পরামর্শক না পাওয়ায় এগুচ্ছে না আইএসও গঠনের পরিকল্পনা

বিদ্যুৎবিদ্যুৎখাতের উৎপাদন ও সঞ্চালন ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় আনতে স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিস্টেম অপারেটর (আইএসও) গঠনের পরিকল্পনা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু সময় বাড়িয়েও পরামর্শক পাচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারকে (এনএলডিসি) ভেঙেই এই আইএসও গঠন করা হবে। কীভাবে এই আইএসও কাজ করবে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। কাজের পরিধি বাড়ছে। এদের মধ্যে এখন সমন্বয় হওয়া দরকার। আইএসও এসব ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে চাহিদার আগাম পূর্বাভাস চাইবে। তাদের এই পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে সে অনুযায়ী তৈরি থাকতে বলবে। একইভাবে সঞ্চালন কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশনা দেবে।

তিনি বলেন, ধরা যাক কোনও বিতরণ কোম্পানি বছরের শুরুতে তাদের চাহিদার পরিমাণ আইএসওকে জানাবে। কিন্তু বাস্তবে যদি সেই কোম্পানি এর চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ নেয় তাহলে জরিমানা করবে আইএসও। একইভাবে চাহিদা অনুযায়ী যদি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ দিতে না পারে তাহলেও জরিমানা করা হবে। শাস্তির আওতায় আসবে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশও।

পাওয়ার সেল সূত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর আইএসও গঠনের জন্য পরামর্শক চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সময় দেওয়া হয় ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কেউ আগ্রহ না দেখানোয় আবার সময় বাড়িয়ে ২২ জানুয়ারি করা হয়। কিন্তু এরপরও কেউ আগ্রহ দেখায়নি। ফলে সময় বাড়িয়েও পরামর্শক পাচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।

বর্তমানে একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন আবার বিতরণও করে পিডিবি। সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা কোম্পানি পিজিসিবিও পিডিবির নিয়ন্ত্রণাধীন একটি কোম্পানি। সেই হিসেবে এনএলডিসিও নিয়ন্ত্রণ করে পিডিবি। ফলে অন্য বিতরণ বা উৎপাদনকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া গেলেও পিডিবির বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই। একইভাবে পিজিসিবিকেও জরিমানা করা যাচ্ছে না। এ প্রতিষ্ঠানটিকে কেউ নিয়ন্ত্রণও করছে না। একই কারণে এদের মধ্যে আবার সমন্বয়ও হচ্ছে। এই সমন্বয়ের জন্য একটি আলাদা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ আছে, কোনও কোনও বিদ্যুৎ উৎপাদনাকারী প্রতিষ্ঠান তার সব বিদ্যুৎ ইউনিট না চালিয়ে পুরো বছর কাটিয়ে দেয়। এতে চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি তৈরি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে গ্রাহক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ঠিকই তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ এবং অন্য সুবিধা নিয়ে যায়। আবার জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়েও কোনও কোনও কোম্পানি কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বলেও অভিযোগ আছে। এজন্যও একটি স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জরুরি।

বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আইএসও গঠনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন পরামর্শক নিয়োগে ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পরামর্শক না পাওয়া গেলে ব্যক্তিগতভাবে অথবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পরামর্শক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন:
উদ্যোক্তাদের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা