X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কী বার্তা দিচ্ছে ওমিক্রন

বিদেশ ডেস্ক
০২ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:২৯আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:১০

কোভিড-১৯ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রথম সাফল্যের এক বছরেরও কম সময় পর বিশ্বে এক ভয়ের অনুভুতি বিরাজ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৪ নভেম্বর শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন হয়ত টিকা বা আক্রান্ত হওয়াতে সৃষ্ট রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের জন্য খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। টিকা উৎপাদনকারী মডার্নার প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্যমান টিকা একাধিক মিউটেশন করা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে। ভয়ের এই অনুভুতিতে আরও লকডাউন, সীমান্ত বন্ধ, ভোক্তাদের অস্থিরতা, বিনিয়োগকারীরা এয়ারলাইন্স ও হোটেল চেইনের শেয়ার বিক্রি করছেন। তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি কমেছে প্রায় দশ ডলার।

মাত্র গত সপ্তাহে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানতে পারেননি। তারা বলছেন, ৩৫টি মিউটেশনের প্রমাণ পাওয়া ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিন ভ্যারিয়েন্টটিকে আরও বেশি সংক্রামক বা দাপট ছড়ানো ডেল্টার চেয়ে বেশি প্রাণঘাতী হবে কিনা তা বলার সময় এখনও আসেনি। আগামী দিনেগুলোতে বিজ্ঞানীরা আরও বেশি তথ্য পর্যালোচনার পর মহামারিগত চিত্র স্পষ্ট হবে। কিন্তু ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং সংক্রমনের হুমকি একের পর এক দেশে ছড়াচ্ছে। এতে করে আবারও বিশ্ব অর্থনীতি ঝুলে পড়ছে। বিদ্যমান তিনটি বিপদকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

প্রথমত, ধনী বিশ্বের কঠোর বিধিনিষেধ প্রবৃদ্ধির ক্ষতি করবে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের খবরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ভ্রমণ বাতিল করেছে। ইসরায়েল ও জাপান তাদের সীমান্ত একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। ব্রিটেন নতুন কোয়ারেন্টিন নীতিমালা চালু করেছে। বৈশ্বিক ভ্রমণের উন্মুক্ত যুগের অবসান ঘটিয়েছে মহামারি। এই বছরেই বিধিনিষেধ শিথিল বা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে যতদ্রুত উন্মুক্ত হয়েছিল তার চেয়ে দ্রুতগতিতে বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত।

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কী বার্তা দিচ্ছে ওমিক্রন

ওমিক্রন ছড়ানোর খবরে বিভিন্ন দেশের ভেতরেও চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হতে পারে। ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্তের আগেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একাধিক কর্মকাণ্ড সীমিত করা হয়েছে ডেল্টার সংক্রমণ ঠেকাতে। ইতালিতে টিকা না নেওয়া মানুষদের রেস্তোরাঁর ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পর্তুগালে টিকা নেওয়া মানুষদেরও পানশালায় প্রবেশে করোনার নেগেটিভ সনদ দেখাতে হচ্ছে। অস্ট্রিয়াতে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন জারি করা হয়েছে। ধনী দেশগুলোর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেবা খাতের পুনরায় সচল হওয়া মাত্রই স্থগিত হয়ে গেছে।

একতরফা অর্থনীতি দ্বিতীয় বিপদ ডেকে আনছে। ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে ইতোমধ্যে চড়া মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ঝুঁকি বেশি বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতির কারণে অর্থনীতি চাপে পড়েছে এবং ভোক্তা মূল্য আগের বছরের তুলনায় অক্টোবরে বেড়েছে ৬.২ শতাংশ। কিন্তু অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ফীতি অস্বস্তিকর পর্যায়ে রয়েছে। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এখন ৫.৩ শতাংশ।

কেউ কেউ ভাবতে পারেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। বাস্তবতা হলো, বিপরীতটাই ঘটতে পারে। বিঘ্নিত হয়ে আছে বিশ্বের সাপ্লাই চেইন। এশিয়া থেকে আমেরিকায় পণ্য পরিবহনের খরচ বেশি। মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য ভোক্তাদের পর্যটন ও খাবার খাওয়াতে প্রবণতা ফেরাতে হবে। ওমিক্রনের কারণে এটি বিলম্বিত হতে পারে। এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনকারী দেশগুলোতে লকডাউন ফিরিয়ে আনতে পারে। যেমন- ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া। আর সতর্ক শ্রমিকরা হয়ত নিজেদের কাজ থেকে সরিয়ে নিতে পারে, এতে মজুরি ঊর্ধ্বমূখী হবে।

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কী বার্তা দিচ্ছে ওমিক্রন

তৃতীয় ও শেষ বিপদ হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের মন্থর হয়ে পড়া। খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয় যখন মহামারিতে অর্থনীতিকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল দেশটি। কিন্তু এখন দেশটির বড় আবাসন খাত ঋণের ভারে জর্জরিত, বেসরকারি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আদর্শগত প্রচার ও অস্থিতিশীল ‘জিরো-কোভিড’ নীতির কারণে দেশটির অর্থনীতি বিচ্ছিন্ন এবং যেখানেই আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে সেখানেই স্থানীয় লকডাউনের দিকে ধাবিত করছে। সরকার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলেও প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ শতাংশ। মহামারির শুরুতে ধাক্কা ছাড়া গত ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন।

ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যদি বেশি সংক্রামক বলে হাজির হয় তাহলে চীনের কোভিড নিয়ন্ত্রণের কৌশল আরও কঠিন হবে। এই ভ্যারিয়েন্ট সহজে ছড়ানোর কারণে চীনকে সংক্রমণ ঠেকাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যা দেশটির প্রবৃদ্ধি ও বিশ্বের সাপ্লাই চেইনকে বাধাগ্রস্ত করবে। ওমিক্রনের কারণে চীন জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। কারণ ভাইরাসকে ছড়াতে দিলে সংক্রমণের অনিবার্য ঢেউয়ের বড় প্রভাব পড়বে অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়।  

মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও সরকার ভাইরাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে বলে মনে করে গোল্ডম্যান স্যাকস। কয়েকটি টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশা করছে বিদ্যমান টিকা গুরুতর রোগ ঠেকাতে কার্যকর হবে। এরপরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকার ২০২২ সালে নতুন টিকা ও ওষুধ প্রয়োগ করতে পারবে। এমনকি ওমিক্রন, বা ভবিষ্যতে পাই, রো কিংবা সিগমা প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর হুমকি হতে পারে।

দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে।

/এএ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
সর্বশেষ খবর
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
উত্তর গাজায় আবারও হামলা জোরদার করলো ইসরায়েল
ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি
বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়লেন মুসল্লিরা
বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়লেন মুসল্লিরা
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী