X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনে কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা

এমরান হোসাইন শেখ
২৫ নভেম্বর ২০২১, ২০:৪২আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ২০:৪২

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর্মকর্তাদের কেউ পক্ষপাতমূলক আচরণ বা গাফলতি করলে অভিযোগের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য ক্ষেত্র বিশেষে প্রত্যাহার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে অভিযোগ অনুযায়ী মামলা দায়ের বা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোট বন্ধের মতো উদাহরণ সৃষ্টি করে, এমন পদক্ষেপ নেওয়ারও সুপারিশ এসেছে।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভায় এসব আলোচনা উঠে আসে। এতে কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্যে বার বার আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে আসে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আরও কঠোর ও দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে অনুরোধ জানান তারা। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনার তাৎক্ষণিক তথ্য না পাওয়ায় বৈঠকে অন্তত দুই জন নির্বাচন কমিশনার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, তাৎক্ষণিক তথ্য না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ হয়। এছাড়া একজন নির্বাচন কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সমস্যা থাকার পরও, তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে না আসায় হতাশা প্রকাশ করেন। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, একেক ধাপে অনেক বেশি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট থাকায় ফোর্স মোতায়েনে সমস্যা হচ্ছে। প্রতি ধাপে ৪০০ ইউপিতে ভোট করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনে সুবিধা হয়।

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাঝপথে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ এ সভা নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত হলো। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ইসি সচিব, র‍্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র মহাপরিচালক, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রতিনিধি এবং পুলিশের আইজির প্রতিনিধি অংশ নেন।

সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার  নির্বাচনে সহিংসতা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো— সহিংসতা রোধ করার জন্যে। একটাও সহিংস ঘটনা হবে না, মারামারি হবে না— এমন নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘সহিংস ঘটনায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতারের তৎপরতা চলছে। এলাকার মাস্তান যারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে, তাদের আগাম প্রেফতারের জন্য ইন্সট্রাকশন (নির্দেশনা) দিয়েছি।’

সিইসি বলেন, ‘এমপি-মন্ত্রীদের অধিকাংশই আচরণবিধি অনুসরণ করেন। দুই-চার জন সংসদ সদস্য মানছেন না বলে অভিযোগ এসেছে। তাদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে এলাকা ছাড়ার জন্য। প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে অতীতে মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আগামীতেও প্রয়োজনে মামলা করা হবে।’

জানা গেছে, বক্তব্যে ঘুরে ফিরে বার বার আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার কয়েকটি ঘটনা উঠে আসে। একজন কর্মকর্তা সংসদ সদস্যদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনে ডাবল স্ট্যান্ড নিচ্ছেন। একই উপজেলার কোনও ইউপিতে নৌকা প্রার্থীকে আবার কোনও ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন। তারা পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে নির্বাচনি কার্যক্রম প্রভাবিত করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরে চাপ সৃষ্টি করছেন। এতেও সহিংস ঘটনা ঘটছে।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা বৈঠকে জানান, সবার ক্ষেত্রে আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হলে সহিংসতা ও অনিয়ম কমে যাবে। এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত কমিশন থেকে জানানো হয়, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে গুরুত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা ও ভোট বন্ধ করা হবে জানানো হয়।

জানা গেছে, নির্বাচনে পক্ষপাতের অভিযোগ পেলে ইউএনও, ওসিসহ যেকোনও পর্যায়ের কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়— কমিশনের নির্দেশনা পেলে যেকোনও পর্যায়ের কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানম নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংস ঘটনায় তাৎক্ষণিক তথ্য না পাওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সময় মতো আমরা তথ্য জানতে পারি না। মাঠ প্রশাসন থেকে আমাদের তথ্য দেওয়া হয় না। গণমাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমে আমাদের কাছে খবর আসে। ওই খবর অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়। এ কারণে অনেক ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝামেলা রয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার কোনও প্রতিবেদনে তা উঠে আসেনি। এতে প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হচ্ছে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীকে শোকজ, ইসিতে এসে জবাব দেওয়ার নির্দেশ
জাতীয় নির্বাচনের স্ট্যান্ডার্ড উপজেলায় আরও ওপরে নিয়ে যেতে চাই: ইসি রাশেদা
প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট ৮ মে
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক