বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন

মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন, ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ চেয়েছে ফায়ার সার্ভিস

 

বাংলাদেশ ব্যাংকবাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিন সদস্যের ‘অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি’র তদন্তের কাজ শেষ করেছে। ‘অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি’ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) তদন্ত রিপোটর্টি গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি’র একজন সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামীকালই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’ এদিকে আগুনের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তার বিবরণ চিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধান কমিটিকে একটি চিঠি দিয়েছে এ ঘটনায় গঠিত ফায়াস সার্ভিসের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্ট আগামীকালই গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে জমা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কোনও কারণে আগামীকাল রিপোর্ট জমা দেওয়া সম্ভব না হলে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জমা হবে।’

প্রসঙ্গত, এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বাধীন এই তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) মো. মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও ব্যাংকের কমন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. তফাজ্জল হোসেন।

বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থালে গিয়েছেন এই কমিটির সদস্যরা। সোমবার সকালেও কমিটির সদস্যরা তথ্য সংগ্রহ করতে শেষ বারের মতো বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগে যান। এরপর গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে তদন্ত কমিটির প্রধান আহমেদ জামাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুবই সামান্য। বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের রুম ও তার ব্যক্তিগত সহকারীর রুম পুড়ে গেছে। এছাড়া আগুনের ধোঁয়া লাগার কারণে পাশের ডেস্কগুলো কালো হয়েছে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগতে পারে বলেও মন্তব্য করেছিলেন।

আলোচিত এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান কমিটি ছাড়াও তদন্ত করছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি। এছাড়া ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের আলামত নিয়ে গেছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

অগ্নিকাণ্ডে গঠিত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা) সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য ৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া আছে। তার আগেই আমরা রিপোর্ট জমা দিতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আগামীকাল মঙ্গলবার আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে হবে। ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ চেয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ১৪ তলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগে। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাসুদ বিশ্বাসের  কক্ষে থাকা চেয়ার টেবিল, টেবিলে থাকা কম্পিটার, প্রিন্টার, টেলিফোন সেট এবং ওই কক্ষে থাকা আলমারি পুড়ে গেছে।  তার রুমটি কালো কয়লা হয়ে গেছে। এছাড়া মাসুদ বিশ্বাসের সহকারীর টেবিল-চেয়ারও একেবারেই পুড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আগুন পুড়ে পুরো বিভাগটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানির কারণে অন্যান্য ডেস্কের বেশ কিছু কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ফ্লোর পুরোটাই কালো হয়ে পড়েছে।

এই আগুন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৯ টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলার দক্ষিণ পূর্ব কোণে আগুনের শিখা দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিস এসে ৩০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

 আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন স্যাবোটাজ?

/এমএনএইচ/