X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায় বানিয়ে সেবাদাসে পরিণত করা

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪০আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:৪০
হায়দার মোহাম্মদ জিতু সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়ায় ৫০ টাকা বকশিশ (অনৈতিক সুবিধা) কম দেওয়ায় একজন স্কুলশিক্ষার্থীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়েছিলেন একজন ওয়ার্ড বয়। এতে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছিল! বিষয়টি উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার। এই ধরনের অন্যায্য, অনৈতিক পয়সাপাতি দেওয়ার উৎপাত কিছু দুর্নীতিবাজ টাকাওয়ালাদের কারণে চাউর হয়েছে। তবে এই নোংরা প্রবৃত্তির বৃত্ত ভাঙা সম্ভব। আর সেটা হাজার বছরের স্রোতধারায় বয়ে চলা বাঙালি সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করবার মাধ্যমে। কারণ, বাঙালি সংস্কৃতি সহযোগিতা এবং শ্রদ্ধার, সুযোগ সন্ধানের নয়।

এই বিক্ষিপ্ত ও নৈরাজ্যমূলক কিছু আচরণের কারণে কেউ কেউ ব্যাপক হতাশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু আদতে সবকিছুকে গুলিয়ে খাওয়ানোর সুযোগ নেই। অর্থাৎ, নৈতিকতার বিষয়গুলো পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। এটাই জীবন শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ। যেটাকে উপেক্ষা করে নৈরাশ্যবাদী, ষড়যন্ত্রকারী কিংবা হতাশা প্রকাশের সুযোগ নেই।

ঐতিহাসিকতার বিচারে জানা যায়, ফ্রান্সের নেপলিয়ান বোনাপার্টের উত্থানে আতঙ্কিত ব্রিটেন নিজেদের প্রতিরক্ষা কাঠামো সুরক্ষিত করার তাগিদে অর্থ জোগানের উপায় হিসেবে জনগণকে অর্থ সহায়তার আহ্বান করেন। ধারণা করা হয়, সেই সহযোগিতার ধারাই পরে ট্যাক্স বা কর হিসেবে দুনিয়াব্যাপী হাজির হয়। একেবারে শুরুর দিকেই বিশ্বমোড়ল আমেরিকা এই ব্যবস্থা নিজ দেশে চালুর উদ্যোগ নেয়। যাতে দেখা যায়, তাদের প্রবল বাধা ও সংঘর্ষের মুখে পড়তে হয়। এবং এই ব্যবস্থা দেশব্যাপী চালু করতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় লাগে।

অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়সই পঞ্চাশ। কাজেই এখানে সবকিছু ফটোস্ট্যাট মেশিনের মতো তৈরি হয়ে থাকবে এমনটা ভাববার সুযোগ নেই। বরং এই স্বল্প সময়েও স্বৈরতন্ত্র ও ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে দেশ যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছে, সেটাই বিস্ময়কর, অনুপ্রেরণার।

কাল-মহাকাল সাক্ষ্য দেয়, ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও কৃতজ্ঞতাবোধ ব্যতীত কোনও সভ্যতা কিংবা জাতি-রাষ্ট্র-রাজ্য টিকতে পারেনি। সে হিসেবে ইতিহাসের নায়ক বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনায় কৃতজ্ঞতাবোধ রাখতে হবে। কারণ, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশকে যেখানে উল্টো ভাবধারা বা মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক ধারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বেই এই দেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নারী জাগরণকে আলিঙ্গন করেছে।

তবে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় ছিল, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সেই বিচার যেন না করা যায় সেজন্য আইন প্রণয়ন করা। পাশাপাশি জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকারকে বাক্সবন্দি করা হয়েছিল। যা বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

শুধু তা-ই নয়, দেশ নিয়ে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ষড়যন্ত্র করছেন তাদের চোখের সামনেই বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে প্রতিস্থাপন করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে আত্মবিশ্বাস হরণকারী বলেছিল, এই দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হবে, তাদের মাটিতেই বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে সফল উৎক্ষেপণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর দাবায়ে রাখবার পারবা না উক্তির যথার্থতা হিসেবে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করছে।

ট্র্যাজি-কমেডি হলো, এটিকে নিয়েও দুর্নীতির বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই যে বুঝে না বুঝে বা জেনে না জেনে দুর্নীতির মতো ভয়াবহ অভিযোগ ফলাও করে উঠানো ও প্রচার, এর পেছনেও এক ধরনের রাজনৈতিক অর্থনীতি বা পলিটিক্যাল ইকোনমি রয়েছে। যা বন্ধু বা মুখোশধারী সব পক্ষের।

পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের কারণে দেশের ২১টি জেলা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানা, কর্মসংস্থান, স্থাপনা সৃষ্টি হবে। দেশের মোট জিডিপির সঙ্গে নতুন করে আরও প্রায় ১.০২ শতাংশ যুক্ত হবে। যাতে দেশের অর্থনীতির আকার বেড়ে দাঁড়াবে দ্বিগুণ। অর্থাৎ এই এক সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা আত্মনির্ভর অবস্থা থেকে অন্যের দুর্যোগে পাশে দাঁড়াবার মতো হয়ে উঠবে। যার আংশিক ইঙ্গিত বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেখিয়েছেও। এশিয়ার দেশ শ্রীলংকাকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে।

জগৎ বড় নির্মম ও মুখোশে ঠাসা। এখানে অসহায় বানিয়ে ‘সেবাদাসে’ পরিণত করার আকাঙ্ক্ষা ও কায়দা-কানুন বেশ পুরনো। কাজেই সহায় সম্পন্ন হওয়ার এই লড়াইয়ে দেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, নারীর অগ্রসর সবকিছুকে নিয়ে যেন এগোনো যায় সেই তাগিদে অবশ্যই সর্বপ্রথম জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ-লালন করতে হবে এবং এই শিক্ষার শুরু করতে হবে আপন আপন পরিবার থেকে।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