রফতানিমুখী গার্মেন্টসের পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতে অবদান রাখছে দেশের বায়িং হাউজগুলো। তবে নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলার অভাবে অনেক সমস্যার সমাধান করতে হিমশিম খেতে হয় বায়িং হাউজ মালিকদের। তবে বায়িং হাউজগুলোর কার্যক্রম জবাবদিহিতার আওতায় আনতে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এতে কোনও প্রতিষ্ঠান অনিয়ম বা দুর্নীতি করলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) তাদের কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বর মাসে টেকনিক্যাল কমিটির সভায় বায়িং হাউজগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে খসড়া নীতিমালা সম্বলিত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বায়িং হাউজ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালার উপর মতামত পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, বায়িং হাউজসমূহের কার্যক্রম শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে করণীয় নির্ধারণে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির প্রথম সভা গত ৮ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেওয়া সুপারিশের ভিত্তিতে বায়িং হাউজ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’
খসড়া এ নীতিমালার নাম দেওয়া হয়েছে ‘তৈরি পোশাক শিল্পের বায়িং হাউজ নীতিমালা- ২০১৭’। নীতিমালা অনুসারে বায়িং হাউজের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এতে উল্লেখ আছে বায়িং হাউজ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনে (বিজিবিএ) নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোতে (ইপিবি) নিবন্ধিত হতে হবে। ইপিবি প্রতি বছর এর নবায়ন করবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাইয়ের ভিত্তিতে আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইপিবি নিবন্ধন সার্টিফিকেট ইস্যু করবে। যদি কোনও কারণে ইস্যু করা না হয় তাহলে আবেদনকারীকে তা জানাতে হবে।
ইপিবিতে নিবন্ধন ছাড়া তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে প্রাপ্ত এলসি হস্তান্তর না করার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। বিজিবিএ’র নিবন্ধিত বায়িং হাউজ ছাড়া কেউই ইপিবি’র সেবা গ্রহণ করতে পারবে না বলেও নীতিমালায় উল্লেখ আছে।
পাশাপাশি বায়িং হাউজগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে বিজিবিএকে। তৈরি পোশাক রফতানিকারক এবং বায়িং হাউজের মধ্যে যদি কোনও বিরোধ সৃষ্টি হয় তা কমিটি নিষ্পত্তি করবে। বায়িং হাউজের কার্যক্রম মনিটর করার জন্য ইপিবি’র বস্ত্র সেলের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি প্রতি ২ মাস পর সভায় বায়িং হাউজের কার্যক্রম নিয়ে মনিটর করবে। বায়িং হাউজের বিরুদ্ধে কোনও বিধি বহির্ভূত কার্যক্রমের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে পারবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বস্ত্র সেল-২ এর সহকারী প্রধান মোছাম্মৎ শামীমা আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তৈরি পোশাক রফতানিখাতে বায়িং হাউজের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাই সরকার চাচ্ছে তারাও নীতিমালার ভেতরে আসুক। এতে করে বায়িং হাউজগুলোকে মনিটরিং করা যাবে। এজন্য খসড়া তৈরি করে মতামতের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠানো হয়েছে।
তবে বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান বিজিবিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল আমিনুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমরা খসড়া হাতে পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে করণীয় আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে ঠিক করা হবে। আমাদের কিছু মতামত আমরা মন্ত্রণালয়কে জানাবো।’