আশুলিয়ার ৫৫ পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা

এ মুহূর্তে মজুরি বোর্ড গঠনের যৌক্তিকতা নেই: বিজিএমইএ


বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান
সাভারের আশুলিয়ার ৫৫টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ)। মঙ্গলবার বিকেলে বিজিএমইএ সভাকক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী এ ঘোষণা দেওয়ায় এ সময়ে শ্রমিকরা কোনও মজুরি পাবেন না বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের তৈরি পোশাক খাত দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। বিগত ৯ দিন যাবত আশুলিয়ায় শ্রম সমস্যা বিরাজ করছে। শুরুতে একটি কারখানায় সমস্যা থাকলেও পরে তা ৩ থেকে ৪টি কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে গত তিন দিনে এই সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত সোমবার রাতে শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠেকের পরে আজ (মঙ্গলবার) থেকে তারা কাজে যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা তারা রক্ষা করেনি। এ অবস্থায় আমাদের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়া এলাকায় তাদের কারখানাগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হলেন। যার ফলে শ্রমিকরা বন্ধকালীন সময়ে কোনও বেতন পাবেন না বলেও জানান তিনি।
সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, এ দুর্যোগ একা আমাদের না, দেশের জন্যও। এ দুর্যোগ আমাদের বাঁচা-মরার। পোশাক খাতের এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক, আমরা যখন বৈশ্বিক ও আর্থিক এ দ্বিমুখী চাপের মধ্যে টিকে থাকার সংগ্রামে রয়েছি- ঠিক তখন অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উসকানিতে আশুলিয়া এলাকার শ্রমিক ভাই-বোনরা নতুন মজুরি কাঠামো গঠন ও মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। কর্মবিরতি পালন করছে। অথচ এই মুহূর্তে নতুন মজুরি কাঠামো গঠনের কোনও যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী ৫ বছর পরপর মজুরি কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর ৩ বছর অতিক্রম করেছে। আরও দুই বছর পর নতুন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া বিগত ছয় বছরে পোশাকখাতের ন্যূনতম মজুরি ২২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ সময় তিনি পোশাক খাতের বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানিতে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দরকার হলেও গত ৫ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশেও প্রবৃদ্ধি হার নেমে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পোশাকের দরপতন এবং বিশ্ববাজারে পোশাকের মোট রফতানিও কমেছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান অবনমন, কারখানাগুলোয় রিমেডিয়েশনসহ বিভিন্ন চাপ রয়েছে। এর মধ্য দিয়েই শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় তিন বছরের মধ্যে ফের মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাসাভাড়া বাড়ার কারণে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো, নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, কোনও কারণে ছাঁটাই হলে নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্য পরিশোধ এবং ছুটিকালীন বেতন বহাল রাখার দাবিতে গত সোমবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে আন্দোলন শুরু করেন ওই এলাকার তৈরি পোশাক শ্রমিকরা।
 /জিএম/টিএন/