চাল সংকটের চার কারণ

 

চালের-দোকান (ফাইল ছবি)চার কারণে চালের সংকট বেড়েছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা, মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া, ও দেরিতে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তই চালের সংকটকে তীব্রতর করেছে। এছাড়া বন্যা দুর্গত মানুষকে ত্রাণ হিসেবে চাল দেওয়া এবং বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কারণেও চালের সংকট দেখা দিয়েছে। 

চলতি বছরের মার্চের শেষে হাওর অধ্যুষিত দেশের ৬ জেলায় পাহাড়ি ঢল ও অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির মধ্য দিয়ে দেশে চাল সংকট শুরু হয়। হাওরের বন্যাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেয়। হাওরের বন্যার পানি কমতে থাকলেও এরই মধ্যে শুরু হয় দেশের ৩২ জেলায় অকাল বন্যা। এই বন্যা চালের সংকটকে ক্রমান্বয়ে তীব্রতর করেছে। এর ফলে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরের মোটা চালের দাম এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকায় উঠেছে। সরু চালের কেজি এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে কম পক্ষে ১০ লাখ মেট্রিক টন বোরো ফসল পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বোরো মৌসুমে সরকার মিলারদের কাছ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ মেট্রিক টন ধানসহ মোট ১৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও তা পাওয়া যায়নি। এরা কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বোরো ধান ও চাল মজুত করেছে। যা এখনও পর্যন্ত ওইসব মিলারদের গুদামেই রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কারসাজি করে সরকারকে ধান ও চাল না দেওয়া এবং অবৈধ মজুতের অভিযোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১৬শ ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এর পরও সুরাহা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসৎ মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবৈধ মজুতকৃত চালও বাজারে চলে আসবে। আর তখনই চালের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। চালের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই দামও কমবে।’

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরিতে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি এই সংকটের জন্য দায়ী। সময় মতো শুরুতেই চাল আমদানির অনুমতি দিলে সংকট এতো ভয়াবহ হতো না।

চালের আমদানি শুল্ক দেরিতে কমানোর সিদ্ধান্তটি চালের সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার আরেকটি কারণ বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তারা মনে করেন সরকার চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি দুই দফায় না নিয়ে যদি শুরুতেই এক দফায় নিতো, তাহলে উপকার পাওয়া যেতো।

বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অনেক আগ থেকেই চাল আমদানির সুযোগ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। সরকার তখন চাল আমদানির অনুমতি দেয়নি। আর যখন সরকার চাল আমদানির সুযোগ দিলো তখন তা সুফল বয়ে আনলো না। অর্থাৎ চালের দাম কমলো না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে নিজামউদ্দিন বলেন, ‘যখন শুল্ক কমানো হলো তখন ভারত তার চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে শুল্ক কমানোর পরেও বেশি দামে চাল আমদানি করে ব্যাবসায়ীরা সুবিধা করতে পারেনি।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চালের অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। কোনও অসৎ মিলার যদি চাল বাজারে না ছেড়ে গুদামে মজুত রাখে এবং তা যদি ধরা পড়ে তাহলে সেই মিলার বা চালের ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে জেলে নিক্ষেপ করা হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতংশে নামিয়ে আনার পর প্রতি কেজি চালের দাম কমেছিল ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। অথচ দাম বেড়েছিল কেজিতে গড়ে ১০ টাকা। সম্প্রতি চালের দাম আরও বেড়েছে। নিম্নমানের মোটা চালের কেজি এখন ৫০ টাকা। আর নাজির শাইল চালের কেজি ৬৮ টাকা ও মিনিকেটের দাম ৬৬ টাকা।