রাজশাহীর তানোর উপজেলায় যুবলীগ নেতার ক্ষেতের পাশে নিজ প্লটে ৬২ প্রজাতির ধান নিয়ে গবেষণা করছিলেন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক নুর মুহাম্মদ। দেশের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে আরও বাড়তি মাত্রা যোগ করতে বিনিয়োগসহ একাধারে ১০ বছরের শ্রম দিয়ে যাচ্ছিলেন। সফলতার মুখ দেখতে বাকি ছিল কিছু সময়। তবে ক্ষণিকেই এই কৃষকের গবেষণায় বাধা হলেন যুবলীগ নেতা। গবেষণার কাঁচা ও পাকা ধানে ট্রলি চালিয়ে তা নষ্ট করে দিয়েছেন বলে তানোর পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নুর মুহাম্মদ।
গত সোমবার (৮ নভেম্বর) নুর মুহাম্মদের সামনেই তার গবেষণার জমিতে পাকা ধানের ওপর ট্রলি চালিয়ে দেন এ যুবলীগ নেতা।
স্বর্ণপদক পাওয়া কৃষক নুর মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশ প্রেমের জায়গা থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। কৃষিক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা যোগ করতে চেয়েছিলাম। এটা হলে দেশের কৃষিক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসতো। কিন্তু সেটা এই নেতা (আব্দুল ওহাব) আর হতে দিলো না। চোখের সামনে সবকিছু নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাধা দিতে গিয়ে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছি। গবেষণাটাকে রক্ষা করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমির ওপর ছিল এই গবেষণা। যেখানে পাঁচ মিটারের প্রতিটি সারিতে ৬২টি প্রজাতির ধান ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি সারির পরিপক্ব ধান কাটা হয়েছিল। বাকিগুলো পাকার অপেক্ষায় ও কিছু দুধ অবস্থায় ছিল। কিন্তু এরা গবেষণার ধানের ওপর দিয়ে দুটি ট্রলি নিয়ে দুইবার আসা যাওয়া করেছে। সবগুলো জাতের ধান এখন একটি অন্যটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে ১০ বছরের গবেষণার ফল নষ্ট হয়ে গেলো।’
কৃষক নুর মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দিয়েছি। যেখানে ওহাব, অঞ্জনসহ অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্বাস ছাড়া তেমন কিছুই পাইনি। উপরন্তু এই নেতা মীমাংসার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছে। আমাকেসহ ঘটনার সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।’
থানায় করা অভিযোগে নুর মুহাম্মদ ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি জানান, এটি গবেষণায় তার বিনিয়োগের পরিমাণ। কিন্তু এটা কখনও ক্ষতির পরিমাণ নয়। কেননা এটা শুধু তার ক্ষতি নয়, দেশের ক্ষতি। আর এই ক্ষতি টাকা অঙ্কে মাপা যাবে না।
ষাটোর্ধ্ব নুর মুহাম্মদ মাধ্যমিক পাস করার পর থেকেই ধান চাষ শুরু করেন। গড়ে তোলেন বিলুপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির ধানের সংরক্ষণাগার। একই সঙ্গে তার মাটির বাড়িকে পরিণত করেন গবেষণাগারে। এই গবেষণায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সহযোগিতাও পেয়েছেন জাতীয়ভাবে স্বীকৃত এ কৃষক।
এ পর্যন্ত তিনি ২০০টির বেশি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি খরা সহনশীল জাত। নতুন এই জাতগুলো সরকারি স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা আব্দুল ওহাব জানান, ঘটনাটা আসলে অতটা বড় না। তিনি (নুর মুহাম্মদ ) ছোট বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
তানোর থানার ওসি রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ নুর মুহাম্মদকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে কি-না এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানান তিনি।