ঘূর্ণিঝড় থেকে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে জাওয়াদ। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে ভারতের উড়িষ্যার দিকে গেলেও সুন্দরবনের উপকূল অঞ্চলে এর প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় টানা ভারী বৃষ্টিতে সুন্দরবনের দুবলার চরে কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এদিকে উত্তাল ঢেউয়ে টিকতে না পেরে শুঁটকি ও সাধারণ জেলেরা সাগর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। সহস্রাধিক মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার বর্তমানে আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া, শ্যালা ও মাঝের কিল্লাসহ শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরের বিভিন্ন খালে অবস্থান করছে।
সূত্র জানায়, সমুদ্র মোহনা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ শেষে তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করেন জেলেরা। আর এই মাছ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজার জাত করা হবে। চরের অভ্যন্তরে ১৩টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলার জেলে পল্লী। এখানে প্রায় ৩০ হাজার জেলে অবস্থান করছেন। এবার তাদের ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে।
আলোরকোলের শুঁটকি ব্যবসায়ী বাশার ও বোরহান উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে চাতাল ও মাচার সব মাছ পচে গেছে। সাগরের অবস্থা খুবই খারাপ। ঝাড়ো বাতাস বইছে। তিন দিন ধরে মাছ ধরাও বন্ধ। সাগরে পানির উচ্চতা বেড়েছে। চরের বেশিরভাগ জেলের ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এ অবস্থায় ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে চরের সব জেলে-মহাজন।
আরেক জেলে আব্দুল গফুর বলেন, গত তিন দিনে আমরা যে মাছ পেয়েছি, সেটা শুকাতে পারিনি। এমন অবস্থা থাকলে মাছগুলো নষ্ট হতে শুরু করবে। আগামী দিন যদি সূর্যের দেখা না পাই, তাহলে এখানকার জেলে-মহাজনদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদের দাবি, তিন দিনের বৃষ্টিতে শুঁটকি উৎপাদনকারী ১০টি চরের কমপক্ষে তিন কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়েছে। এসব চরে এক হাজারেরও বেশি মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার বিভিন্ন খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। মাছ নষ্ট হওয়া এবং মাছ ধরতে না পারায় বড় ধরনের লোকসানে পড়বে মহাজনরা।
তিনি বলেন, শুঁটকি খাত থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও জেলেদের ক্ষতির দিকটা কেউ দেখে না। এ ব্যাপারে বন বিভাগ বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কোথাও আবেদন করেও লাভ হয় না।
কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, গত কয়েক বছরের জলোচ্ছ্বাসে চরের বালু মাটি ধুয়ে চর অনেক নিচু হয়ে গেছে। এতে সামান্য দুর্যোগেও জেলেঘরে ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। পাঁচ বছর আগেও এমনটা হয়নি। আমি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দুবলার চরের টিম লিডার হিসেবে আছি। আমার অধীনে চারটি চরে ৮০ জন সেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তারা দুর্যোগকালীন সংকেত প্রচার এবং প্রত্যেক জেলে ঘরে গিয়ে সবাইকে সতর্ক করছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রহ্লাদ চন্দ রায় বলেন, তিন দিন ধরে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। এতে শুঁটকির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে মহাজনরা আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার ক্ষতির কথা বললেও এখন পর্যন্ত সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মাছ ধরার সুযোগ নেই। সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে কূলে। চারটি চরের ১০ হাজার জেলে সবাই যার যার ঘরে অবস্থান করছে। পানির উচ্চতা প্রায় ৬-৭ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু জেলেঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। জেলে-মহাজনদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অবকাঠামোগত কিছু ক্ষতি না হলেও দুবলার জেলে পল্লীতে অনেক শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে এখনও নতুন করে সাগরে মাছ ধরতে নামতে পারছে না তারা।
