ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে সাহসী হতে বললেন গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে আরও সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘এসএমই খাতে অর্থায়ন : সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে এফবিসিসিআইয়ের এসএমই ফাইন্যান্সিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি।
নিয়মনীতি পরিপালন করে সাহসিকতার সঙ্গে ঋণ দিতে হবে উল্লেখ করে গর্ভনর বলেন, ‘এ খাতে সাহসিকতার কোনও বিকল্প নেই। অনেক উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন তাদের কাছে এসএমই ঋণের ওপর ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা এ অভিযোগ করেছেন। কেন ব্যাংকগুলো এত সুদ নিচ্ছে তা আমি জানি না। তাই ব্যাংকগুলোকে আমি বলবো তারা যেন নারী উদ্যোক্তাসহ এসএমই খাতে সহজ শর্তে কম সুদে ঋণ দেয়।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ জাতীয় বাজেটের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্যের ভারসাম্য রক্ষায় মুদ্রানীতি ঘোষণা করা। তবে এখানে এসে আমার মনে হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিতীয় কাজ হবে এসএসই খাতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তাই এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আগ্রাধিকার হবে এসএমই খাত। ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে কৃষি খাতে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। আগামীতে এসএমই খাতের ঋণও সিঙ্গেল ডিজিটে আনা হবে।’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘সময় এসেছে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার। ঋণের সিকিউরিটি হিসেবে ইন্স্যুরেন্সের পলিসি চালু হওয়া জরুরি। কারণ ঋণ গ্রহীতা কিস্তি দিতে না পারলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তা পরিশোধ করবে। এতে ব্যাংক ঋণ আদায়ের চাপ থেকে মুক্ত থাকবে।’

সেমিনারে উদ্যোক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ব্যাংকের ঋণ-আমানতের সুদহার (স্প্রেড) সর্বোচ্চ ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে রাখতে হয়। এসএমই খাতে ঋণেও যেন তা মানা হয় সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। তবে এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এর ফলে এসএমই ঋণের সুদ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যাংক এখন পর্যন্ত এসএমই ঋণে সুদ নিচ্ছে ১২ থেকে ১৬ শতাংশ।’

উদ্যোক্তারা আরও বলেন, ‘আমরা প্রায়ই শুনি বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দিতে বলছে। কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না বরং ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি এসএমই খাত। জিডিপির প্রায় ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ এসএমই খাতের অবদান। তাই এ খাত উন্নয়নে সহজ শর্তে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।’

প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলোর প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসএমই উদ্যোক্তাদের যাতে কম সুদে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয়। তবে ব্যাংকগুলো তা মানে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক বেশি সুদ আদায় করা হয়। হয়রানি করা হয় উদ্যোক্তাদের।

/জিএম/এমও/