জানা গেছে, ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতি বছর জাতিসংঘ দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালন করে আসছে। এক্ষেত্রে যেসব দেশ দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে সক্ষম হয়, সেসব দেশে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা পালন করে সংস্থাটি। বর্তমানে দারিদ্র্য নিরসনে সাফল্য লাভ করায় বাংলাদেশে ১৭ অক্টোবর ‘বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন’ দিবস পালন করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সাত বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮০ লাখ হতদরিদ্র মানুষ অতি দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে অতি দারিদ্র্যের হার কমেছে। এই প্রবণতাকে ‘অর্জন’ হিসেবে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, গত অর্থবছর শেষে অতি দারিদ্র্যের হার দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে মোট জনসংখ্যার সাড়ে ১৮ শতাংশ ছিল চরম দরিদ্র মানুষ। সম্প্রতি ‘টেকিং অন ইন-ইকোয়ালটি’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ২ কোটি ৮০ লাখ হতদরিদ্র লোক ছিল। চলতি অর্থবছরে তা ২ কোটিতে নেমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট।’ তিনি বলেন, ‘দুই দশকে বাংলাদেশে শুধু আয়ের প্রবৃদ্ধিই বাড়েনি, অন্যান্য ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এটাই এ সফরের কেন্দ্রবিন্দু। এটা থেকে অন্য দেশগুলো শিখতে পারবে। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে ঘানার সাফল্য তুলে ধরতে তিনি গত বছর গিয়েছিলেন ঘানাতে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের এই সাফল্য কেবল বিশ্বব্যাংকই নয়, সারা বিশ্ব দেখছে। এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তার এই সফরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেই স্মৃতি আর থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিশেষ উদ্যোগের কারণে দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্য এসেছে।’
এদিকে এক বার্তায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম জানিয়েছেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে বিস্ময়কর সাফল্যে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী চিন্তা পরিচিতি পেয়েছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশের কাছ থেকে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল এখন অনেক দেশ শিখেছে।’
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। সোমবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি বিকাল ৩টায় যোগ দেবেন বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজি মূল অনুষ্ঠানে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য বরিশালে যাবেন। সেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য সাইক্লোন শেল্টার, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নতুন জীবন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। ফিরে এসে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিকাল ৫টায় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করার কথা রয়েছে। এরপর বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তার বৈঠক হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট আজ ঢাকা আসছেন
/এমএনএইচ/