এসডিজি বাস্তবায়নে দাতাদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রীটেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল হতে বিডিএফ বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) বৈঠক শেষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দুই দিনব্যাপী এ বৈঠক বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) শেষ হয়।

এ সময় ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম, অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ ও ঢাকায় নিযুক্ত ডিএফআইডির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও বিডিএফের কো-চেয়ারপারসন জিনিয়া জেরুজালিস্কি উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বাইরে অতিরিক্ত ৯২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। এর বাইরে লাগবে আরও ৬ হাজার ৬৩২ কোটি ডলার। এরমধ্যে দেশি-বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ লাগবে ১০ শতাংশের মতো। আর ৫ শতাংশ লাগবে বিদেশি সহায়তা ও অনুদান। বাকি অর্থের যোগান দিতে হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।’

এক্ষেত্রে বিডিএফ বৈঠকে উপস্থিত উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এজন্য সরকারকে সরকারি-বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি এবং এর ব্যবস্থা পদ্ধতি উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে বলেছেন উন্নয়ন সহযোগীরা।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও এসডিজি বাস্তবায়নের কাজটি খুবই কঠিন। তারপরও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা জরুরি। যদিও এসডিজি বাস্তবায়নে ১০টি লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। এর মধ্য থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করে কাজ শুরু করাটা জরুরি।’

দুই দিনের বিডিএফ বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা সবাই অব্যাহতভাবে এ লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইআরডি সচিব শফিকুল আযম। তিনি জানান, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনায় এজন্য একটি টাস্কফোর্স করা হয়েছে। এটি কাজও শুরু করেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে আন্তর্জাতিকভাবে কিছু সুবিধা আমরা পাবো না ঠিকই, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে আমাদের কিছু সক্ষমতা বাড়বে। সেক্ষেত্রে বাড়তি কিছু সুবিধাও পাবো। হারানো সুবিধার জটিলতা মোকাবিলা ও সক্ষমতার বিষয়গুলো একত্রিত করে তা ব্যবহারে টাস্কফোর্স কাজ করছে।’ এই সংকট মোকাবিলায় পরিকল্পনার ভিত্তিতে কৌশল নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান শফিকুল আযম।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এই বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে উন্নয়ন সহযোগীরা কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ততটা আগ্রহ না দেখিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি নিয়ে ধীরগতিতে এগোনোর পথ অবলম্বন করছি বলে জানিয়েছি। রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে দাতাদের কাছে আমরা কী ধরনের সহযোগিতা চাইবো, তা নিয়ে আমরা নিজেরাই আলোচনা পর্যালোচনা করছি। এ সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে রোহিঙ্গাদের টেকনাফ ও উখিয়া থেকে সরিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তরে সেখানকার অবকাঠামোসহ সব ধরনের উন্নয়নের কাজ সরকার নিজের টাকায় করছে।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্বের তুলনায় উন্নয়ন সহযোগীদের দায়িত্ব বেশি। তাই এ কাজে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা, কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে যে ট্রিলিয়ন পরিমাণের ডলারের প্রয়োজন হবে, তার যোগান দেওয়া এবং তা কীভাবে পাওয়া যাবে তা আমাদের চেয়ে অন্যান্য দেশেরই চিন্তা।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর গরিব দেশ বা ভিক্ষুকের দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন অনেক দেশকেই সহযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’ উদাহরণ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন মালয়েশিয়া, নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দেয়।’ 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিনিয়া জেরুজালিস্কি বলেন, ‘আমরা এই দুদিনের বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে এসেছি। এ দেশের সাধারণ নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি। তবে আমরা চাই, নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক।’

গত বুধবার সোনারগাঁও হেটেলে দু’দিনের বিডিএফ বৈঠক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। দুদিনে ৮টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (অফিদ) এর মহাপরিচালক সুলেইমান জাসির আল হারবিশ, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এনেট ডিক্সন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন চাই ঝ্যাং, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মহাপরিচালক মিনরু মাসুজিমাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।