবেচনা করার মতো দৃষ্টিভঙ্গি আমার গড়ে উঠেছিলো। এবং সেই পথে, আমার নিজের যাতনার পিছনে যে কারণগুলো, সেগুলো খুঁজে বের করতে সহায়ক কিছুকিছু ইঙ্গিতও আমার কাছে ধরা দিতো। আর, সাহিত্যের থেকে আমি পেয়েছি নিজেকে প্রকাশ করায় উপায়। এর মাধ্যমে আমি পেরেছি একান্তই নিজস্ব আবেগগুলোকে অনুধাবন ও আত্মস্থ করতে—নিরাশা ও অসহায়তা, রাগ ও ঘৃণা, ক্লেশ ও বেদনা। সমাজের গভীরতাহীন কলকোলাহলে কান না দিয়ে আমি মগ্ন থেকেছি পড়ায়, নিজেরই একেকটা টুকরো খুবলে না নিয়ে আমি খোদাই করে বের করেছি শব্দ। অথচ তার পরেও অনেক সন্ধে কেটেছে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, চোখের জলে যাপন করেছি বিনিদ্র রাত্রি। তবে কিনা, এইসব কাটিয়ে উঠে এখন আমি আকুতাগাওয়া পুরস্কার প্রদান উৎসবের এই মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে।

 আমার আগের লেখাগুলো যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের হয়তো ‘হিগানবানা গা সাকু শিমা’ (যে দ্বীপে স্পাইডার-লিলি ফোটে) উপন্যাসটাকে ঠিক টিপিক্যাল আমার লেখা বলে মনে হয়নি, এর বিপরীতে আবার, হয়তো এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা মনে করেন, অবশেষে আমি আমার উপযুক্ত কন্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছি। এই সর্বশেষ বইটায় কল্প-কাহিনীর আদলের ফর্মের কারণে, বইটা তার আগের অন্যান্য বইগুলো, যেমন ‘পোরারিসু গা ফুরিসোসোগু য়োরু’ (উজ্জ্বল ধ্রূবনক্ষত্রের রাত) এবং ‘হোশি ৎসুকি য়োরু’ (নক্ষত্রভরা রাত্রি), ইত্যাদির থেকে একটু অন্যরকম, কিন্তু আমার মনে হয় এখানেও সেই একই ব্যাপারগুলোকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে—ভাষার অনুধ্যান, জাতিসত্ত্বা, সংস্কৃতি, এবং ইতিহাস, আর তার সঙ্গে সমকালীন সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে যে একটা সংকটের আবহ, এবং এই যে কোনো একটা ক্যাটাগোরির বা পূর্বনির্দিষ্ট প্রকৃতিভেদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ার যাতনা।  

 

অমোঘ ভবিষ্যতবাণীর মতো

জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ যখন ঘোষণা হলো যে আমিই এবছর পুরস্কারটা পাচ্ছি, অজস্র মেসেজের মাধ্যমে আমার ওপর বর্ষিত হতে থাকলো গালাগাল, কুৎসা, ঘৃণায় ভরা নানা বক্তব্য, এবং এমন লোকেদের কাছ থেকে, যারা হয়তো আমার লেখা থেকে একটা শব্দও কখনো পড়েনি। “তুমি ভিনদেশি, জাপানকে অসম্মান কোরো না!” “জাপান-বিদ্বেষী, ভাগো এখান থেকে!” হিংস্রভাবে কথাগুলো বলার উদ্দেশ্যই ছিলো আমাকে আঘাত করা কিংবা চুপ করিয়ে দেওয়া, অথচ ‘যে দ্বীপে স্পাইডার-লিলি ফোটে’ বইতে আমি সমসাময়িক সংকটময় আবহ নিয়ে যা কিছু লিখেছি, এই হিংস্র কথাগুলোই হয়ে উঠলো উলটে তার সমর্থনে সাক্ষ্যপ্রমাণ। ওদের এমন নির্দয় বাচনভঙ্গিই, রূপকের আশ্রয় নিযে বলা আমার কাহিনিটাকে আরেক ধাপ এগিয়ে দিলো অমোঘ ভবিষ্যতবাণী হয়ে ওঠার পথে।

