X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পার্টি আসলে কী চায়

সালমান তারেক শাকিল
২৬ নভেম্বর ২০২১, ২২:৪৩আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৮:২২

সরকারের ভালোর সঙ্গে থাকা, আর খারাপের সমালোচনা করা— জাতীয় পার্টির নীতিগত এই অবস্থান এখনও চলমান। মাঝে-মাঝে  নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ অবস্থান নিলেও জাতীয় পার্টি তাদের নীতিতে কোনও পরিবর্তন আনেনি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বাড়িঘরে সরকার দলীয় সমর্থকদের আক্রমণের অভিযোগ তুলেছেন জাপার নেতারা। দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোনও কোনও নেতা বিএনপির মতো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। তবে নেতৃত্বের শীর্ষে থাকা প্রভাবশালী নেতারা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এসব আসলে প্রাথমিক কথাবার্তা, কঠোর হওয়ার মতো এমন কোনও আলোচনা জাপায় নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি দেশের জন্য কাজ করে। দেশের জন্য যেটা ভালো, সেটাই আমরা করি। সংসদে সরকারের যেটা ভালো, সেটার পক্ষে থাকি। যেটা খারাপ— সেটার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টি। সব সময় খারাপ এমন নয়। আমরা এখন মহাজোটে নেই। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়েও জোটে ছিল না।’ জাতীয় পার্টি ইতিবাচক রাজনীতি করে— বলে জানান বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের

ইউপি নির্বাচন ঘিরে অসন্তোষ

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশে নির্বাচনে জোর জবরদস্তির অভিযোগ করছেন। নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ওপরই মূল অভিযোগ দলটির। মুজিবুল হক চুন্নু এরইমধ্যে অভিযোগ— আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জাপার প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারে জোর জবরদস্তি করছে।

এমন পরিস্থিতিতেই শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ কর্মীরা আমাদের প্রার্থীর ওপর হামলা করেছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। ফলে আমরা আগামীতে বিএনপির মতো নির্বাচনে না যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।’

জাপার সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে। শীর্ষ নেতৃত্বের সূত্র বলছে, মহাসচিবের এমন বক্তব্য প্রাথমিক কথা। এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেই জাপার।

প্রভাবশালী একজন কো-চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রার্থী স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী হলে কেন মার খাবেন। আমাদের এলাকায় তো ক্ষমতাসীনরা কারও ওপরে হাত তুলতে পারে না। আক্রমণের-পাল্টা আক্রমণ না হলে মার খেতেই হয়।’

এ বিষয়ে দলটির আরেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, ‘নির্বাচন তো দুই ধাপ শেষ হয়েছে। এখন কেবল দুটি ধাপ বাকি আছে। লাস্ট ধাপে এ চিন্তা করে লাভ আছে কী? আওয়ামী লীগের লোকেরা তো নিজেদের দলীয় লোকদেরকেই ছাড় দেয়নি। মারামারি করেছে।’

জাপার একজন যুগ্ম মহাসচিব জানান, দুই ধাপ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত জাপার ৩৫-৩৬ জন ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইউনিয়ন নির্বাচনে অনেক এলাকায় জাপার প্রার্থীদের দাঁড়াতেই দিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। বাড়িঘরে হামলা করছে। জাপা প্রার্থীদের মাঠে থাকতে দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ইউটার্ন নিতে পারে।’

পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জাপার এই নেতা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত একাধিক আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করেছিল জাতীয় পার্টি। ওই তদন্তে তারা খুঁজে পান— একটি আসনের এমপি প্রার্থীকে সরকার দলীয় প্রতিপক্ষরা বাগানবাড়িতে নিয়ে থাপ্পড় দিয়ে হুমকি দিয়েছিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে থাপ্পড় প্রকাশ্যে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, তাহলে বলেন কে সাহস করবে। দলের কথা চিন্তা করে এসব বিষয় বা তদন্তের প্রতিবেদন সামনে আনা হয়নি।

জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন আমাদের। নেতাকর্মীদের, প্রার্থীদের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়েছে। সব নির্বাচন শেষে আমরা সাংগঠনিক মূল্যায়ন করবো।’

জোটবদ্ধ নির্বাচনই করবে জাপা

জাতীয় পার্টির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও দুই বছরের বেশি সময় বাকি। এখনই তিনশ’ আসনে নির্বাচন করা বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি একেবারেই প্রি-ম্যাচিউর আলোচনা। কৌশলগত কোনও বিষয়ও নেই বলে জানান একাধিক নেতা।

জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মন্তব্য— জাতীয় নির্বাচনের এখনও দেরি আছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা এখন জাতীয় পার্টিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে।

তার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন— দুই বড় জোটের বাইরে তৃতীয় কোনও জোটের প্রয়োজনীয়তা এখন দেশে নেই। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, একটি তাদের বিরুদ্ধে। জিএম কাদের বলেন, ‘যদি বিএনপি টিকে থাকে তাহলে তাদের নেতৃত্বে হবে। কিন্তু বিএনপি ধসে গেলে কী হবে, সেটা তো এখন বলা যাচ্ছে না। এ কারণে নির্বাচনি জোট নিয়ে জাতীয় পার্টি কোনও চিন্তা করছে না।’

দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের এখনও সময় আছে। সময় হলেই জাতীয় পার্টি তার পলিসি ঠিক করবে।

দলের একজন যুগ্ম মহাসচিবের ভাষ্য— তিনশ’ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হলে সাংগঠনিকভাবে জাপা লাভবান হবে। দলের অনুসারী ও নেতা তৈরি হবে। দলের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, মার্কা নিয়ে আলোচনা থাকবে।

যদিও জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘নির্বাচনি পরিকল্পনা দলে আলোচনা করার পরই নির্ধারণ করা হবে। এটি কোনও ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া নয়।’

আরও পড়ুন:

‘আর্থিক সুবিধা’ নিয়ে প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখছে জাপা

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী