বিনিয়োগ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্বল আইনকানুন ও নীতিমালার কারণে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামে। এরপরের চার বছর আস্তে আস্তে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রশাসনিক সংস্কার এবং আইনকানুন ও নীতিমালার সংস্কার করা হয়। এর ফলে ২০১৩ সালে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে পৌঁছে। আইনকানুন পরিবর্তন করায় বাজার এখন স্থিতিশীল আছে। বর্তমানে আর্থিক খাতের রেগুলেটরের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কমিশন শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের করাচিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিনিয়োগের দিকে আকৃষ্ট হই। সেখানকার স্টক মার্কেট বিনিয়োগ করি এবং লাভবানও হই। ১৯৬৯ সালে আইসিপিতে (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব পাকিস্তান) কাগজপত্র জমা দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেই। এর মধ্যে দেশ ভাগ হওয়ায় বিনিয়োগের অর্থ আর ফেরত পাইনি। তখন ৩৩ হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ ছিল। এরপর ১৯৯০ সালের দিকে কিছু বিনিয়োগ করলেও ২০০২ সালের পর থেকে আর নতুন বিনিয়োগ করিনি।’
বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগে খুব চিৎকার করে বলেছি, দেশে বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। এখন বিনিয়োগের জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্রেমওয়ার্ক আছে। যে কেউ চাইলে বিনিয়োগ করতে পারেন।’
বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত সাকিব আল হাসান বলেন, ‘লন্ডনে খেলার সময় অবসরে দেখতাম খেলোয়াড়রা পড়াশোনা করছে। কী বিষয়ে পড়াশোনা করছে জানতে চাইলে তারা বলতেন, “স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য পড়াশোনা করছি।” একইভাবে দেশের বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে পড়াশোনার করা উচিত।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘২০১০ সালের পর শেয়ারবাজার ধসের পর আইনকানুন ও নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনি কাঠামোর দিক থেকে বিএসইসি অনেক বেশি শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) রেটিংয়ে বিএসইসি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত করতে পারলে শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে উচ্চশিক্ষিত ১ শতাংশ বাড়লে জিডিপি তিন শতাংশ বাড়ে। সম্প্রতি ভারত পাঠ্যক্রমে বিনিয়োগ শিক্ষা চালু করেছে, শ্রীলঙ্কায় অষ্টম শ্রেণি থেকে বিনিয়োগ শিক্ষা দেওয়া হয়। বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী হলে পুঁজিবাজার শক্তিশালী হবে, কারণ বিনিয়োগকারীরাই পুঁজিবাজারের মূল চালিকাশক্তি। পুঁজিবাজার শক্তিশালী হলে বিদেশি সহায়তা, ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা ছাড়াই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে একটি র্যালি মৎস্য ভবন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়। বিভাগীয় শহরগুলোতেও র্যালি হওয়ার কথা রয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।