দুই কি তিন-স্তরীয় অসত্য তথ্য সহযোগে ভিত্তিহীন সব গুজব রটছিলো চারধারে। যেমন, “লি কোতোমি তো তাইওয়ানে গেছে মূল চিনদেশ থেকে, আসলে তো তাইওয়ানীজ নয়। সেই কারণেই জাপানের প্রতি ঘৃণা পোষন করে।” কথাটা এতই হাস্যকর রকমের অসত্য যে একথা অস্বীকার করতে ঠিক কোথা থেকে শুরু করা উচিত, সেটাই আমার জানা নেই। কিন্তু এতে স্পষ্ট করে প্রকাশ পাচ্ছে, কীভাবে মানুষেরা এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ অর্জন করতে চায়, অন্যদের সুনির্দিষ্ট সব প্রকারভেদের মধ্যে স্থাপন করে করে। “তুমি হচ্ছ এটা কিংবা ওটা কিংবা সেটা, সুতরাং তোমাকে তো এরকম হতেই হবে।” “যেহেতু ওই লোকটি হচ্ছে অমুক গোত্রীয়, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, এরকমটাই ঘটার ছিলো।” এভাবেই খুব সহজ কোনো লক্ষণ আরোপ করে, কন্ডিশনড রিফ্লেক্স গোত্রীয় যুক্তির কাঠামো অবলম্বন করে, কোনো লোক মূলত কেমন সেটা ওরা নির্ধারণ করে দেয়, যদিও স্বভাবগতভাবে সেই লোকের চিন্তাধারা আরো অনেক বেশি জটিল। ঠিক এই হিংস্র, আক্রমণাত্মক ব্যাখ্যাগুলোকেই আমি অবিরাম প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে এসেছি সাহিত্যের মাধ্যমে, যার ভেতর আমার নিজের লেখাও পড়ে।

যে দ্বীপটাতে স্পাইডার-লিলি ফোটে, সেখানে একটি চরিত্র বলছে, “যে দ্বীপটায় আমাদের জন্ম হয়েছিলো, আমরা বেড়ে উঠেছিলাম, সেটা আদ্যন্তই ছিলো একটা জাহাজ যা যেকোন মুহূর্তে ডুবে যেতে পারতো।” ‘স্যাপিয়েনস : আ ব্রীফ হিস্টরি অব হিউম্যানকাইণ্ড’ বইটাতে য়ুভাল নোয়াহ্‌ হারারি লিখছেন যে আমরা খুবই ভাগ্যবান, মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ যুগটাতে আমরা এখন জীবন অতিবাহিত করছি। তবে, এই মুহূর্তে যে শান্তির আবহ আমরা উপভোগ করছি, তা যদি হঠাৎ করে অন্তর্হিত হয়ে যায়, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এই উপন্যাসটার লেখিকা হয়ে, আমি জোর দিয়ে বলতে পারি না, কথাটা কি নেহাতই একটা ফেব্‌ল্‌ হয়ে থেকে যাবে, না কি ক্রমে একটি অমোঘ ভবিষ্যতবাণীতে পর্যবসিত হবে। একক ব্যক্তিমানুষদের কাজ ও আচরণেই সেটা ঠিক হবে— এই যারা এদেশে বাস করছেন, এই পৃথিবীতে বাস করছেন।

 

চির বহিরাগত

আকুতাগাওয়া পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে আমি যেহেতু প্রথম তাইওয়ানবাসী, এই নিয়ে তাইওয়ানে প্রভূত আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে, মিডিয়াতেও বিষয়টা ঠাঁই পাচ্ছে খুব। অন্য যেসব নাগরিকেরা দেশান্তরে কোনো কৃতিত্বের অধিকারী হন, তাদের মতোই আমাকেও বলা হচ্ছে, ‘তাইওয়ানের গর্ব’। একদিক থেকে দেখলে, এই প্রতিক্রিয়ায় আমি বেশ খুশি, আবার একথাও সত্যি যে আমারই একটা অংশ খানিকটা দূরত্বও বজায় রাখতে চায়।

