তিন মাসে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৩ হাজার ৭৫৯ জন

টাকাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা এখন ৬৫ হাজার ৭৯৭ জন। গত তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোতে নতুন কোটিপতি আমানতকারী যুক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৫৯ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্য নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকে ৬৫ হাজার ৭৯৭ জন কোটিপতি আমানতকারীর মধ্যে এক কোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৫১ হাজার ৭৪১ জন। এর মধ্যে ৭৬৯ জন ব্যক্তির বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে জমা হয়েছে ৫০ কোটিরও টাকারও বেশি। এর বাইরে ৪০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন, এমন ব্যক্তি রয়েছেন ৩১৪ জন। ৩৫ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ১৯২ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩ মাস আগে (সেপ্টেম্বরে) ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ৬২ হাজার ৩৮ জন। ওই সময় ৫০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ আমানত রাখা ছিলেন ৭০২ জন। শেষ তিন মাসে এই সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ জন।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি যখন ভালো থাকে না, তখন অনেকেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। বছর অন্তর সেই টাকা বেড়ে যাচ্ছে।’ দ্বিগুণ স্কিমে রাখা আমানতগুলো এখন কোটিপতির সংখ্যা বাড়াতে সহায়তা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টাকা পাচার না হয়ে ব্যাংকে থাকাটাও অর্থনীতির জন্য পজিটিভ। এতে হয়তো কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি ক্রমেই ধনী হয়ে যাচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক দিক।’ এর ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৮৯৭ জন। তিন মাসের ব্যবধানে (২০১৬ সালের ডিসেম্বরে) এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৫১ হাজার ৭৪১ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ কোটি টাকাও বেশি পরিমাণ আমানত কোটিপতিদের রাখা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাস সময়ে ৪০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ জন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারীর সংখ্যা ২৫ জন কমলেও ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৪ জন, ২৫ কোটি টাকার ক্ষেত্রে আমানতকারী বেড়েছে ৪৯ জন, ২০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারী বেড়েছে ৬৩ জন।
এছাড়া, ১৫ কোটি টাকারর বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা তিন মাসে বেড়েছে ৯১ জন, ১০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারী বেড়েছে ১৬৭ জন, ৫ কোটি টাকার বেশি আমনতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৯২ জন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতে আমানত রাখা কোটিপতিদের একটি বড় অংশ কালো টাকার মালিক। হয়তো এদের একটি বড় অংশই রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটিপতি হয়েছেন। তবে ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ অলস অর্থ জমছে, সেটা বিনিয়োগে গেলে অর্থনীতির জন্য আরও ভালো হতে পারত।’
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। তখন তাদের আমানতের পরিমাণ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে দেশে কোটিপতির সংখ্যা কেবল বেড়েছেই। এর মধ্যে কেবল মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-০৮) কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা এর আগের সময়ের তুলনায় কম ছিল। পরে ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার ওপরে হিসাব সংখ্যা বেড়ে যায় ১০ হাজার ৩৭৪টি।

আরও পড়ুন-

রাশিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

/টিআর/