X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘করদাতা ও রাজস্ব বোর্ডের চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ করতে হবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:০৯আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:০৯

‘‘নতুন আয়কর আইন এমনভাবে করা উচিত, যাতে করদাতা ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে ‘চোর-পুলিশ’ খেলা বন্ধ হয়। বর্তমান আইনে এমন কিছু বিধি রয়েছে— যা করদাতাদের হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি করে। আবার কর ফাঁকিরও সুযোগ রয়েছে। ফলে করদাতা ও কর কর্মকর্তা কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। নতুন আইন এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে আইনটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে আরও সময় নেওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত।’’

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) আয়কর আইন-২০২২ এর ওপর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন মতামত দিয়েছেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি শারমীন রিনভী।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আইনের ক্ষেত্রে প্রণয়নকারী, প্রয়োগকারী ও মান্যকারীদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। তা না হলে আইন লক্ষ্য অর্জন করে না।’ এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘আয়কর আইনের মতো আইনে মৌলিকতা আনতে সময় দরকার। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে অর্থনীতির দক্ষতা বাড়ছে কিনা, সাম্য নিশ্চিত হচ্ছে কিনা, তা দেখা দরকার।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের প্রথম সচিব (আয়কর নীতি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আয়কর এমন ব্যবস্থা— এখানে বৈধ কাজ করলেও হয়রানি মনে হয়। ফলে করদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। কর দিয়ে গর্ববোধ করতে হবে। দেশের মানুষ কর দিচ্ছে বলেই দেশ এগোচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন আইনের বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাস  হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও কাজটি দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে। এজন্য মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো করছে এনবিআর। কিন্তু এনবিআর মনে করে, সকলের মতামত নিয়েই উপযুক্তভাবে আইনটি করা দরকার। এজন্য এনবিআর সময় নিয়েছে। তবে বেশি দেরি করারও সুযোগ নেই।’

আগাম কর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবাই যদি অক্টোবর-নভেম্বরে এসে কর পরিশোধ করে, তাহলে বছরের বাকি সময় ব্যয়ের টাকা সরকার কোথায় পাবে। এজন্য আগাম কর, উৎসে কর নেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের পদ্ধতি রয়েছে।’

অডিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাত্র ৩ শতাংশ করদাতাকে অডিট করা হয়। ফলে করদাতাদের সিংহভাগই অডিটের বাইরে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেয়। যা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এনবিআর সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছে যে, বিভিন্ন খাতে যে কর ছাড় দেওয়া হয়, তার পরিমাণ জিডিপির ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।’

বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান বলেন, ‘দেশ বর্তমানে একটা রূপান্তরের পর্যায়ে রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হতে যাচ্ছে। এতে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আসবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দেশের রফতানি পণ্যের সংখ্যা কম। এটা এক ধরনের দুর্বলতা। কর আইন, আমদানি রফতানি নীতির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এসব নীতিমালাতে দেশিয় উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির  পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘আইনটি বাংলায় হচ্ছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু বাংলার মধ্যেও কিছু শব্দ আছে যেগুলো বেশ কঠিন বা দুর্বোধ্য। এসব  শব্দের ক্ষেত্রে তিনি ইংরেজি শব্দও ব্যবহারের সুপারিশ করেন।’ তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের মুনাফায় কর ছাড় তুলে দেওয়া, সরকারি সিকিউরিটি কেনায় সীমা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি কর্মীদের বেতন ও কেনা কাঁচামাল মূল্য পরিশোধ ব্যাংকিং চ্যানেলে মাধ্যমে আনার জন্য এবং নিবন্ধনহীন ব্যবসায়ীদের থেকে কেনাকাটায় এমন কিছু ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা বাড়তে পারে। উৎসে করের হার না কমানোর ফলে করপোরেট কর কমানোর সুবিধা ব্যবসায়ীরা পাবেন না। যার ফলে তাদের কর ভার বাড়বে।’ এজন্য তিনি উৎসে করের হার পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান আইনে তৈরি পোশাক খাত ছাড়া অন্যান্য রফতানিকারকরা তাদের রফতানি আয়ের ৫০ শতাংশ কর ছাড় পান। প্রস্তাবিত আইনে এ বিষয়টি এবং সেবা রফতানিকারকদের বিষয়টি উল্লেখ নেই। ফলে এ ধরনের রফতানিকারকরা বাড়তি করের চাপে পড়বেন।’   

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দ্বৈত কর রয়েছে। যা ‘ননসেন্স’। এটা ব্যবসার বাধা।’ হঠাৎ পরিদর্শন বন্ধ করা, ব্যবসায়ীদের গবেষণা ব্যয়ে কর ছাড়, বিমার প্রিমিয়ামকে ব্যয় হিসেবে গণ্য করার সুপারিশ করেন তিনি। মুক্ত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘কর নীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনীতির দক্ষতা বাড়ানো। প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করা। তবে খসড়া আইনে এ বিষয়ে উৎসাহিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। আগামী দিনের অর্থনীতির যে কৌশল, তাকে সহায়তা করতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়ন দরকার হবে। তবে নতুন আইনে সে সুযোগ সীমিত করা হয়েছে।’ এমসিসিআইর বোর্ড সদস্য হাসান মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে বড় শিল্পে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তাতে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানো সম্ভব নয়।’

বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক বলেন, ‘শুধু নতুন আইন করলেই হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংস্কার জরুরি। আয়কর আইনে কর কর্মকর্তাদের ঐচ্ছিক ক্ষমতা কমাতে হবে। অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করতে হবে।’

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘করদাতারা রাজস্ব বিভাগকে বিশ্বাস করে না। আর রাজস্ব বিভাগ করদাতাদের বিশ্বাস করে না। এই অবিশ্বাসের অবস্থান দূর করেন আস্থাশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

 

/জিএম/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
পাঁচ উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
বাজেট ২০২৪-২৫পাঁচ উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কাউন্সিলর-যুবলীগ নেতার সংঘর্ষে যুবক নিহত
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কাউন্সিলর-যুবলীগ নেতার সংঘর্ষে যুবক নিহত
অনিবন্ধিত ও অবৈধ নিউজ পোর্টাল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
অনিবন্ধিত ও অবৈধ নিউজ পোর্টাল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’