একথা বলে দিতে হয় না যে তাইওয়ান, যে দেশটাতে আমি জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি, আর জাপান, যেখানে আমি চলে এসে বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দু’টোই জায়গা হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার ক্লাছে। এদের ভাষা ও সংস্কৃতি আমি ক্রমে আত্মস্থ করেছি, এবং এই দুটোই আমার লেখার ক্ষেত্রে রক্ত ও মাংসের মতো কাজ করে। আমার ভারি ভালো লাগবে যদি আমার লেখালেখি ও সেগুলোর অনুবাদ আন্তর্জাতিক আদানপ্রদানে কোনো ভূমিকা নিতে পারে। যাই হোক, সেটাই সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য নয়, এবং আমি স্রেফ এমন একজন মানুষ যে তাইওয়ানে জন্মে, সেখানেই বেড়ে উঠেছে, ও জাপানে পাড়ি জমাবে বলে মনস্থ করেছিলো। কোথাও একটা পড়েছিলাম যে লেখকরা নাকি চির-বহিরাগত! যা আমার তুলনায় মাপে বড়ো, এমন কোনো কিছুর ভার কাঁধে নেওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই—যেমন ধরুন, একটা পুরো রাষ্ট্র, জাপান-তাইওয়ান সৌহার্দ্য, কিংবা আমার বাসভূমির সুখ-সমৃদ্ধি— আরে, এটা আমি করে উঠতেই পারবো না। এখানে আরো একটা কথা বলে রাখি, আজ যে আমি একটা ঐতিহ্যগতভাবে চৈনিক পোশাক বেছে নিয়েছি পরার জন্য, সে কিন্তু স্রেফ এটা পরতে ইচ্ছে করলো বলে, কোনোরকম জাতিগত অনুষঙ্গের বার্তা বহন করার জন্য মোটেই নয়।

 

অতীতের আমিরা

আমার যে প্রথম কাজটা, আমার লেখা প্রথম জাপানি উপন্যাসও বটে, সেই ‘হিতোরিমাই’ (একক নৃত্য) বইটার একেবারে শেষে, কেন্দ্রীয় চরিত্রটি মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে পারলো একটা অঘটনের প্রসাদে। ব্যাপারটা একেবারেই নিজের খুশিতে, ইচ্ছেমতো ঘটানো হলো বলে সমালোচকরা নিন্দে করেছেন, কিন্তু আমার এখনও বিশ্বাস যে টিঁকে থাকার জন্য আমার এরকম কোন অঘটনেরই একান্ত প্রয়োজন ছিলো। আমি স্থির নিশ্চিত যে এই আকুতাগাওয়া পুরস্কারই সেই অঘটন যা আমাকে টিঁকে থাকতে সহায়তা করবে।

আপনাদের প্রশ্রয় সাপেক্ষে, যতদিন না সাহিত্য-পত্রিকাগুলোতে লি কোতোমির মৃত্যুর ওপরে স্পেশাল ফিচার ছাপা হয়, যদি কিছু সংখ্যক এমন লেখা লিখে রেখে যেতে পারি যেগুলো সমাজকে নাড়া দেয়, তাহলে বলবো লেখক হিসেবে আমার ওপরে বর্ষিত হয়েছে প্রভূত সৌভাগ্য।

এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করলাম সেই আমাকে, যে আজ থেকে ২২ বছর আগে জগতের ফাটলগুলো দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলো, আজ থেকে ১৭ বছর আগে যে নিজে নিজে শিখে নিয়েছিলো জাপানি হরফসমূহ, এবং সেই আমাকে, ১২ বছর আগে এই জগতের অসূয়ার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে যে অশেষ ক্লেশভোগ করেছিলো।

অতীতের সেই বিভিন্ন আমাকে আমি এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি, আর আমার লেখাগুলো উৎসর্গ করছি আমার পাঠকদের। এটা চলতে থাকবে।

(বানানরীতি অনুবাদকের নিজস্ব)

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!