ন্যাশনাল ব্লু ওশান ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট পলিসি চায় ঢাকা চেম্বার

রাজধানীতে ব্লু ইকোনোমি বিষয়ক সেমিনারের প্রধান অতিথি পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ

দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল ব্লু ওশান ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান। বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি: নতুন দিগন্ত, নতুন সম্ভাবনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় আরও জোরদারের পাশাপাশি সমুদ্র এলাকার বাতাস ও সমুদ্র স্রোত হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পণ্য পরিবহনের ৯০% হয়ে থাকে সমুদ্র পথে এবং আমাদের মৎস্য সম্পদের ১৭% আসে গভীর সমুদ্র হতে। এছাড়াও প্রায় ৩০ লাখ লোক এর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তিনি মিয়ানমার এবং ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, এসব দেশের মতো আমাদেরও গভীর সমুদ্র এলাকায় গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের কাজ আরও জোরদার করতে হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিট-এর সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে নতুন সমুদ্রসীমা অর্জন করতে পেরেছে এবং সময়ে এসেছে এ সমুদ্রসীমার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এর সুফল ভোগ করার। তিনি সমুদ্রসীমার সম্ভাবনাময় খাতকে কাজে লাগানোর জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যার কারণে বিপদগ্রস্ত বিপুল সংখ্যক মানুষের পাশে সবাইকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান পানিসম্পদমন্ত্রী।

সমুদ্রভিত্তিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়ে রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম মূল প্রবন্ধে বলেন,  বঙ্গোপসাগরের এলাকায় সম্ভাবনাকে লাগানোর জন্য মৎস্য আহরণ, পর্যটন, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, তেল ও গ্যাস কূপ খনন প্রভৃতি কার্যক্রমের ওপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, সমুদ্রের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশপাশি দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির কোনও বিকল্প নেই। তিনি জানান, গভীর সমুদ্র এলাকা মৎস্য আহরণে সক্ষম কোনও নৌযান আমাদের নেই। তিনি জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্য সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানি-রফতানি করে থাকে, তাই আমাদের দেশের ব্যবসায়ী সমাজকে সমুদ্র পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার প্রতি আরও মনেযোগী হতে হবে। তিনি দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স পরিচালনারও প্রস্তাব করেন।

ডিসিসিআই’র সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও আলোচনা করেন ডিসিসিআই’র সমন্বয়কারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আকবর হাকিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজ-এর অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী এবং ব্লু ইকোনোমি সেল-এর অতিরিক্ত সচিব গোলাম সফিউদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত পানপিমুন সোয়ানাপুনসে, মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার নূর আসহিকিন বিনতে মোহা তাইয়িব প্রমুখ।

ডিসিসিআই’র সমন্বয়কারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আকবর হাকিম সমুদ্র এলাকাকে দূষণের হাত হতে রক্ষা করা এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের সমুদ্র এলাকায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ থাকলেও ১০০টি প্রজাতির মাছের চাহিদা রয়েছে, তাই কোন ধরনের মাছের চাহিদা রয়েছে তা জানার লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালনা করা একান্ত আবশ্যক। তিনি সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ‘মেরিন স্পেশাল অ্যাক্ট’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।

ব্লু ইকোনমি সেল-এর অতিরিক্ত সচিব গোলাম সফিউদ্দিন বলেন, গভীর সমুদ্র এলাকায় সম্পদ আহরণের বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ‘ব্লু ইকোনমি সেল’ গঠন করেছে। তিনি জানান, সরকার সমুদ্র এলাকায় মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদের বিষয়ে তথ্য পেতে জরিপ পরিচালনায় সক্ষম নৌযান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

/জিএম/টিএন/