X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা বৃষ্টিতে কোটি টাকা ক্ষতির মুখে দুবলার চরের জেলেরা

নুরুজ্জামান লাবু
০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:১৬আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৪৮

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে সমুদ্র উপকূলে আঘাত করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু সৃষ্ট নিম্নচাপ লঘুচাপে পরিণত হয়ে টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতেই কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন দক্ষিণ সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলেরা। বৃষ্টিতে জেলেদের ধরে আনা মাছ পচে-গলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দাদন নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বলছেন, সাগর থেকে মাছ ধরে শুটকি করার জন্য রাখা হয়েছিল। টানা বৃষ্টিতে সেসব মাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এসব এখন আবার সাগরে ফেলে দিতে হবে।

প্রতিবছর নভেম্বরের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে দক্ষিণ সুন্দরবনের দুবলার চরে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন জেলে ও শুটকি ব্যবসায়ীরা। সাগর থেকে ধরে আনা মাছ শুটকি বানিয়ে দেশ-বিদেশে বিক্রি করেন তারা। চলতি বছর ১৫ জন বন বিভাগ থেকে মাছ ধরার লাইসেন্স নিয়েছেন। তাদের অধীনে ৯৮৫ জন জেলে মহাজন মাছ ধরার কাজ করেছেন দুবলার চরে।

টানা বৃষ্টিতে কোটি টাকা ক্ষতির মুখে দুবলার চরের জেলেরা

জেলে মহাজনরা বলছেন, নভেম্বরের শুরুতেই দুবলার চরের আশেপাশে প্রায় ২৫ হাজার লোকের অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলে মাছ ধরা শুরু করেছেন তারা। মাছ ধরে এনে চালুনে (মাছ শুকানোর জন্য তৈরি মাচা) শুকিয়ে শুটকি বানিয়ে বিক্রি করেন তারা। কিন্তু শুরুর দিকে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে একবার ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। আবার গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে প্রত্যেকেরই কয়েক লাখ টাকার মাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হওয়া কিছু মাছ আবার সাগরে ফেলে দিতে হবে। কিছু মাছ রাবিশ হিসেবে একেবারেই অল্প টাকায় বিক্রি করা যাবে।

দুবলার চরের জেলে মহাজন দেবব্রত রায় দেব বলেন, ‘পানিতে রোলিং (ঢেউ) থাকার কারণে একদিকে মাছ ধরা বন্ধ, আরেকদিকে টানা বৃষ্টিতে ধরে আনা সব মাছ পচে রাবিশ হয়ে গেছে। মাছের অবস্থা এমন হয়েছে যে রাবিশ হিসেবেও বিক্রি করা যাবে না। সব মাছ আবার নদীতে ফেলে দিতে হবে।’

টানা বৃষ্টিতে কোটি টাকা ক্ষতির মুখে দুবলার চরের জেলেরা

দেবব্রত রায় দেব জানান, টানা চার দিনের বৃষ্টিতে দুবলার চরের হাজার খানেক জেলের প্রায় সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জেলে মহাজনেরা এমনিতেই সুদে টাকা এনে মাছ ধরার কাজ করেন। এভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে তাদের পথে বসতে হবে।

তরুণ বিশ্বাস নামে আরেক জেলে মহাজন জানান, সাগর থেকে ধরে আনা মাছ অন্তত চারদিন রোদ দিতে হয়। তার চালুনের মাছ দুই রোদ পাওয়ার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওভাবেই মাছগুলো কোনওভাবে ঘরের ভেতর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। আর দুই রোদ না দিতে না পারলে পোকা ধরে মাছগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

তরুণ বিশ্বাস জানান, তার আশেপাশের জেলে মহাজন রুবিন, উজ্জল, প্রকাশ, প্রসেঞ্জিত, সিরাজুল, প্রতাপ, সঞ্জয়, জাকির, আলীসহ সবাই বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সবার চালুনে থাকা আধা শুকানো শুটকি ও মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জানান, যেখানে একমণ শুটকি মাছ ভেদে বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। সেখানে এসব রাবিশ হিসেবে ৭-৮ শ’ টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর পোকা ধরাগুলো সাগরে ফেলে দিতে হবে।

টানা বৃষ্টিতে কোটি টাকা ক্ষতির মুখে দুবলার চরের জেলেরা

দুবলার চরের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের টানা বৃষ্টিতে জোয়ারের পানি চরের ওপর পর্যন্ত উঠে গেছে। গত ৩ দিন ধরের জোয়ারের সময়  দুবলার চরের অধিকাংশ জায়গা প্লাবিত হয়েছে। শুটকি মাছ বাঁচাতে জেলে মহাজনেরা অনেকেই নিজেদের ঘুমানোর মাচার ওপর তা রেখে দাঁড়িয়ে-বসে রাত পার করেছেন। পাঁচ মাসের এই মাছ ধরার কারবারকে কেন্দ্র করে দুবলার চরে যেসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দোকানপাট বসেছিল পানি উঠে তারাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

সুন্দরবনের জেলেদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানোর তো কোনও উপায় নেই। কিন্তু পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। যেমন এবার অনেকেই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তবে জেলেদের সরকারিভাবে ঋণের ব্যবস্থা করে, বনবিভাগ থেকে আরেকটু কেয়ার নিয়ে আরেকটু সুন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পারলে জেলেদের ক্ষতি কিছুটা কমানো যায়।

দুবলার চরের জেলেরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও তারা প্রতিনিয়ত নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন। বড় বড় ঘর তুলতে পারলে প্রাকৃতিক দুযোর্গ কিছুটা মোকাবেলা করা যায়। কিন্তু ঘর যত বড় হবে সরকারকে তত বেশি রাজস্ব দিতে হয়। আবার লোকজন বেশি আনতে পারলে দ্রুত শুটকি ঘরে তোলা বা বিছানোর কাজও করা যায়। কিন্তু লোক প্রতিও সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়। এজন্য জেলে মহাজনেরা লোকও কম আনেন, আবার ছোট ছোট ঘর তোলেন। একদিকে পয়সা বাঁচানোর চেষ্টা করলে আরেকদিকে ক্ষতি হয়ে যায়।

জেলে মহাজনদের দাবি, তারা সবসময় চড়া সুদে দাদন নিয়ে মাছ ধরতে সাগরে নামেন। দাদন দেওয়া ব্যক্তিদের কাছে মাছ বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকে। একই সঙ্গে যেই সাহেবরা বনবিভাগ থেকে মাছ ধরার লাইসেন্সপ্রাপ্ত তাদের অধীনে মাছ ধরতে হয়। তাদের কাছে কম দামে মাছ বা শুটকি বিক্রি করতে হয়। সরকার স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা আর সবার জন্য উন্মুক্ত লাইসেন্স ব্যবস্থা করলে প্রান্তিক জেলেরা কিছুটা উপকৃত হতো।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